পিকস আর্টের জাদু

স্মার্টফোনে আসা নানা রকম বিজ্ঞাপনে ‘পিকস আর্ট’ নামটি শুনেছি। কাজটা কী, তা–ও একটু–আধটু জানি। কিন্তু ছবি ও ভিডিও সম্পাদনার এই অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ যে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় একটা ‘ফ্যাক্টর’, তা বোঝা গেল আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলন ডব্লিউসিআইটি–২০১৯ আয়োজনে।

ইয়েরেভানের কারে ডারমিচিয়েন কমপ্লেক্সে ৬ থেকে ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ডব্লিউসিআইটির একটি অংশ ছিল প্রদর্শনী। দূর থেকেই নজর কাড়ে পিকস আর্টের বুথটি। একবার মনে হলো কোনো একটি টেলিভিশনের স্টুডিও, আবার মনে হলো বিশাল পর্দায় সিনেমা দেখানো হচ্ছে সেখানে। চোখধাঁধানো আলোতে উজ্জ্বল এক উপস্থিতি। বলে রাখা ভালো, এই সম্মেলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকও এই পিকস আর্ট।

দূর থেকেই চোখে পড়ল ‘স্টোরিটেলিং স্টার্টস হিয়ার’—গল্প বলার শুরু এখানেই। কাছাকাছি যেতে বুথের কর্মীদের কথাবার্তাও শোনা গেল। ‘বিগেস্ট’ শব্দটা কানে এল কয়েকবার। পিকস আর্টের এক আর্মেনীয় কর্মীর সামনে দাঁড়াতে হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিতে দিতে জানালেন, ফটো আর ভিডিও সম্পাদনার অ্যাপগুলোর মধ্যে পিকস আর্ট সবচেয়ে বেশিবার নামানো হয়েছে (ডাউনলোড)। কোন দেশের কোম্পানি এটা? ‘আর্মেনিয়ার’। আদতে পিকস আর্ট এখন গোটা দুনিয়াতেই সফল এক স্টার্টআপ, মানে উদ্ভাবনী উদ্যোগ। 

ছবিতে এমন আবহ তৈরি করা যায় পিকস আর্ট ব্যবহার করে

অনলাইন এখন নিজেকে প্রকাশের সবচেয়ে বড় জায়গা। নিজেকে কি আর সাদামাটাভাবে প্রকাশ করা যায়? স্মার্টফোনে এক, দুই, তিন করে পাঁচটি ক্যামেরাও যোগ হয়েছে। তাতেও সাধ মেটে না। ছবি কিংবা ভিডিওর সঙ্গে নানা আবহ যোগ করে তা পোস্ট করতে চায় তরুণ প্রজন্ম। নিজের গল্প বলতে চায় বর্ণিল ঢঙে। এ জায়গাটাই ধরতে চেয়েছে পিকস আর্ট। আর তা পেরেছে ভালোভাবেই।

তরুণদের মন যে বেশ জয় করেছে পিকস আর্ট, তা বোঝা যায় তাদের পরিসংখ্যানে। এই অ্যাপ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ছয় শর বেশি ছবি সম্পাদনা করা হয়। প্রতি মাসে সক্রিয় ব্যবহারকারী ১৩ কোটির বেশি। পিকস অ্যাপ নামানো হয়েছে ৬০ কোটিবারের বেশি। প্রতি মাসে এই অ্যাপ দিয়ে তৈরি হয় ১০০ কোটি ছবি। ভাবা যায়! তাই তো ‘বিগেস্ট’ শব্দটা বারবার শোনা যায় পিকস আর্টের কর্মীদের মুখে। 

ভিডিওতে বিশেষ আবহ

পিকস আর্ট ফটো এডিটর দিয়ে ছবি ও ভিডিও দুটিই সম্পাদনা করা যায়। অ্যাপটি কাজ করে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস আর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত স্মার্টফোন ও অন্য যন্ত্রপাতিতে। অ্যাপটিকে বলা হয়েছে অল–ইন–ওয়ান এডিটর। ছবি সম্পাদনার টুল আছে ৩০০–এর বেশি। রং ইচ্ছেমতো বদলানো, ছবির সঙ্গে আউটলাইন তৈরি, ইচ্ছেমতো পটভূমি যোগ করা, একটার সঙ্গে আরেকটি ছবি মিশিয়ে দেওয়া—কী করা যায় না!

ভিডিওতেও একই রকম সুবিধা। বড় সুবিধা হলো পিকস আর্টে তৈরি ছবিগুলো বেশ হালকা। ফলে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সব মাধ্যমে দ্রুতই আপলোড করা যায়। নিজের বা নিজেদের কোনো এক ঘটনা, তা হতে পারে বন্ধুদের আড্ডা, কিংবা সমুদ্রস্নান—সবকিছুর ছবি বা ভিডিও এমনভাবে এটাতে তৈরি করা যায়, যাতে সেই ছবি বা ভিডিও নিজেই একটা গল্প হয়ে ওঠে।

পিকস আর্ট ফটো এডিটরের নির্মাতা পিকস আর্ট ফটো স্টুডিও। এর সদর দপ্তর আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানে। আরও অফিস আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, চীনের বেইজিং, জাপানের টোকিও ও রাশিয়ার মস্কোতে। প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০১২ সালে। পিকস আর্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোভানেস অ্যাভোয়েনের কথা শুনতে পেরেছিলাম ডব্লিউসিআইটির একটি অধিবেশনে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই “আইডিয়া” বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। নতুন কিছু করতে চেয়েছিলাম। কষ্ট হয়েছে। তবে মানুষ যাতে তাদের জীবনের গল্প বর্ণিল করে তুলে ধরতে পারে, সেটা ছিল পিকস আর্টের উদ্দেশ্য। সেটা মনে হয় সফল হয়েছে।’

হোভানেসের কথা যে ঠিক, তা তো পরিসংখ্যানই বলে দেয়। পিকস আর্টের সঙ্গে কাজ করেন টেইলর সুইফট, কিম কার্ডাশিয়ান, জিউন স্টেফানি, উইল স্মিথ, দি জোনাস ব্রাদার্সের মতো তারকারা। আরও আছে মেরুন ৫, এমটিভি, ডিওর, সোওরাভস্কির মতো ব্র্যান্ড। 

পিকস আর্টের ওয়েব ঠিকানা: www.picsart.com