বাংলাদেশে ঘরে বসে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া কিংবা পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধের সুবিধা থাকায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ই-কমার্স সাইটগুলোর। শুধু নির্দিষ্টভাবে ই-কমার্স সাইটগুলোই নয়, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের সেবা ফেসবুকসহ নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও দিচ্ছেন। এতে করে ক্রেতারাও খুশি আর উদ্যোক্তা বড় ধরনের খরচ ছাড়া সেবা দিতে পারছেন। তবে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডি শেষে ব্যবসার আকার বাড়লে ই-কমার্স কিংবা ফেসবুক কমার্স (এফ কমার্স) পরিচালনা করতে হয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই। গ্রাহকদের চাহিদা কিংবা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে এর বিকল্প নেই। এমন সব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ওয়েবসাইট তৈরির সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে নিজেদের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে রেখেছে। এতে বিনা মূল্যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে আগ্রহী যে কেউ ওয়েবসাইট খুলে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।
বিষয়টি চমৎকারই বটে। এমন সেবা নিচ্ছেন ইমন ও আফসানা। তাঁরা দুইজন মিলে গড়ে তুলেছেন অ্যাসেন্ড ক্র্যাফট। যার মাধ্যমে নানা ধরনের হাতঘড়ি, টি-শার্ট ইত্যাদি বিক্রি করেন তাঁরা। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে তিনি সহায়তা নিয়েছেন স্টোরিয়ার। সেবাটি সম্পর্কে আফসানা বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এ ধরনের সেবা খুবই উপকারি। নিজেদের ই–কমার্স দোকান বিষয়ে তিনি জানান, স্টোরিয়াতে আমাদের দোকান চালুর পর থেকে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। বাংলাদেশি একদল তরুণের উদ্যোগ হিসেবে চালু হয়েছে স্টোরিয়া (www.storrea.com) নামের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। শুধু ফেসবুক কিংবা মার্কেট প্লেসে পণ্যের বিস্তারিত দিয়েও যাঁরা ভাবেন পণ্যের আলাদা একটি ব্র্যান্ড তৈরি এবং আরও বিস্তারিতভাবে গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরার, তাঁদের জন্য এ সেবা—বললেন স্টোরিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হাসিব বিন রফিক। বললেন, ‘নিজের পণ্যের একটি স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে উদ্যোক্তা কিংবা ছোট ব্যবসায়ীরা খরচ কিংবা এর ব্যবস্থাপনার যে ঝামেলা সেটিতে যাতে না পড়তে হয় সে জন্যই আমাদের এ বিনা মূল্যের উদ্যোগ।’
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এ ধরনের সেবা খুবই উপকারী
স্টোরিয়াতে চাইলে যে কেউ নির্দিষ্ট একটি সক্রিয় ই-মেইল ঠিকানা দিয়েই খুলে ফেলতে পারেন নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট। অনলাইন বিক্রেতাদের কাজকে সহজ করে দিতে এবং কোনো ধরনের কারিগরি জ্ঞান কিংবা ওয়েবসাইট উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ছাড়া নিজের ওয়েবসাইট করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। যিনি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তাঁর নিজের নকশা, অ্যাডমিন প্যানেল, ছবি আপলোড পদ্ধতি, পণ্যের বিস্তারিত সবকিছুই নিজে করতে পারবেন বলে জানালেন আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আল তারিফ। এ পদ্ধতিতে গ্রাহক নিজের একটি ডোমেইনও পাবেন।
আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা আশফাক রহমান বলেন, উদ্যোক্তা নিজের অ্যাডমিন প্যানেলেই দেখতে পাবেন পণ্য ক্রয়ের ফরমাশ, কেনা-বেচার হিসাব, সাইটে আগ্রহী ক্রেতাদের উপস্থিতির বিষয়াদি, যোগ করতে পারবেন প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ঠিকানাও। এ উদ্যোগের আরও দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন শাহনেওয়াজ শাওন ও সুরঞ্জন দে।
একই ধরনের বাংলাদেশি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সেবাদাতার আরেকটি উদ্যোগ ঘুড়ি। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠা করার প্ল্যাটফর্ম ঘুড়ি (www.ghoori.com.bd) বাংলাদেশের তৈরি সার্চ ইঞ্জিন চরকি লিমিটেডের একটি পণ্য। মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মাইন্ড ইনিশিয়েটিভের সহায়তায় বাংলাদেশে এ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন একদল তরুণ। ঘুড়ির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাশেদ মোসলেম বলেন, ঘুড়ি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে যেখানে একটি নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছুই পাওয়া যাবে বিনা মূল্যে।
ঘুড়িতে যাঁরা ওয়েবসাইট তৈরির সেবা নেবেন, তাঁরা নিজের পছন্দসই ই-দোকান তৈরি করতে পারবেন। এ ছাড়া নিজের পছন্দসই প্রোফাইলে ছবিও ব্যবহারের সুযোগ থাকছে বলে জানালেন ঘুড়ির প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাজমুস সাকিব।
ঘুড়িতে নিজের অনলাইন দোকান চালু করেছেন গ্যালারী জলরংয়ের উদ্যোক্তা ফজলে মুনিম। তিনি বলেন এক মাস হলো চালু করেছি আমার অনলাইন দোকান। দেশিয় কুটির শিল্প পণ্য তৈরি করে আমরা বিক্রি করি। প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ঘুড়ির মতো উদ্যোগ গুলো উদ্যোক্তাদের বেশ সহায়তা করে।
ঘুড়ির এ সেবাটিতে থাকছে বাড়তি কিছু আয়োজন। যাঁরা ঘুড়ির ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, তাঁদের পণ্য চরকির (www.chorki.com) মাধ্যমে ক্রেতারা সহজে খুঁজে পাবেন। এ ছাড়া কোনো ক্রেতা পণ্য কিনলে বিক্রেতারা মোবাইল ফোনে বার্তা এবং ই-মেইল নোটিফিকেশনও পাবেন। থাকছে ই-শপের জন্য ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা, যার সাহায্যে বিক্রেতারা নিজেদের পণ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি সহজে করতে পারবেন। এ উদ্যোগের আরও দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন রেজওয়ানা রশিদ ও জাহিদুল আমিন।