ইন্টারনেট ব্যবহারকারীমাত্রই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের নাম জানার কথা। ইন্টারনেটের একটা প্রজন্মের কাছে আইকনিক এই ব্রাউজারকে অবসরে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। ২৭ বছরের পথচলায় ইতি ঘটছে অবশেষে।
মাইক্রোসফট বলছে, আজ ১৫ জুন থেকে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে আর কোনো সমর্থন দেবে না তারা। বর্তমানে চলছে গুগল ক্রোম আর সাফারি ব্রাউজারের দাপট। স্মৃতিপট হাতড়ে পুরোনো ব্রাউজারটিকে বিদায় জানাচ্ছেন অনেকেই।
নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ বছরের পুরোনো এই ব্রাউজার যুক্ত হচ্ছে অতীত হয়ে যাওয়া ব্ল্যাকবেরি ফোন, ডায়াল আপ মডেম, পাম পাইলটের মতো প্রযুক্তি ইতিহাসের ডাস্টবিনে।
তবে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের এই অবসরের বিষয়টি একেবারে আশ্চর্যের কিছু নয়। বছরখানেক আগেই মাইক্রোসফট জানিয়ে দিয়েছিল, ২০২২ সালের ১৫ জুন ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের বিদায়ঘণ্টা বাজবে। ১৫ জুনের পর উইন্ডোজ টেনের কিছু সংস্করণে আর দেখা মিলবে না এই ব্রাউজারের। বিকল্প হিসেবে মাইক্রোসফট এজ ব্যবহারের কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার থেকে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে কেউ ক্লিক করলে তাকে মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারে নিয়ে যাবে মাইক্রোসফট। গত বছর থেকেই এক্সপ্লোরার ব্যবহারকারীদের পুরোনো ব্রাউজারের মায়া ছাড়তে বলেছিল মাইক্রোসফট।
২০২১ সালের মে মাসে মাইক্রোসফট এজ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক শন লিন্ডার্সি এক ব্লগ পোস্টে বলেছিলেন, ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের চেয়ে মাইক্রোসফট এজ আরও দ্রুতগতির, নিরাপদ ও আধুনিক ব্রাউজার। এ ছাড়া এটি পুরোনো ব্রাউজারের নানা সমস্যা সমাধান করতে পারবে। পাশাপাশি এই ব্রাউজার এক্সপ্লোরারের পুরোনো ঐতিহ্য ও অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে।
অনেকেই টুইটারে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের বিদায় নিয়ে তাঁদের আবেগের কথা তুলে ধরছেন। কেউ কেউ বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ, অনিরাপদ ব্রাউজার ছিল এটি। কেউ বলছেন, অন্য কোনো ব্রাউজার কম্পিউটারে ইনস্টল করার জন্য সেরা ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। তবে নব্বইয়ের দশকের ব্যবহারকারীদের জন্য এটি আবেগের নাম। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ২২ বছর বয়সী এক যুবকের মন্তব্য প্রকাশ করেছে, যিনি এই ব্রাউজারের বিদায়ে নিজের দুঃখের কথা বলেছেন।
১৯৯৫ সালে বিশ্ববাজারে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের। ইন্টারনেট দুনিয়ার ইতিহাস বলছে, আত্মপ্রকাশের মাত্র এক বছরের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হয়ে উঠেছিল এই ব্রাউজার। নেটস্কেপ ও নেভিগেটরের আধিপত্যকে খর্ব করে যাত্রা শুরু হয়েছিল এর। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে এই ব্রাউজার মানুষের ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা বদলে দিয়েছিল।
এই ব্রাউজারের একক আধিপত্য নিয়ে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে মাইক্রোসফটকে। মজিলা, অপেরা ও ক্রোম ব্রাউজারের বিরুদ্ধে উইন্ডোজে অবৈধ সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তবে সব ছাড়িয়ে দীর্ঘদিন ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের ধারেকাছে আসতে পারেনি কোনো ব্রাউজার। কিন্তু সবকিছুর শেষ থাকে। ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলতে শুরু করে। বিশেষ করে এই ব্রাউজারের ধীরগতি ও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ২০০০ সালে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের বাজার দখল ছিল ৯০ শতাংশ। কিন্তু ২০০৮ সালে গুগল ক্রোমের জনপ্রিয়তার কারণে বাজার হারাতে শুরু করে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার।
বর্তমানে গুগল ক্রোমের দখলে রয়েছে বাজারের ৬৫ শতাংশ। এরপর অ্যাপলের সাফারির দখলে বাজারের ১৯ শতাংশ। আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের উত্তরসূরি এজের দখলে মাত্র ৪ শতাংশ।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, যাঁরা আরও কিছুদিন ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার চালিয়ে যেতে চান, তাঁদের জন্য কিছু কারিগরি নির্দেশনা রয়েছে মাইক্রোসফটের।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, উইন্ডোজ ১০–এর ২০২২ এবং পরবর্তী সংস্করণে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারকে অবসরে পাঠানো হচ্ছে। তবে উইন্ডোজ ৮.১, উইন্ডোজ ৭ এক্সটেনডেড সিকিউরিটি আপডেট সংস্করণ ও ইউন্ডোজ ১০ সার্ভারের কিছু সংস্করণে এটি চালানো যাবে। একই সঙ্গে উইন্ডোজের অন্য সব সংস্করণ ব্যবহারকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত মাইক্রোসফট এজ বা অন্য ব্রাউজারে চলে যেতে পরামর্শ দিয়েছে মাইক্রোসফট। কিছু প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ বা সাইট আছে, যা কেবল এক্সপ্লোরারে চলে। এজ ব্রাউজারে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার মোড থাকলেও সবকিছু তাতে প্রত্যাশামতো কাজ না–ও করতে পারে।
নিউইয়র্ক পোস্ট ও আল–জাজিরা অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন