রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন অগ্নিনির্বাপণে অংশ না নিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। কারণ তিনি রোমান সাম্রাজ্যের অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসকদের একজন ছিলেন। এমনটা আমরা শুনে আসছি। সেই নিরোকে আমরা দেখেছি ভাস্কর্য এবং আঁকা ছবিতে। শুধু নিরো নন, ক্যালিগুলা বা হ্যাড্রিয়ানের মতো বহু রোমান সম্রাটের ভাস্কর্য পাওয়া যায়।
ভাস্কর যে অত্যন্ত দক্ষ হাতে সেগুলো তৈরি করেছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। তবু সেসব নিখুঁত ভাস্কর্য থেকে জীবদ্দশায় তাঁরা দেখতে ঠিক কেমন ছিলেন, তা বোঝা কঠিন। আর সে কাজই করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাঁদের আদল।
কানাডীয় সিনেমাটোগ্রাফার এবং ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটির নকশাকার ড্যানিয়েল ভোশার্ট কাজটি করেছেন নিউরাল নেটওয়ার্কে মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। ব্যাপারটা অনেকটা মানুষের শেখার মতো। মেশিন লার্নিং কোনো কিছু শেখে অভিজ্ঞতা থেকে। মানে কম্পিউটার সিস্টেমে যত ডেটা ইনপুট দেওয়া হবে, সেগুলো থেকে। আর নিউরাল নেটওয়ার্কের কাজের ধরন আমাদের মস্তিষ্কের মতো। বিভিন্ন স্তরে সাজানো থাকে নোড। নোডগুলো একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত। প্রয়োজন বুঝে একে-অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
শুরুতে প্রায় ৮০০ আবক্ষ মূর্তির মডেল পরীক্ষা করেছে আর্টব্রিডার নামের নিউরাল নেটওয়ার্ক অ্যালগরিদম। এরপর তা থেকে মুখাবয়ব, গঠন, চুল, ত্বক, রং ইত্যাদি তৈরি করে দেখিয়েছে। আর শিল্পীর শেষ তুলির আঁচড়ের মতো ছবি সম্পাদনার সফটওয়্যার অ্যাডবি ফটোশপ ব্যবহার করে আদলগুলোকে দেখতে বাস্তবধর্মী করে তুলেছেন ড্যানিয়েল ভোশার্ট।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে ‘গারবেজ ইন গারবেজ আউট’ বলে একটা কথা আছে। অর্থাৎ আবর্জনা ইনপুট দিলে আউটপুট হিসেবে আবর্জনাই পাওয়া যাবে। আর্টব্রিডারের বেলায় একই কথা প্রযোজ্য বলে জানান ভোশার্ট। আলোকোজ্জ্বল, নিপুণ নকশার এবং কম ক্ষতি হয়েছে এমন আবক্ষ মূর্তি থেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে সহজেই। আর উল্টোটা হলে ফলও পাওয়া যাবে উল্টো।
সম্রাট জীবিত থাকা অবস্থায় যেসব মূর্তি বানানো হয়েছিল, সেগুলোকে মডেল তৈরির প্রাথমিক উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন বলে এক ব্লগ পোস্টে উল্লেখ করেছেন ভোশার্ট। ত্বকের রং ঠিক করতে আর্টব্রিডারে নমুনা ছবি ইনপুট দিয়েছেন তিনি। কখনো কখনো যন্ত্রকেই অনুমানের সুযোগ দিয়েছেন কোন রঙে কাকে বেশি বাস্তবধর্মী দেখাবে তা ঠিক করার। সঙ্গে ভোশার্ট নিজেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রং ঠিক করে দিয়েছেন।
রোমান সম্রাটদের ছবি ও প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ নিয়ে গবেষণায় দুই মাসের মতো সময় লেগেছে তাঁর। সেই সঙ্গে প্রতিটি পোর্ট্রেট তৈরিতে গড়ে লেগেছে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা।
করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউনে থাকার সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য রোমান সম্রাটদের পোর্ট্রেট তৈরির কাজে হাতে দেন ভোশার্ট। এর আগে রোমান সম্রাটদের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান শূন্যের কোটায় ছিল বলে জানিয়েছেন নিজের ওয়েবসাইটে। শখের সে প্রকল্পে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ সাল থেকে খ্রিষ্টাব্দ ২৮৫ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রিন্সিপেট আমলের ৫৪ জন রোমান সম্রাটের পোর্ট্রেট তৈরি করেন ভোশার্ট।
ভোশার্টের মতে, রোমান সম্রাটদের ব্যাপারে কম জানায় তাঁর সুবিধাই হয়েছে। কারণ এতে সবকিছু একদম শুরু থেকে শুরু করতে পেরেছেন। তাঁর মনে কোনো পক্ষপাত কাজ করেনি। কারণ কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা থাকলে তা শিল্পীর তুলিতেও ফুটে উঠতে পরে বলে মনে করেন তিনি।
ভোশার্টের তৈরি পোর্ট্রেটগুলো পাওয়া যাবে তাঁর ওয়েবসাইটে।