রিমঝিম বৃষ্টি কার না ভালো লাগে? লম্বা দূরত্ব কিংবা বৃষ্টির পানি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য গাড়ি বেশ ভালো সঙ্গী। তবে এই সময়ে জলাবদ্ধতা কিংবা বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে পারে অনেক সড়ক। সেই পানি পার হতে গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই গাড়ির যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্য বর্ষাকালে নিতে হয় কিছু বাড়তি যত্ন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন—সিয়াম অটো সলিউশনের স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম।
নিয়মিত গাড়ি পরিষ্কার রাখা
বৃষ্টির দিনে বাসায় ফিরে গাড়িটি ধুয়ে ফেলা ভালো। যদি ধোয়ার সুযোগ না থাকে, সে ক্ষেত্রে সুতি কাপড় ভিজিয়ে গাড়ি মুছে ফেলতে হবে। এতে বাড়তি ময়লা গাড়িতে জমবে না। পানি মুছে ফেলার কারণে মরিচা পড়ার হাত থেকেও বাঁচানো যাবে সাধের গাড়িকে।
কার্পেটের যত্ন নেওয়া
বর্ষায় জুতায় কাদা লাগতে পারে, ভিজে যেতে পারে। গাড়িতে ওঠার আগে জুতা ঝেড়ে নিতে হবে। উপায় না থাকলে গাড়ির কার্পেটগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। গাড়ির অভ্যন্তরে কাদামাটি থাকলে তা অস্বাস্থ্যকর। তাই বর্ষাকালে প্রতিদিন গাড়ির কার্পেট পরিষ্কার করতে হবে।
জলাবদ্ধতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা
রাস্তায় পানি জমে গেলে পানির নিচের রাস্তার অবস্থা বোঝা বেশ কষ্টকর। রাস্তায় কোথায় গর্ত আছে, তা–ও বোঝার উপায় থাকে না। তাই অযথা ঝাঁকি থেকে গাড়িকে বাঁচিয়ে চলার জন্য জলাবদ্ধতা এড়িয়ে চলা উত্তম। উপায় না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে।
বন্যা বা রাস্তায় জমে থাকা পানি যদি গাড়িতে ঢোকে, তা গাড়ির জন্য ক্ষতিকর। তাই যেসব এলাকায় বন্যা হয়, সেসব জায়গায় গাড়ি না চালানো উত্তম।
ইঞ্জিন উষ্ণ রাখা
বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়। অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি হলে গাড়ির ব্যাটারি বসে যাওয়ার (ডাউন হওয়া) আশঙ্কা থাকে। তাই বৃষ্টির দিনে গাড়ি বের করার সময় কিছুক্ষণ স্টার্ট দিয়ে রাখা প্রয়োজন। এতে ইঞ্জিন অয়েল গাড়ির যন্ত্রাংশে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে। গাড়ির ড্যাশবোর্ডে গাড়ি শীতল থাকলে একটি সবুজ সংকেত দেয়। গাড়ি চালু করে ২-৩ মিনিট রেখে দেওয়ার পর সংকেতটি চলে যায় এবং গাড়ি চালানোর জন্য উপযোগী হয়।
রেইন ওয়াইপার ঠিকমতো কাজ করছে তো
বৃষ্টিতে গাড়ি চালানোর সময় পথ দেখার জন্য গাড়ির সামনের কাচ (উইন্ডস্ক্রিন) পরিষ্কার রাখা জরুরি। অবিরাম বৃষ্টিতে ওয়াইপার চালিয়ে গ্লাস পরিষ্কার রাখতে হয়। বর্ষাকাল গাড়ি বের করার আগে রেইন ওয়াইপার ঠিকমতো কাজ করছে কি না দেখে নিতে হবে। অনেক গাড়িতে পেছনের কাচেও ওয়াইপার থাকে। গাড়ির গ্লাস বেশি ঝাপসা হলে গাড়িতে সংরক্ষিত সাবান পানি বা পানি ছিটিয়ে পরে রেইন ওয়াইপার চালালে কাচ স্বচ্ছ হয়।
হেডলাইটের যত্ন নেওয়া
পর্যাপ্ত আলো ছাড়া রাতে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। বর্ষায় বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কাদামাটি লেগে হেডলাইট নোংরা হয়ে যেতে পারে। এতে পরিপূর্ণ আলো পাওয়া যায় না। আধুনিক গাড়িগুলোতে হেডলাইট ওয়াশার থাকে। সুইচ টিপে এগুলো দিয়ে গাড়ির হেডলাইট পরিষ্কার রাখা যায়।
ইঞ্জিনে যেন পানি প্রবেশ না করে
সাধারণ বৃষ্টি বা স্বল্প জলাবদ্ধতায় গাড়ির ইঞ্জিন পানিতে ডুবে যায় না। আর হালকা বৃষ্টির পানিতেও ইঞ্জিনের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে যে উচ্চতার পানিতে ইঞ্জিন ডুবে যাবে, সেখানে গাড়ি না চালানো উচিত। কারণ পানি প্রবেশ করলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চাকা পরিষ্কার করা
বৃষ্টিতে গাড়ির চাকায় কাদামাটি আটকে থাকে। এতে গাড়ি পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চাকায় বেশি কাদামাটি জমে গেলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। বেশির ভাগ গাড়ির চাকায় এখন অ্যালয় রিম ব্যবহৃত হয়। অ্যালয় রিমগুলোতে কাদামাটি না আটকানোর জন্য নিয়মিত ধুয়ে ফেলা ভালো।
মাডগার্ড ব্যবহার করা
গাড়ির চাকা থেকে মাটি ছিটকে যেন গাড়ির বডিতে আঘাত বা দাগ ফেলতে না পারে, সে জন্য মাডগার্ড ব্যবহার করা হয়। এগুলো চাকার সামনে গাড়ির কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। প্লাস্টিক ও রাবার—দুই ধরনের মাডগার্ড পাওয়া যায়।
সার্ভিসিং করানো
গাড়ির চেসিস বাইরে থেকে দেখা যায় না। গাড়ির নিচের অংশে এই বর্ষায় ভালো কাদামাটি জমে যায়। দীর্ঘদিন কাদামাটি পরিষ্কার করা না হলে মরিচা পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গাড়ি সার্ভিসিংয়ে নিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে নিচের অংশ পরিষ্কার করতে হবে।
হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি রাখুন সুরক্ষিত
হাইব্রিড গাড়িতে ব্যাটারির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ব্যাটারির জন্য পানি ক্ষতিকর। তাই হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারিতে পানি যেন প্রবেশ না করে, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যদিও গাড়িগুলো এমনভাবে বানানো হয়, যাতে পানি প্রবেশ না করে। তবে বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে সাধারণ গাড়ির চেয়ে এই গাড়িগুলোর প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে।