বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেছেন, শুধু রেমিট্যান্স ও পোশাকশিল্প দিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া যাবে না। এর জন্য দরকার প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি করা ও শিক্ষার্থীদের সে অনুযায়ী তৈরি করা। তবে শুধু প্রোগ্রামিং শেখা নয়, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের কৌশল শেখানোও দরকার।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের নিরালা কক্ষে গতকাল রোববার সকালে এক মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক কায়কোবাদ এসব কথা বলেন। দেশের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করতে এবং দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০১৯ (আইএসসিপিসি)। সে লক্ষ্যেই এই মতবিনিময় সভার আয়োজন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিংসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে, এমন দক্ষ মানুষ আমাদের প্রয়োজন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস, চালকহীন গাড়ি, থ্রিডি পেইন্টিং—এগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ। এসবের জন্য প্রস্তুতি এখনই দরকার। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে দক্ষ হতে পারে, সে জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।’
প্রোগ্রামিংয়ে ভালো করতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের দরকার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস বিভাগের চেয়ারম্যান লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, বছরজুড়ে শিশু ও মেন্টরদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দরকার। এর অভাব কমাতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগগুলো।
বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল রহমান বলেন, প্রোগ্রামিংয়ে ভালো করতে হলে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণমূলক দক্ষতায় জোর দিতে হবে। প্রোগ্রামিং মানে শুধু প্রোগ্রামিং ভাষা জানা নয় বা প্রোগ্রামিং বানাতে পারা নয়। এর পাশাপাশি প্রোগ্রামিংয়ের সমস্যাগুলোর সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্টের এশিয়া অঞ্চলের বিচারক ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাহরিয়ার মনজুর বলেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের এই প্রতিযোগিতায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইন ভার্সনেও এই প্রতিযোগিতার কনটেন্টগুলো রাখতে হবে।
সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান। উপস্থাপনায় তিনি জানান, গতবার ৬০টি স্কুল দিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। এবার ১০০টি স্কুল নিয়ে শুরু হবে। এবার সিলেট ও চট্টগ্রামে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা হবে। সঙ্গে থাকছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ।
এবারের আয়োজনে থাকছে একাধিক পর্ব—স্কুল অ্যাক্টিভেশন, আঞ্চলিক কর্মশালা, অনলাইন ও অফলাইন প্রতিযোগিতা, বাছাই প্রতিযোগিতা, চূড়ান্ত পর্ব এবং বিজয়ী দলের জন্য প্রোগ্রামিং ক্যাম্প। ফলাফলের ভিত্তিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঁচটি বিদ্যালয়কে দেওয়া হবে তিনটি করে ল্যাপটপ। অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকায় চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সব সময় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কথা ভাবি। সে লক্ষ্যে এবারের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাটি গতবারের চেয়ে আরও বড়, ফলপ্রসূ ও প্রস্তুতিমূলক করার চেষ্টা থাকবে আমাদের।’
অনুষ্ঠান শেষে গতবার আন্তপ্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে তিনটি করে ল্যাপটপ তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো গাজীপুরের মাওনা উচ্চবিদ্যালয়, ময়মনসিংহের হাতেম তাই উচ্চবিদ্যালয়, পাবনার ভাঙ্গুরা জরিনা রহিম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শরীয়তপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. হুমায়ুন কবির উচ্চবিদ্যালয় ও দিনাজপুরের বিরল আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের অধ্যাপক বিলকিস জামাল ফেরদৌসী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাদিয়া হামিদ কাজী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী, বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মো. জাবেদুর রহমান, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের মহাসচিব মো. ইমদাদুল হক, স্কাইলার্ক সফটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী বি এম শরীফ, টাফডটকোর প্রধান নির্বাহী মাহমুদ রেদওয়ান, আইসিপিসি-২০১৮-এর বিচারক তাহমিদ রাফি, আইসিপিসি-২০১৮-এর ব্রোঞ্জ পদকজয়ী রেজওয়ান আরেফিন, এশিয়া আইসিপিসির রানারআপ রেদওয়ান মাহমুদ।