প্রায় তিন দশক ধরে মার্কিন ধনকুবের বিল গেটসের সম্পদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন মাইকেল লারসন। একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বলি, লারসনকে যখন প্রথম নিয়োগ দেওয়া হলো, বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ তখন ৫০০ কোটি ডলার ছুঁইছুঁই। ফুলেফেঁপে সে সম্পদ এখন ১৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের।
বিল গেটসের সঙ্গে মাইক্রোসফটের নাম জড়িয়ে থাকলেও তিনি বিনিয়োগ করেন ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে। আর এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন মাইকেল লারসন। শুধু তা-ই নয়, গেটসের ব্যক্তিগত সম্পদ এবং তাঁর দাতব্য সংস্থার সম্পদের ব্যবস্থাপনার ভারও লারসনের ওপর ন্যস্ত।
মাইকেল লারসন বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে গেছেন। খুব বেশি মানুষ তাঁর সম্পর্কে জানতও না। বিল গেটসের সঙ্গেও তেমন একটা দেখা যায়নি তাঁকে। লারসনের কাজ সম্পর্কে ২০১৪ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক বাক্যে লিখেছিল, ‘যিনি বিল গেটসকে আরও সম্পদশালী করেছেন।’
সে বছর ফেব্রুয়ারিতে মাইকেল লারসনের সম্মানে নিজের সিয়াটলের বাড়িতে বিশেষ আয়োজন করেছিলেন বিল গেটস। লারসনের কাজের ২০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তখন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতিথিদের গেটস বলেছিলেন, ‘লারসন কাজ করেছে বলেই মেলিন্ডা ও আমি স্বাধীনভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ও সুশিক্ষিত বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি।’
সে অনুষ্ঠানে অতিথিদের প্লাটিনাম কিংবা পিংক রঙের পোশাক পরে আসতে বলা হয়েছিল। কারণ, এই দুটি রং মাইকেল লারসনের পছন্দ। লারসনের ওপর তাঁর ‘পুরোপুরি বিশ্বাস ও আস্থা’ আছে বলেও অতিথিদের জানিয়েছিলেন গেটস।
মাইকেল লারসনের বয়স এখন ৬১ বছর। ১৯৯৪ সাল থেকে ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে বিল গেটসের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার তিনি। বিল গেটসের ব্যক্তিগত সম্পদের পোর্টফলিওর দেখভালও করেন। ফরচুন সাময়িকীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ও নিউ মেক্সিকোয় বেড়ে উঠেছেন লারসন। এমবিএ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো থেকে।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিল গেটসের নিট সম্পদের পরিমাণ সব সময় আলোচনায় থাকলেও কোথায় কোথায় তাঁর সম্পদ আছে এবং লারসনের বিনিয়োগ–কৌশল নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গেটসের সম্পদ ক্রমেই বাড়িয়ে যাচ্ছে ক্যাসকেড। ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বছর বছর ১১ শতাংশ হারে সম্পদ বেড়েছে গেটসের।
বিয়ের ২৭ বছর পর গত মে মাসে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন মেলিন্ডা ফ্রেন্স গেটস ও বিল গেটস। সে সময় দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, গেটসদের মধ্যে বিবাদের একটি কারণ ছিল লারসন, ২০১৭ সালে যাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
সমস্যা সমাধানে তখন সাহায্য চাওয়া হয়েছিল গেটসদের কাছে। অভিযোগের সত্যতা ও ক্যাসকেডের কর্মপরিবেশ নিয়ে তদন্ত করতে আইনি সেবাদাতা নিয়োগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা ফ্রেন্স গেটস। সে সময় লারসনকে ছুটিতে পাঠানো হয়। সে তদন্তের ফলাফল আজও পরিষ্কার করা হয়নি। লারসন অবশ্য তাঁর কাজে বহাল।