বাংলাদেশেও আক্রমণ করেছে র‍্যানসমওয়্যার

র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণে পিসিতে রাখা ফাইলে আর ঢুকতে দেয় না। ছবি: বিবিসি।
র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণে পিসিতে রাখা ফাইলে আর ঢুকতে দেয় না। ছবি: বিবিসি।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পিসিতে ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব আক্রান্ত পিসির ফাইলে ঢোকা যাচ্ছে না। সেখানে ঢুকতে অর্থ দাবি করা হচ্ছে। এশিয়ান টিভির ১২টি কম্পিউটারে এ ধরনের ম্যালওয়্যার আক্রমণ হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি বিভাগের প্রধান পারভেজ চৌধুরী।

এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত কম্পিউটারে র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ করেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পিসিতে আক্রমণের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। আক্রান্ত অনেক প্রতিষ্ঠান নিজের নাম প্রকাশ করতে চায় না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু পিসি আক্রান্ত হয়েছে। তবে আক্রান্ত পিসির সঠিক সংখ্যা জানাননি তিনি।

বাংলাদেশ ও ভুটানে ক্যাসপারস্কি ল্যাবের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসএক্সট্রাক্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রবীর সরকার বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কিছু পিসি ও প্রতিষ্ঠানে র‍্যানসমওয়্যারটি আক্রমণ করেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার হামলার ঘটনা। উইন্ডোজের নিরাপত্তা ত্রুটি কাজে লাগিয়ে এ আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে অ্যান্টিভাইরাসের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কোনো হ্যাক নয়। যেহেতু আজ থেকে আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, এ আক্রমণ আরও বাড়বে। ওয়ানাক্রাই কোনোভাবেই শেষ সাইবার হামলা হবে না। একের পর এক আক্রমণ হতেই থাকবে। সাইবার অপরাধীরা বসে নেই। থাকবেও না। আমাদের বুঝতে হবে যে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে হেলাফেলা করার আর কোনো সুযোগ নেই।’

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীন জাতীয় ডেটা সেন্টারের পরিচালক তারেক বরকত উল্লাহ জানান, বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে লিনাক্স ব্যবহৃত হওয়ার সব সিস্টেম নিরাপদে আছে। আক্রমণ হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ উইন্ডোজ সফটওয়্যারচালিত ডিভাইস।

তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, র‍্যানসমওয়্যার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আজ মঙ্গলবার সরকারের টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিশেষ সভা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাইবার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিমের (সার্ট) পক্ষ থেকে করণীয় নিয়ে সার্টের ওয়েবসাইটে (সিআইআরটি ডটগভ ডটবিডি) তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন সব কটি টেলিভিশনে র‍্যানসমওয়্যার বিষয়ে সতর্কবার্তা প্রকাশ করবে।

সুমন আহমেদ সাবির বলেন, কয়েকটি আক্রমণের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। যদি কোনো পিসিতে আক্রমণ হয়, তবে অর্থ দেওয়া যাবে না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না হলে পিসি ফরম্যাট দিয়ে ফেলতে হবে। আশঙ্কার কথা হচ্ছে—গত দুই দিনে র‍্যানসমওয়্যারটির দুটি নতুন সংস্করণ ছড়িয়েছে। এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে সচেতন থাকার বিকল্প নেই। যাঁরা উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করছেন, তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে। উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা প্যাঁচ হালনাগাদ করে নিতে হবে। অপরিচিত কোনো উৎস থেকে আসা মেইলের অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করা যাবে না। অনিরাপদ ওয়েবসাইটে যাওয়া, ছবি, সফটওয়্যার ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের এখন সতর্ক হওয়ার সময়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আক্রমণের ঘটনা আমাদের শিখিয়েছে। চুরি করা সফটওয়্যার ব্যবহারের পরিবর্তে লিনাক্স ব্যবহার করতে হবে। আসল সফটওয়্যার ব্যবহারের অভ্যাস গড়তে হবে।’
প্রবীর সরকার বলেন, উইন্ডোজ সিস্টেম ঝুঁকিতে বলে হালনাগাদ করা ছাড়া উপায় নেই। সঙ্গে হালনাগাদ নিরাপত্তা সফটওয়্যার থাকতে হবে। ব্যাকআপ নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেকোনো ফাইল ডাউনলোডের আগে সতর্ক হতে হবে।

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে হওয়া সাইবার হামলাকে বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে অভিহিত করেছে বিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। সামনে আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

র‍্যানসমওয়্যার হচ্ছে পরিচিত ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম; যা কম্পিউটার বা মুঠোফোন ব্যবহারে বাধা দিয়ে থাকে। এটি একধরনের র‍্যানসম বা মুক্তিপণ দাবি করার মতো ব্যাপার।

হ্যাকারদের ছড়িয়ে দেওয়া ক্ষতিকর সফটওয়্যার র‍্যানসমওয়ারে গত শুক্রবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো স্থানের কম্পিউটার-ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। হামলার ব্যাপকতা গতকাল রোববার আরও বাড়ে। অন্তত ১৫০টি দেশ এই সাইবার হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। হামলার শিকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখের বেশি।

নজিরবিহীন এই সাইবার হামলার পেছনের মূল হোতাদের ধরতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীরা কাজ শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন:
এই সাইবার হামলা একটা সতর্কবার্তা : মাইক্রোসফট
সাইবার হামলায় বাংলাদেশের ক্ষতি হয়নি
সাইবার হামলার ঝুঁকি বাংলাদেশেও?