ফেসবুক এখন আর সেই ফেসবুক নেই। যে ফেসবুকে চাকরির জন্য কর্মীরা সাগ্রহে অপেক্ষা করতেন, এখন টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের কর্মী ভাগিয়ে নিতে পারে! সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট গ্লাসডোরের করা সেরা কর্মস্থলের তালিকায় ফেসবুকের আরও অধঃপতন সে কথাই বলছে। গ্লাসডোরের তালিকা অনুযায়ী, টানা দ্বিতীয় বছর সেরা কর্মস্থলের তালিকায় পিছিয়েছে ফেসবুক। এবার ১৬ থেকে নেমে ২৩ নম্বর অবস্থানে চলে গেছে।
নাম-পরিচয় গোপন রেখে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা গ্লাসডোরে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের সুযোগ পান। সেখানে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং থাকে ৫। ফেসবুকের কর্মীরা এর আগে গড়ে সাড়ে ৪ র্যাঙ্কিং করলেও এবার তা ৪ দশমিক ৪ র্যাঙ্কিংয়ে নামিয়ে দিয়েছেন।
গ্লাসডোরের তালিকায় শীর্ষ তিন কর্মস্থল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে হাবস্পট, বেইন অ্যান্ড কো এবং ডকুসাইন নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান।
ফেসবুকের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর থেকে সেরা কর্মস্থল হিসেবে কর্মীদের মধ্যে আস্থা কমতে থাকে। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুকের কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে মার্কিন নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা একে সেরা কর্মস্থল ভাবার জায়গা থেকে বের হয়ে আসেন।
এর বাইরে ফেসবুককে অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্তের মুখেও পড়তে হচ্ছে। গ্লাসডোর ২০২০ র্যাঙ্কিং বলছে, ফেসবুক এখন কলেজ গ্র্যাজুয়েট ও সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
গ্লাসডোর মূলত আটটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এ তালিকা করে। কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য, জ্যেষ্ঠ কর্মী ব্যবস্থাপনা, বেতন ও সুবিধার মতো বিষয়গুলো এর সঙ্গে যুক্ত। তালিকায় আসতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপক্ষে এক হাজার কর্মী ও সব বিভাগে কমপক্ষে ৭৫ রেটিং পেতে হয়।
গ্লাসডোরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফেসবুকের কর্মীরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেসির মতো বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ধীরগতির বলে মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া এখানকার উচ্চ পর্যায়ের প্রকল্পগুলো অত্যন্ত রাজনৈতিক ও সেখানে জীবন ও কাজের ভারসাম্য নেই।
গ্লাসডোরের বিশেষজ্ঞ সারা স্টোডার্ড বলেন, ফেসবুক ঘিরে এখন বাইরে নানা সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া এখনকার কর্মীদের কাছে এখন অতিমাত্রায় উৎপাদনশীলতা প্রত্যাশা করা হয় যাতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন।
তবে র্যাঙ্কিংয়ে পেছালেও গড়পড়তা গ্লাসডোর তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে ফেসবুক। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিং সাড়ে ৩-এর মতো।
ফেসবুক ছাড়াও তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটি তিন ধাপ পিছিয়ে এখন সেরা কর্মস্থল হিসেবে ১১ তম স্থানে রয়েছে। অ্যাপল ১৩ ধাপ পিছিয়ে তালিকায় ৮৪ নম্বরে। শীর্ষ ১০০ তালিকায় আমাজনের জায়গা হয়নি।
ফেসবুকের মতোই চলতি বছরের জুন মাসে গ্লাসডোরের করা ‘শীর্ষ ১০০ সিইও’র তালিকায় গত বছরের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এ রেটিংয়ে গত বছর জাকারবার্গ ১৬তম অবস্থানে থাকলেও এ বছর তিনি ৫৫তম অবস্থানে নেমে গেছেন।
গ্লাসডোরের করা বার্ষিক ১০০ সিইওর তালিকায় প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান থেকে ২৭ জন সিইও স্থান করে নিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিইও হিসেবে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাইয়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন জাকারবার্গ। সুন্দর পিচাই ও জাকারবার্গের রেটিং পয়েন্ট ৯৪ হলেও সুন্দর পিচাই আছেন ৪৬ নম্বরে। তবে ওই তালিকায় জাকারবার্গের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক। তাঁর রেটিং পয়েন্ট ৯২। তিনি তালিকার ৬৯ নম্বরে রয়েছেন। তবে টিম কুক ও জাকারবার্গ টানা ৭ বছর ধরে শীর্ষ ১০০ সিইওর তালিকায় স্থান ধরে রেখেছেন।
অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সিইওদের মধ্যে অ্যাডোবের শান্তনু নারায়ণ ও মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা তালিকার পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান দখল করেছেন। তাঁদের রেটিং পয়েন্ট ৯৮।
২০১৩ সালে যখন গ্লাসডোর সিইওদের র্যাঙ্কিং শুরু করে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিইওদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তাঁর সে সময় রেটিং ছিল ৯৯ শতাংশ।
এবারের তালিকায় শীর্ষস্থানটি সফটওয়্যার ভিজুয়ালাইজেশন কোম্পানি ভিএমওয়্যারের প্যাট গেলসিঙ্গারের। তাঁর রেটিং ৯৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন মার্কিন সুপারমার্কেট চেইন এইচইবির সিইও চার্লস সি বাট। তৃতীয় অবস্থানে আছেন ফাস্ট ফুড চেইন ইন-এন-আউট বার্গারের সিইও লিনসি স্নেইডার। তথ্যসূত্র: রয়টার্স