তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকে। এদের পাশাপাশি সব শ্রেণি–পেশার মানুষেরও অবস্থা একই। সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমের তরুণেরা দিন দিন ফেসবুক থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। তারা এখন বুঁদ ইউটিউবসহ অপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয়। ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোরদের মধ্যে ফেসবুক এখন আর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নয়। তালিকার প্রথম তিনটির মধ্যেও নেই জাকারবার্গের ফেসবুক। সম্প্রতি এক গবেষণায় মিলেছে এমন তথ্য।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণা চালিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে। তাদের জরিপে দেখা গেছে, ফেসবুক থেকে সরে যাচ্ছে তরুণেরা। ফেসবুক ছেড়ে তারা ইউটিউবসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর দিকে ঝুঁকছে। সামাজিক যোগাযোগের জন্য ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোরদের মধ্যে ফেসবুক এখন আর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নয়। তালিকার প্রথম তিনটির মধ্যেও ফেসবুক এখন আর নেই। কেন তরুণেরা ঝুঁকছে, তাও জানা গেছে জরিপে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপের বরাত দিয়ে দ্য ভার্জ ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলছে, কিশোর-তরুণেরা এখন ইউটিউবের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এদের ৮৫ শতাংশই বলছে, তারা ইউটিউব ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এরপরই আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রকাশের শীর্ষ জনপ্রিয় দুটি অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট। ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মধ্য লড়াইটাও বেশ। ইনস্টাগ্রাম পছন্দ করে ৭২ শতাংশ আর স্ন্যাপচ্যাট ৬৯ শতাংশ। পছন্দের জায়গায় টুইটার ৩২ শতাংশ ও রেডিট ৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের মধ্যে ফেসবুকের অবস্থান এখন চতুর্থ। ৫১ শতাংশ তরুণ-তরুণী এখনো ফেসবুক ব্যবহার করছে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান সময়ে এসে ফেসবুক ২০ শতাংশ ব্যবহারকারী হারিয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টার দেখেছে, তরুণেরা সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ঝুঁকছে ইউটিউবের দিকে। ২০১৫ সালের জরিপেও ইউটিউবের এত জয়জয়কার ছিল না। ওই বছরে ৭১ শতাংশ কিশোর-তরুণ ছিল ফেসবুক ব্যবহারকারী। আর বর্তমান সময়ে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫১-তে। তবে জরিপে দেখা গেছে, এখনো বেশি আয়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম আয়ে পরিবারের সন্তানদের কাছে ফেসবুকের আবেদন বেশি।
এখন তরুণেরা স্মার্টফোন সহজে হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, শতকরা ৯৫ শতাংশ তরুণের স্মার্টফোন আছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০০ জনের মধ্যে ৭৩ জন। তরুণেরা বলছে, তারা নিজেদের মতো ও কাজের কথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানাতে পারে বলেই এদিকে ঝুঁকছে। নিজেদের সমস্যাও তারা নিজেদের মতো করে এখানে তুলে ধরতের পারে বলেই ঝুঁকছে।
অ্যাপেও পিছিয়ে ফেসবুক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপগুলোকে পেছনে ফেলেছে চীনের এক অ্যাপ। ভিডিও সেলফি ব্যবহারের অ্যাপ ‘টিক টোক’ এখন সবার শীর্ষে। প্রযুক্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ার জানিয়েছে, ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসে আইফোনে সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে চীনের অ্যাপটি। মার্চ পর্যন্ত বিশ্বে ৪ কোটি ৪৮ লাখবার নামানো হয়েছে অ্যাপটি।
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ইউটিউব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আর পেছনে। ফেসবুক ডাউনলোড হয়েছে ২৯ দশমিক ৪ মিলিয়নবার। এ কারণে ফেসবুকের অবস্থান ৭-এ।
‘টিক টোক’ অ্যাপটি তৈরি করেছে বাইটড্যান্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা ৩৪ বছরের উদ্যোক্তা যাহাং ইয়েমিং। ‘টিক টোক’ অ্যাপটির মূল ধারণা প্রকাশ করা হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। খুব সহজে ব্যবহারকারীরা ১৫ সেকেন্ডের ছোট ছোট সংগীতসংবলিত ভিডিও তৈরি করতে পারবেন, যেখানে বেশ কিছু ইফেক্ট যোগ করা যাবে। ধারণাটি নতুন কিছু নয়, কিন্তু ‘টিক টোক’ সেটার সঠিক ব্যবহারই করেছে। চীনে মোট ব্যবহৃত স্মার্টফোনগুলোর অন্তত ১৪ শতাংশ ফোনে অ্যাপটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে ‘টিক টোক’ আইফোনে যতটা ভালোভাবে কাজ করে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোয় ততটা ভালো কাজ পাওয়া যায় না। এর কারণ হতে পারে যে মেইনল্যান্ড চীনে গুগলের ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্মগুলো কাজ করে না, কারণ চীনে গুগলের সেবাগুলো নিষিদ্ধ।