রিফাত পড়ছেন ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। হঠাৎ তাঁর হাতে দেখা গেল ওয়ালটনের একটি ফিচার ফোন। কথা বলছেন মায়ের সঙ্গে। যেহেতু ফিচার ফোন নিয়ে এই প্রতিবেদন, তাই তাঁর কাছেই শোনা যাক স্মার্টফোনের এই যুগে কেন তিনি ফিচার ফোন ব্যবহার করেন।
ফোন রাখতেই জিজ্ঞেস করলাম, কেন এই ফিচার ফোনটি ব্যবহার করেন? হাসি দিয়ে রিফাত বললেন, ‘আমি স্মার্টফোনও ব্যবহার করি। কিন্তু ফিচার ফোনই আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, এই যে ফোনটি ব্যবহার করছি, বলা যায় পাওয়ার ব্যাংকের থেকেও এটি বেশি শক্তিশালী। ৮-১০ দিন ধরে ব্যবহার করছি, চার্জ থাকছে। বাসা থেকে সব সময় আমাকে এই নম্বরেই ফোন করে। রেডিও শোনা যায়, টর্চ আছে এবং আরও টুকটাক সুবিধা তো আছেই।’
রহিম মিয়া রিকশা চালান। তাঁর হাতে দেখা গেল স্যামসাংয়ের একটি ফিচার ফোন। জানালেন কম টাকায় ভালো ফোন ব্যবহার করেন তিনি। কারণ সারা দিন রিকশা চালিয়ে ফোনে চার্জ দেওয়ার কোনো টেনশন নেই তাঁর। সহজে বুঝতে পারেন বড় বড় করে বসানো সংখ্যাগুলো।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানো বা ফ্লেক্সিলোডের কাজে নানা ব্র্যান্ডের নানা রকম ফিচার ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। আইটপ, বিকাশ, নগদ, আইপে, রকেটসহ নানা সেবার লেনদেন করা হচ্ছে এই ফিচার ফোনে।
সব মিলিয়ে ফিচার ফোন বা বোতামওয়ালা মুঠোফোনের বাজার এখনো রমরমা। দাম কম ও বেশি সময় চার্জ থাকা ফিচার ফোনের জনপ্রিয়তার বড় একটা কারণ। বাজারে নানা মডেলের ফিচার ফোন পাওয়া যাচ্ছে। সেসব কিছু ফোনের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
স্যামসাং
স্যামসাং গুরু মিউজিক-২ ফিচার ফোনটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। এতে দুটি সিমকার্ড ব্যবহার করা যায়। ২ ইঞ্চি পর্দার ফোনটিতে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড লাগানো যায়। সাদা রঙের ফোনটিতে রয়েছে ১ বছরের ওয়ারেন্টি। দাম ১ হাজার ৯৯০ টাকা।
ওয়ালটন
জাভা-সমর্থিত নতুন ফোন এনেছে দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। বাংলাদেশে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানায় তৈরি স্মার্ট সুবিধায় সাজানো নতুন এই ফোনের মডেল ‘ওলভিও এমএম১৯জে’। ডুয়েল সিমের এই ফিচার ফোনটিতে জাভা-সমর্থিত গেম এবং অ্যাপস ব্যবহার করা যাবে। এতে ফেসবুক, অপেরা মিনি দেওয়া থাকে। ২.৪ ইঞ্চির পর্দা, দুই পাশে এলইডি ফ্ল্যাশযুক্ত ডিজিটাল ক্যামেরা, এলইডি টর্চ, ৩২ গিগাবাইট কার্ড, এমপিথ্রি, এমপিফোর, থ্রিজিপি প্লেয়ার, রেকর্ডিং সুবিধাসহ এফএম রেডিও, ব্লুটুথ ইত্যাদি রয়েছে। দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা।
সিম্ফনি
বাজারে এল৪০ মডেলের ফিচার ফোন এনেছে সিম্ফনি। এই ফোনটিতে ২.৪ ইঞ্চির ডিসপ্লে, আছে ডিজিটাল ক্যামেরা। ১৭৫০ এমএএইচ লাইওন ব্যাটারি, এফএম রেডিও, টর্চলাইট রয়েছে। দাম ১ হাজার ১৩০ টাকা।
নকিয়া
নকিয়া ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় ফিচার ফোন ৩৩১০। ফিচার ফোন জগতের রাজা বলা যায়। রঙিন ২.৪ ইঞ্চি পর্দার ফিচার ফোনটি দুটি সংস্করণে এসেছে। এই ফোনে রয়েছে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। দুটি মাইক্রোসিম নেওয়া যাবে। চাইলে এই ফোনে ৩২ গিগাবাইটের এসডি কার্ড যোগ করা যাবে। এফএম রেডিও, ক্যামেরা, ব্লুটুথ ফিচার রয়েছে। দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
ডিগো
বাংলাদেশের স্থানীয় নতুন মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড ডিগো মোবাইল এসওএস পি২৪১ মডেলের ইমার্জেন্সি ফোন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ৭ হাজার ৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ক্ষমতার ব্যাটারির ফোনটির নাম দেওয়া হয়েছে পাওয়ার হাউস। দেশের সবচেয়ে বেশি মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির ফোনটি এক চার্জেই চলবে ২৯ দিন এবং এই ফোন থেকে একসঙ্গে তিনটি ফোনে চার্জ দেওয়া যাবে। অর্থাৎ এটি পাওয়ার ব্যাংক হিসেবেও কাজ করে। এই ফোনটির ব্যাটারিও আলাদাভাবে পাওয়ার ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, ফলে ভ্রমণপিপাসুরা লম্বা সফরে এই ফোনটি সঙ্গে নিতে পারেন।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ফোনটি ব্যাকআপ ফোন এবং পাওয়ার ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। জরুরি প্রয়োজনে ফোনটির এসওএস ফিচারের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত পাঁচজন ব্যক্তির কাছে স্বয়ংক্রিয় ফোন ও এসএমএস চলে যাবে। বিপদে পড়লে তীব্র আওয়াজের প্যানিক অ্যালার্ম ব্যবহার করে সাহায্য নেওয়া যাবে। বয়স্করা এসব সেবা ব্যবহার করে সহায়তা নিতে পারবেন। ওয়্যারলেস এফএম রেডিও এবং বক্স স্পিকারের কারণে সংগীতপ্রেমীরা নির্ঝঞ্ঝাট গান শুনতে পারবেন হেডফোন ছাড়াই।
দুই সিম সুবিধার এই ডিভাইসটিতে রয়েছে ২.৪ ইঞ্চি ডিসপ্লে ইউনিট, একটি ক্যামেরা, সুপার ব্রাইট টর্চ, জিপিএস, এসওএস, ব্লুটুথ, ওয়্যারলেস এফএম, বক্স স্পিকার ছাড়াও আরও বেশ কিছু উদ্ভাবনী ফিচার। ফোনটির দাম ২ হাজার ৬৯০ টাকা।
এ ছাড়া রাজধানীর মোবাইল বাজারগুলোতে আরও অনেক ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে ওকাপিয়া, জিওক্স, আইটেল, অ্যালকাটেলসহ নানা ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন।