ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে থাকা কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটার কেনা প্রয়োজন
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে থাকা কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটার কেনা প্রয়োজন

ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য কেমন কম্পিউটার প্রয়োজন

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে পঞ্চম পর্ব।

পর্ব-৫

অনেকেই মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য খুব বেশি উন্নতমানের কম্পিউটার দরকার হয়। আসলে তা নয়। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। তাই কাজের প্রয়োজনে কম্পিউটারের কনফিগারেশনে ভিন্নতার পাশাপাশি অপারেটিং সিস্টেমও আলাদা হতে পারে। এ জন্য ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে থাকা কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটার কেনা প্রয়োজন। আপনার কোন ধরনের কম্পিউটার প্রয়োজন, তা জানতে নিচের বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে।

গবেষণা, লেখা ও মার্কেটিং

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে গবেষণা, লেখা ও মার্কেটিং বিভাগে সাধারণত প্রবন্ধ লেখা, লিড জেনারেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), প্রশাসনিক কাজ, অনুবাদক, আইনিসহায়তা ও গ্রাহকসেবার মতো কাজ করার সুযোগ মিলে থাকে। এ ধরনের কাজের জন্য সাধারণত অনলাইনে নিয়মিত বিভিন্ন তথ্য খুঁজতে হয়। ফলে কম্পিউটারে কাজ করার সময়ই ব্রাউজারের একাধিক ট্যাব চালু থাকে। ফলে এসব কাজ করার জন্য একেবারে হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগসহ ২৫৬ থেকে ৫১২ গিগাবাইট এসএসডিসহ র‍্যাম ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট সুবিধার কম্পিউটার হলেই হবে। আর কেউ যদি ম্যাক কম্পিউটার পছন্দ করলে ম্যাকবুক এয়ার বা এন্ট্রি লেভেলের ম্যাক মিনি বা ম্যাকবুক ব্যবহার করতে পারেন।

আইটি রিলেটেড

এই বিভাগের কাজগুলো হলো আইটি, নেটওয়ার্কিং, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যান্ড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটাবেইস অ্যাডমিন, ডেভঅ্যাপ ইঞ্জিনিয়ার, সিস্টেম আর্কিটেক্ট, ডেটা অ্যানালিস্ট ইত্যাদি। এসব কাজ করার জন্য সাধারণত হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় না। তবে কাজের পরিমাণ বেশি হলে বা বিশেষায়িত কাজের জন্য অনেকেই হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটার ব্যবহার করেন। আপনি যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নতুন কাজ শুরু করবেন সেহেতু ৫১২ গিগাবাইট এসএসডি এবং ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট র‍্যাম সুবিধার মধ্যম মানের যেকোনো কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ জন্য অবশ্যই প্রসেসর ও র‍্যাম হালনাগাদ করতে সক্ষম মাদারবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। আর যদি ম্যাক কম্পিউটার ব্যবহার করতে চান তবে ম্যাক মিনি থেকে শুরু করে ১৬ গিগাবাইট র‍্যাম সুবিধার ম্যাকবুক প্রোর এন্ট্রি লেভেলের যেকোনো কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন।

গ্রাফিক ইনটেনসিভ কাজ

এই বিভাগের কাজগুলো হলো গ্রাফিকস, থ্রিডি, অ্যানিমেশন, ভিডিও সম্পাদনা, ভয়েস আর্টিস্ট, আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, গেম অ্যাসেট ডিজাইনার ও ডেভেলপার ইত্যাদি। এসব কাজ করার জন্য হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটারের পাশাপাশি ভালোমানের গ্রাফিকস কার্ড এবং আকারে বড় মনিটর ব্যবহার করতে হবে। কেননা এসব কাজের জন্য নির্ভুল রং ব্যবহারের জন্য মনিটরে কালার প্রোফাইল সমর্থন করতে হবে। আর তাই আপনি যে ধরনের কাজ করতে আগ্রহী সেই কাজের উপযোগী কম্পিউটার ব্যবহার করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে কেউ যদি শুধু টুডি প্রযুক্তির গ্রাফিকসের কাজ করতে চান তবে মধ্যম মানের কম্পিউটারের সাহায্যে ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। এ জন্য মধ্যম মানের যেকোনো প্রসেসরের পাশাপাশি ৫১২ গিগাবাইট এসএসডি এবং ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট র‍্যাম সুবিধার কম্পিউটার ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার কেউ যদি থ্রিডি বা অ্যানিমেশনের জন্য গ্রাফিকস ইনটেনসিভ বিষয়ে কাজ করতে চান তবে অবশ্যই হালনাগাদ প্রযুক্তির প্রসেসরসহ ১৬ থেকে ৩২ গিগাবাইট র‍্যাম সুবিধার কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে হাতেখড়িফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করা বা শেখার জন্য প্রাথমিক পর্যায়েই হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে সফল হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৯০ শতাংশই কাজ শুরু করেছিলেন সাধারণ মানের কম্পিউটার দিয়ে। অনেকের আবার নিজের কম্পিউটার ছিল না, পরিচিতদের কম্পিউটার ব্যবহার করেই তাঁরা কাজ শিখেছেন এবং ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করেছেন। পরে নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়েই ভালোমানের কম্পিউটার কিনেছেন তাঁরা। আর তাই আপনার কাছে যে প্রযুক্তির কম্পিউটার রয়েছে, সেটি দিয়েই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন।

লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার

পরের পর্ব: ফ্রিল্যান্স কাজ শিখবেন যেভাবে