গুগল ক্রোম ব্রাউজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে আবার উঠেপড়ে লেগেছে মজিলা। গতকাল মঙ্গলবার ফায়ারফক্স ব্রাউজারের নতুন সংস্করণ ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম উন্মুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যাঁরা ফায়ারফক্স ছেড়ে গুগলের ক্রোম ব্যবহার শুরু করেছেন, তাঁদের আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতেই ব্রাউজারটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে মজিলা।
ওপেন সোর্স বা উন্মুক্ত ব্রাউজারটির ৫৭তম সংস্করণটি আগের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করে। গত মার্চ মাসে উন্মুক্ত হওয়া ফায়ারফক্স ৫২তম সংস্করণটির চেয়ে ৫৭তম সংস্করণটির গতি দ্বিগুণ বেড়েছে। স্পিডোমিটার ২.০ বেঞ্চমার্ক সফটওয়্যারে গতি পরীক্ষা করে এ ফল পাওয়া গেছে।
এর আগে অনেক দিন গুগল ও মজিলার মধ্যে ব্রাউজারের পারফরমেন্স নিয়ে লড়াই চলেছে। কিন্তু পারফরম্যান্সের বিচারে অনেকেই ফায়ারফক্স ছেড়ে ক্রোম ব্যবহার শুরু করেছেন। ফায়ারফক্সের নতুন সংস্করণটি গুগল ক্রোমকে টেক্কা দেবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের বিশ্লেষক ডেভিড স্মিথ বলেন, মজিলার লক্ষ্য হচ্ছে ওয়েবকে সবার জন্য উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক রাখা। ফায়ারফক্স এর উদাহরণ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একাধিক আধুনিক ব্রাউজার ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডেভিড।
২০০৪ সালে ফায়ারফক্স ১.০ উন্মুক্ত করে মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারের আধিপত্যে হানা দেয় মজিলা। তবে এরপর থেকে মজিলার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। বর্তমানে গুগলের ক্রোম ব্রাউজার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। ফোন ও ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে মজিলাকে একেবারেই সরিয়ে দিয়েছে গুগল। ক্রোমের সঙ্গে টক্কর দিতে গত এক বছর ধরে ফায়ারফক্স কোয়ান্টাম নিয়ে কাজ করছে মজিলা।
মজিলার ফায়ারফক্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক মায়ো বলেন, ‘আমরা আমাদের টেনে ওপরে তুলেছি এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্রোমকে ছাড়িয়ে গেছি। এ বছর ফায়ারফক্সের পারফরম্যান্স দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮ সালে এর চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে চলবে ফায়ারফক্স।’
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফায়ারফক্সের গতি বাড়লেও মানুষকে ব্রাউজার বদলাতে রাজি করানো কঠিন হবে। বর্তমানে ব্রাউজার ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে ক্রোম। ৫৫ শতাংশ ব্যবহারকারী ক্রোম ব্যবহার করছেন। ১৫ শতাংশ ব্যবহার করছেন অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজার। ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী ফায়ারফক্স ব্যবহার করছেন। এখন ফায়ারফক্স ব্যবহারকারীদের নতুন সংস্করণটি হালনাগাদ করার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।
মজিলা কর্তৃপক্ষ কিছুটা আশাবাদী। কারণ ফায়ারফক্সের ডেভেলপার সংস্করণটি গত সেপ্টেম্বরে উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে ব্যবহারকারী দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে ফায়ারফক্স ব্যবহারকারী বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি ব্যবহারকারী ফায়ারফক্স ব্যবহার করছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, ফায়ারফক্স ব্রাউজারে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে মজিলা। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি অঞ্চলের জন্য ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ইয়াহুর পরিবর্তে অ্যালফাবেটের গুগলকে ঠিক করেছে মজিলা। এতে ভেরাইজন কমিউনিকেশনের ইয়াহুর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করল প্রতিষ্ঠানটি। গুগল কর্তৃপক্ষ মজিলার সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, হংকং, তাইওয়ানের ডেস্কটপ ও মোবাইলে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলকে রাখছে মজিলা।
মজিলার প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা ডেনেলি ডিক্সন বলেন, ‘আমাদের ব্র্যান্ডের জন্য কোনটি ভালো কাজ করবে, কিসে উন্নত ওয়েব সার্চ সেবা দেওয়া যবে প্রভৃতি বিষয়সহ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওথ ও ভেরাইজনের সঙ্গে আমাদের সার্চের বাইরে পৃথক বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
ইয়াহুকে কিনে নেওয়া ভেরাইজনের ওথ ইউনিটের মুখপাত্র চার্লস স্টুয়ার্ট বলেন, ‘মজিলার ভিন্ন পথ বেছে নেওয়াতে আমরা আশ্চর্য হয়েছে। চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম।’
মজিলা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের নতুন ব্রাউজারটি এখন গুগল ক্রোমের চেয়ে ৩০ শতাংশ হালকা এবং কম্পিউটারে কম শক্তি খরচ করে।
২০১৪ সাল পর্যন্ত ফায়ারফক্সে ডিফল্ট সার্চ হিসেবে ছিল গুগল। এরপর থেকে গুগলকে শুধু ইউরোপে ডিফল্ট সার্চ হিসেবে রাখলেও অন্যান্য অঞ্চলে ইয়াহু, ইয়ানডেস্ক ও বাইদুকে ব্যবহার করে ফায়ারফক্স। ২০১৪ সালে মজিলার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেন ইয়াহুর সাবেক প্রধান নির্বাহী মারিসা মেয়ার। এরপর থেকে গুগল ও মজিলার টক্কর দেওয়া শুরু হয়। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মজিলার ব্যবহার বেড়ে ৬০ শতাংশ হয়েছে। মজিলা, অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের ব্রাউজার পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে।
২০১৫ সালে ইয়াহু কর্তৃপক্ষ মজিলাকে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দেয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত মজিলাকে বছরে সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা ছিল। ইয়াহু ও গুগল কর্তৃপক্ষ সার্চ ফলাফল দেখানো, বিজ্ঞাপন বিক্রি ও মূল্যবান ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে। গুগল কর্তৃপক্ষ মজিলাকে কত অর্থ দেবে, সে বিষয়টি এখনো জানা যায়নি। তথ্যসূত্র: রয়টার্স।