চলতি ধারা

প্রাইম ব্যাংকের ভার্চ্যুয়াল ব্যাংক

কেউ সারা দিন অফিস করে বিকেলে লেনদেন করতে চাইল। কিন্তু ‘ব্যাংকিং আওয়ার’ শেষ হওয়ায় তা করার সুযোগ নেই। এখন চাইলেই ২৪ ঘণ্টা অ্যাকাউন্ট খুলতে ও লেনদেন করতে পারবেন। ‘একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ‘প্রাইম ডিজি’ নামে একটি ডিজিটাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। এর মাধ্যমে যেকোনো সময় ব্যাংকের কাজ সারা যাবে।

ব্যাংকে না এসে ব্যাংকিং

ডিজিটাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট প্রাইম ডিজির সবচেয়ে বড় দিক হলো অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং পরিচালনা করতে কাস্টমারের ব্যাংকে আসার প্রয়োজন নেই। গ্রাহক নিজের ফোন বা কম্পিউটার থেকে প্রাইম ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে গিয়ে হিসাব খুলতে পারবেন। সব তথ্যই অনলাইনে পূরণ করার সুযোগ রয়েছে এতে। প্রাইম ডিজিতে এসএমএস ব্যাংকিং, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড সুবিধাও রয়েছে।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাহেল আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা অনেক ব্যস্ত থাকেন, ব্যাংকে আসার সময় পান না। তাঁদের কথা চিন্তা করে এটা করা হয়েছে। কারও ব্যাংকিং করার সময় আছে কিন্তু ব্যাংকিং আওয়ার শেষ, তখন গ্রাহক এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যাংকের সব ধরনের সুবিধা নিতে পারবেন।’

৭ দিন ২৪ ঘণ্টা

সপ্তাহে ৭ দিন ২৮ ঘণ্টা প্রাইম ডিজি অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। রাহেল আহমেদ জানান, ডিজিটাল সেভিংস অ্যাকাউন্টের মূল বিষয়টা হচ্ছে গ্রাহককে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে, সেটি পরিচালনার জন্য কিংবা লেনদেনের জন্য কখনোই ব্যাংকের শাখায় আসতে হবে না। তবে কেউ যদি বৃহস্পতিবার রাতে হিসাব খোলার জন্য আবেদন করেন, সেটা রোববার চালু হবে। কিন্তু আবেদনটা ৭ দিন ২৪ ঘণ্টাই করতে পারবেন।’

প্রাইম ডিজি পুরোটাই ডিজিটাল। সঞ্চয়ী হিসাবের সব কাজ করা ছাড়াও যেকোনো জায়গায় বসে অন্য ব্যাংকের পেমেন্টও করা সম্ভব। ওয়াসা বিল, গ্যাসের বিল, পানির বিল দেওয়া সম্ভব। এটায় সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে

অনলাইনের সব মাধ্যমেই এটা করা যাবে। নির্দিষ্ট কোনো অ্যাপ লাগবে না। রাহেল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রাইম ব্যাংকের যে অ্যাপ আছে, কাস্টমাররা সেই অ্যাপের মাধ্যমে এটা ব্যবহার করতে পারবেন। আর যাঁদের অ্যাপ নেই, তাঁরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেও সুবিধা নিতে পারবেন।’

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের কনজ্যুমার ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এ এন এস মাহফুজ বলেন, গ্রাহকেরা কোথাও না কোথাও ব্যাংকে এসে ব্যাংকিং করছেন। তাঁরা হয়তো বেতন পাচ্ছেন, আজকাল ওয়েবসাইটে কাজ করে বিদেশ থেকে টাকা আসছে। আমরা তাঁদেরকে বলছি এই লেনদেনটা ব্যাংক টু ব্যাংক হোক। এটা না হলে তাঁকে তো আবার নগদ টাকা জমা দিতে ব্যাংকে আসতে হবে।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘লেনদেন অনলাইনে করেন আর অফলাইনে শাখায় এসে করেন না কেন, গ্রাহকদের সব তথ্য আমাদের কম্পিউটারে রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডসহ অন্যান্য সেবার জন্য আমাদের প্রতিটি জিনিস শতভাগ নিরাপদ। তেমনি প্রাইম ডিজি শতভাগ নিরাপদ। আজকের তারিখের বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ব্যাংকিং নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার আমরা ব্যবহার করছি।’

কোনো টাকা লাগবে না

একটা সঞ্চয়ী হিসাবের যা যা সুবিধা, সব প্রাইম ডিজিতে পাওয়া যাবে। এই অ্যাকাউন্টের জন্য কোনো চার্জ নেই। যেমন ডেবিট কার্ড নেওয়ার জন্য বছরে একটা ফি থাকে, সেটাও দিতে হবে না। ইন্টারনেট ব্যাংকি, এসএমএস সুবিধাও পাওয়া যাবে। হিসাব খোলার জন্যও কোনো টাকা লাগবে না। শূন্য টাকায় প্রাইম ডিজি অ্যাকাউন্টটা খোলা যাবে।

ডিজিটাল হিসাব খুলতে যা লাগবে

সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে যা যা দরকার হয়, এখানেও তাই লাগবে। এক কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, অ্যাকাউন্টের নমিনির এক কপি ছবি আর স্বাক্ষর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নীতিমালা মেনে প্রাইম ডিজি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ এন এস মাহফুজ বলেন, ‘হিসাব খোলার তথ্যের বিষয় আমাদের কোনো ছাড় নেই। ডিজিটালি অ্যাকাউন্ট করা গেলেও আমরা সব কাগজপত্র পরীক্ষা করব।’

সারা বিশ্বই ব্যাংক

রাহেল আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের জীবনধারাটা আলাদা। তাঁদেরকে ব্যাংকের শাখায় আনার সময় শেষ। অনলাইনে তরুণেরা স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তাই প্রাইম ডিজি। এটা হবে আমাদের চ্যালেঞ্জের ব্যাংকিং। আমাদের এত বছরের পুরোনো ব্যাংকিং অনলাইনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। ব্যাংক হবে এখন ভার্চ্যুয়াল। পুরো পৃথিবীই এখন আপনার ব্যাংক। প্রাইম ডিজির মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল ব্যাংক আপনাকে অফার করছে। ভার্চ্যুয়াল ব্যাংক হওয়ার ফলে আমাদের খরচ কমে যাবে। তাই ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের আরও বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে। ফলে গ্রাহকেরা টাকা জমা রাখলে আরও বেশি ইন্টারেস্ট পাবেন। ব্যাংকিংটা আমরা সহজ করে দিচ্ছি। গ্রাহকদের দরজার কাছে আমরা চলে যাচ্ছি।

এক সপ্তাহে ৫০০ হিসাব

৩১ জানুয়ারি চালু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভালো সাড়া পেয়েছে প্রাইম ডিজি। এক সপ্তাহে ৫০০–এর বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তরুণ পেশাজীবী, শিক্ষার্থী ও গৃহিণীরাও হিসাব খুলেছেন।