করোনা মহামারির মধ্যেও পিসির বাজারে চাঙাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
করোনা মহামারির মধ্যেও পিসির বাজারে চাঙাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।

পিসির বাজারে এগিয়ে কারা?

করোনা পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক পারসোনাল কম্পিউটার বা পিসির বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক নোটবুক পিসির বাজারে গত বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক—উভয় ক্ষেত্রেই পিসি বিক্রির ক্ষেত্রে ফলাফল ইতিবাচক দেখা গেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম তরঙ্গের সময় অফিসের কাজ চালিয়ে নিতে ও স্কুলের পড়াশোনার জন্য অনেকেই নোটবুক পিসি কিনেছেন।

স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নোটবুক পিসির বাজারে শীর্ষে রয়েছে লেনোভো। গত প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৩৬ লাখ ইউনিট পিসি বিক্রি করেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরে প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ এবং পিসি বাজারে আনার হার বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

লেনোভোর পর নোটবুক পিসির বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এইচপি। প্রান্তিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে এইচপি। শীর্ষ পাঁচ নোটবুক পিসি প্রস্তুতকারকের মধ্যে এইচপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ। বাজারে পিসি আনার দিক থেকেও লেনোভোর সঙ্গে সমান টক্কর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পিসি বিক্রিতে গত প্রান্তিকে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এইচপির।

পিসির বাজারে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে ডেল ও অ্যাপল। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় ডেল ৮৪ লাখ ইউনিট পিসি বাজারে ছেড়েছে আর অ্যাপল ছেড়েছে ৪৬ লাখ ইউনিট পিসি।

বৈশ্বিক পিসির বাজারে পঞ্চম স্থানটি দখলে রেখেছে এসার। পিসির বাজারে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এসার। গত প্রান্তিকে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাংশ।

স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক চিরাগ উপাধ্যায় বলেন, পিসি প্রস্তুতকারকদের সফলতার মূল কারণ হচ্ছে সরবরাহ শৃঙ্খলে চাহিদা বাড়ার বিষয়টি। এ জন্য তারা চ্যানেল ও খুচরা বিক্রির সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করেছে। বিশ্বের বেশির ভাগ শহরে গত মার্চে লকডাউনের কারণে পিসির চাহিদা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে ভয়ে আগাম পণ্য কিনে রাখেন। তবে শুরুতে অতিরিক্ত চাহিদা থাকলেও পিসি বিক্রেতারা ধীরে ধীরে বাজার চাহিদা মেটাতে শুরু করেন।

চিরাগ বলেন, করোনার কারণে আর্থিক সংকট ও মন্দার একটা ঝুঁকি পিসির বাজারে থেকেই যাচ্ছে। এখনো অনেক দেশ করোনা সংক্রমণের প্রথম তরঙ্গ মোকাবিলা করছে। জাপান, হংকং ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যদি সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়, তবে পিসির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

গত জুলাইয়ে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ও আইডিসি জানায়, করোনা মহামারি বিস্তৃত হওয়ার আগে টানা দুই প্রান্তিক ধরে কমছিল বৈশ্বিক পিসির বাজার। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে পিসি নির্মাতাদের মুখে হাসি ফেরে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় পিসির বাজার এ বছর ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।

গার্টনার ও আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে পিসির বাজারের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে লেনোভো। গত বছরের তুলনায় তাদের পিসি বিক্রির হারও বেড়েছে।

গার্টনারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট ৬ কোটি ৩০ লাখ ইউনিট পিসি বাজারে এসেছে। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাজারে এসেছিল ৬ কোটি ২০ লাখ ইউনিট। আইডিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬ কোটি ১৯ লাখ পিসি বাজারে এসেছিল, যা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৯ লাখ ইউনিট।

গার্টনার বলছে, পিসির বাজারের শীর্ষ তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে লেনোভো, এইচপি ও ডেল। এ তিন প্রতিষ্ঠান মিলে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট পিসি বাজারের ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ দখল দিয়েছে, যা গত বছর ছিল ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ। আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, এ তিন প্রতিষ্ঠান মিলে বাজারের ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ দখল নিয়েছে, যা গত বছর ছিল ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

গার্টনারের জ্যেষ্ঠ প্রধান বিশ্লেষক মিকাকো কিতাগাওয়া বলেন, বিজনেস মার্কেটে উইন্ডোজ ১০ নতুন করে ব্যবহার শুরু হওয়ায় পিসির শিপমেন্ট বেড়েছে। এর মধ্যে ডেস্কটপ পিসির প্রবৃদ্ধি ছিল বেশি। এ ছাড়া গত প্রান্তিকে ইনটেলের প্রসেসরের সরবরাহ ছিল ভালো। এতে পিসি নির্মাতারা বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পেরেছে।