সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বাইরে ই-কমার্স ও বৈশ্বিক পেমেন্ট সিস্টেমে ঢুকতে চাইছে ফেসবুক। এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ‘লিব্রা’ নামের ক্রিপটোকারেন্সি উন্মুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু করতে ২৮টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করেছে ফেসবুক। তবে এর পুরো বিষয় দেখাশোনা করবে জেনেভাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন। ২০২০ সালের প্রথমার্ধেই নতুন এ মুদ্রা বাজারে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ফেসবুকের কর্মকর্তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ‘ক্যালিব্রা’ নামের একটি সাবসিডিয়ারি চালু করেছে, যা ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবে ভার্চুয়াল মুদ্রা সংরক্ষণ, আদান-প্রদান ও খরচ করার সুবিধা দেবে। ক্যালিব্রা ফেসবুকের কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারীর মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা লিব্রা নিয়ে ফেসবুকের ব্যাপক প্রত্যাশা থাকলেও গ্রাহকের প্রাইভেসি ও বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বিষয়গুলো তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের এ সিস্টেম কেবল প্রতিষ্ঠিত গ্রাহক ও ব্যবসার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করবে না, এর বাইরে যাঁরা ব্যাংকিং সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন গ্রাহককেও প্রথমবারের মতো আর্থিক সেবা নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।
রোমান ওজন পরিমাপপদ্ধতি ‘লিব্রা’ বা তুলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই নাম গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ফেসবুকের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা প্রকল্পের প্রধান ডেভিড মার্কাস। তিনি আগে পেপ্যালের নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
মার্কাস বলেছেন, ‘স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও অর্থের মতো বিষয়গুলোকে আমরা এখানে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পেমেন্ট সেবা চালুর মাধ্যমে ফেসবুক চীনের সোশ্যাল মিডিয়া উইচ্যাটের অনুকরণ করছে। এখানে অর্থ লেনদেন হলে নিজের লাভ বুঝে নিতে পারবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ক্রিপটোকারেন্সি চালু করতে তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কয়েকটি দেশে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ফেসবুকের এ সেবার লাইসেন্স নিতে কোন কোন কোম্পানি আবেদন করেছে, সে তথ্য অবশ্য জানায়নি তারা।
ফেসবুকের এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা কেভিন ওয়েল বলেন, লিব্রা চালু করার মাধ্যমে ফেসবুক বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রকদের এক টেবিলে আনতে পারবে। বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার সুযোগ করে দেবে।
দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকের এ মুদ্রা নিয়ে গুঞ্জন ছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আগেই প্রকাশিত হয়েছিল, ‘প্রজেক্ট লিব্রা’ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে ফেসবুক তাদের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা তৈরি করেছ।
আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখেই এ মুদ্রা তৈরি করা হচ্ছে। এ মুদ্রার মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন দেশে লেনদেন ও অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন। যেসব ব্যবসায়ী ফেসবুকের এ ক্রিপটোকারেন্সি গ্রহণ করবেন, তাঁদের বিশেষ বোনাস দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে ফেসবুক। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ফেসবুক তাদের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা আনতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং বিটকয়েনের চেয়ে আরও কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাভিত্তিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া বাইরের থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানকে এর সঙ্গে যুক্ত করছে। ১ কোটি মার্কিন ডলার লাইসেন্স ফি দিয়ে ফেসবুকের সহযোগী হতে পারবে থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া এ মুদ্রা টেকসই রাখতে ব্যবস্থা নেবে ফেসবুক।
গত ফেব্রুয়ারিতে মার্ক জাকারবার্গ বলেছিলেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে ফেসবুক লগইন করতে তিনি আগ্রহী। গত মে মাস থেকে ফেসবুক ক্রিপটোকারেন্সিভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম তৈরিতে কর্মী নিয়োগ দিতে শুরু করে।