ফেসবুকের কাছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য চাওয়ার হার বেড়েছে। ফেসবুকের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশকে আগের চেয়ে বেশি তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ফেসবুকের সর্বশেষ ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের হিসাব ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফেসবুকের সর্বশেষ ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ৫৭ শতাংশ ক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহ করেছে ফেসবুক। গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে ফেসবুকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে তথ্য দেওয়ার হার বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও তথ্য চেয়ে ফেসবুকের কাছে অনুরোধ বেড়েছে।
ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে চাওয়া তথ্যের পরিমাণ এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে করা অনুরোধে সাড়া দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তথ্য নিয়ে ওই বছরের ২৮ এপ্রিল ফেসবুক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এরপর থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে কোন দেশের সরকার ফেসবুকের কাছে কী ধরনের অনুরোধ জানায়, তা তুলে ধরা হয়। তবে কোন অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়, তা উল্লেখ করা হয় না।
ফেসবুকের এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মোট ১৫২টি অনুরোধ করা হয়েছে ফেসবুককে। ১৩৪টি জরুরি অনুরোধ আর ১৮টি আইনি অনুরোধ। এর মধ্যে ২০৫ জন ব্যবহারকারী বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। ফেসবুক এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ ক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে জরুরি ক্ষেত্রে ৬১ শতাংশ ও আইনি ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে মোট ৬০টি অনুরোধে ৯৫টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হলে ৪৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দেয় ফেসবুক। এর মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার অনুরোধ ১৭টি। জরুরি ৪৩ অনুরোধে ৫৯টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে ৪৪টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছিল সরকার। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করেছিল ফেসবুকের কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে ৪৯টি অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। এতে ৫৭টি অ্যাকাউন্ট-সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের ক্ষেত্রে ২৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ তথ্য দিয়েছিল ফেসবুক। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে নয়টি অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে ১০টি অনুরোধ করা হয়েছিল। অর্থাৎ ২০১৬ সালে ফেসবুকের কাছে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে মোট ৫৯টি অনুরোধ করা হয়েছিল।
২০১৭ সালে ফেসবুকের কাছে বাংলাদেশ সরকারের মোট অনুরোধ দাঁড়িয়ে ১০৪টি। মোট অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয় ১৩৯টি। অর্থাৎ ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে অনুরোধ ও অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসেই গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বজুড়েই ফেসবুকের কাছ থেকে তথ্য পেতে সরকারের কাছ থেকে অনুরোধ বাড়ছে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় ২০১৮ সালে ফেসবুকের কাছে সরকারি অনুরোধ ২৬ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে যেখানে অনুরোধ ছিল ৮২ হাজার ৩৪১টি, তা এ বছরে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৮১৫টি। ২০১৬ সালে যেখানে মোট অনুরোধ ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার, তা ২০১৭ সালে এসে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬১ হাজার ২৩১টিতে।
২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বিশদ আলোচনা করার আগ্রহ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠান ওই সময়কার ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। চিঠির বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের নানা ধরনের অপব্যবহারসহ নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পরই তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি তারানা হালিম সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেন, বিভিন্ন উপায়ে তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবেন। ওই বছরেই ফেসবুকের কাছে চাওয়া তিনটি আইডির তথ্য তারা বাংলাদেশ সরকারকে দেয়। তখন থেকেই ফেসবুক সহযোগিতা শুরু করে।
এবারের প্রতিবেদন সম্পর্কে ফেসবুকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিটি অনুরোধ যত্নসহকারে পর্যালোচনা করি। সে অনুযায়ী আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে তথ্য দেওয়া হয়।’