সবার হাতেই স্মার্টফোন চলে এসেছে? ভুল ভাবছেন। আসলে স্মার্টফোনের বাজারের অবস্থা এখন খুব বেশি ভালো নয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছরের চতুর্থ প্রান্তিক অর্থাৎ, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে স্মার্টফোনের বিক্রি ভালো নয়। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেও স্মার্টফোনের বাজারে নেতিবাচক ধারা ছিল। সে তুলনায় ফিচার ফোন বা বার ফোনের বাজার এখনো রমরমা। বিশেষ করে ফিনল্যান্ডের নকিয়া ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন বাজারে আসার পর থেকে ফিচার ফোনের বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে ভালো করছে চীনের আইটেল ব্র্যান্ড।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের দাবি, বছরের তৃতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফিচার ফোন মোবাইল ফোন বাজারের ২৩ শতাংশ দখল করেছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ প্রান্তিক ধরেই ফিচার ফোন বাজারে আসার ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের বিশ্লেষক বরুণ মিশ্রর মতে, বাজারে নকিয়া ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন এনেছে এইচএমডি গ্লোবাল। তারা ফিচার ফোনের বাজারে চাহিদা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে নকিয়ার ৩৩১০ মডেলটি ফিরিয়ে আনার পর তা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।
বরুণ মিশ্র এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, বিশ্বজুড়ে বৃহত্তম ফিচার ফোন ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে আইটেল। আফ্রিকার বাজারে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এটি। স্থানীয়ভাবে পণ্য তৈরির কারণে আইটেল ফিচার ফোনের বাজারে শীর্ষে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের বাজারে আইটেল ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি করছে ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেড। ইতিমধ্যে তারা স্থানীয়ভাবে আইটেল মোবাইল তৈরির লক্ষ্যে দেশে মোবাইল ফোন সংযোজন কারাখানাও করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের বাজারে ফিচার ফোনের চাহিদা বাড়ছে। আগামী বছরেও তাদের ফোনের চাহিদা আরও বাড়বে। তাই গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে স্থানীয়ভাবে ফোন তৈরি করা হচ্ছে। দেশে সংযোজন করার সাশ্রয়ী দামে গ্রাহকের হাতে পণ্য তুলে দেওয়া যায়।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বাজার ফিচার ফোনের চাহিদা কিছুটা কমলেও মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজারে ৩২ শতাংশ চাহিদা বেড়েছে। তাই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা এখন ফিচার ফোনের বড় বাজার।
আফ্রিকা, ভারত ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোবাইল ফোন কেনার আগে ক্রেতা ব্যাটারিতে কতক্ষণ চার্জ থাকবে সে বিষয়টি বিবেচনা করেন। সাধারণত স্মার্টফোনের চাইতে ফিচার ফোনে চার্জ বেশিক্ষণ থাকে বলে মনে করেন অনেকেই।
কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকেই স্মার্টফোনের পাশাপাশি এখন দ্বিতীয় ফোন হিসেবে একটি ফিচার ফোন রাখেন। এ ফোন ব্যবহার করে অনেকের কাছে কল দেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাটারির চার্জ যাতে বেশিক্ষণ থাকে, সে বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
বাজারে এখন ফোরজি নেটওয়ার্ক সমর্থিত ফিচার ফোন চলে এসেছে। এসব ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সুবিধা পাওয়া যায়। বেসিক বা ফিচার ফোনে এ ধরনের সুবিধা থাকায় এবং দামের দিক থেকে সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় ফিচার ফোনে আগ্রহ বাড়ছে।
বিশ্লেষক মিশ্র বলেন, স্মার্টফোনের মতোই ফিচার ফোনের বিবর্তন দেখা যাচ্ছে। টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি ফোন এখন চলে এসেছে। এ ছাড়া অ্যাপ্লিকেশন সুবিধাও থাকছে। এ কারণে স্মার্টফোনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ফিচার ফোন।
ফিচার ফোনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা বিবেচনা করলে আগামী পাঁচ বছর ধরে ফিচার ফোনের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। কম আয়ের মানুষগুলো মোবাইল ফোনের অভিজ্ঞতা নিতে বা প্রথমবারের মতো ফোন কেনার আগ্রহ থেকে অনেকেই ফিচার ফোনের দিকে ঝুঁকে পড়বে।