এত দিন পাঠাও অ্যাপ ব্যবহার করে অনেকেই মোটরসাইকেল সেবা নিয়েছেন। এবারে ওই অ্যাপ থেকেই গাড়ি ডাকা যাবে। ১ নভেম্বর থেকে রাজধানীতে পাঠাও কার সেবা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পাঠাও কার সেবা সম্পর্কে জানান পাঠাও রাইডসের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশোয়ার আহমেদ।
ঢাকায় পাঠাও কারস অ্যাপ কেন উন্মোচন করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে কিশোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা পাঠাওয়ের গাড়ি চালাবেন, তাঁদের আমরা ক্যাপ্টেন বলব। পাঠাও কারসের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে মোবিলিটির মাধ্যমে আমাদের ক্যাপ্টেনদের জন্য বাড়তি আয়ের একটি সুযোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া দেশব্যাপী প্রসার ও আরও মানুষের কাছাকাছি যেতেই পাঠাও কারস চালু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এটি চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে ঢাকাতেও এটি চালু হয়েছে।’
কিশোয়ার জানান, ২০১৫ সালে সাইকেলের মাধ্যমে পাঠাও নিজেদের যাত্রা শুরু করে। ই-কমার্স পণ্য সরবরাহের জন্য সেবাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখনো পাঠাওয়ের ওই সেবা চালু আছে। ২০১৬ সালে সহজে এবং কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে রাইড শেয়ার প্ল্যাটফর্ম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় পাঠাও। অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীসেবা দেওয়া এবং আয়ের সুযোগ করে দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পাঠাও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রাজধানীতে এখন এক হাজারের বেশি পাঠাও চালক আছেন। শিগগিরই গাড়ির ক্ষেত্রেও এ সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
পাঠাও অ্যাপ সম্পর্কে এর বিপণন ব্যবস্থাপক নাবিলা মাহবুব জানান, পাঠাওয়ের দুটি অ্যাপ রয়েছে। একটি ব্যবহারকারীদের জন্য, অন্যটি মোটরসাইকেল চালকদের জন্য। যাত্রীদের জন্য তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীরা সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেল জন্য অনুরোধ করতে পারেন। যাত্রীর মোবাইলের জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবস্থান শনাক্ত করে অ্যাপটি তার কাছে থাকা রাইডার বা বাইকারের তথ্য প্রদান করে। ওই চালকবের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাত্রী তাঁর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। অন্য অ্যাপটি ড্রাইভার অ্যাপ নামেই পরিচিত, যা পাঠাও রাইডার বা পাঠাও ক্যাপটেনদের জন্য। একইভাবে মোবাইলের জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে লোকেশন শনাক্ত করে এই অ্যাপ।
পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী হুসেইন মো. ইলিয়াস জানান, দেশে এক বছর পূর্ণ করে ফেলল পাঠাও। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ছোট একটি কলসেন্টার থেকে পাঠাওয়ের যাত্রা শুরু হয়। এখন বর্তমানে ২০০ জনের বেশি কর্মী আছে প্রতিষ্ঠানটিতে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দৈনিক ঢাকায় গড়ে একটি দূরত্বে ১৩০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পান চালক। প্রতিদিন ঢাকায় এক হাজার যাত্রীর গড়ে ১৫ মিনিট করে সময় সাশ্রয় করে পাঠাও। বর্তমানে ৯০ শতাংশ পাঠাও ব্যবহারকারী ঢাকাভিত্তিক। চট্টগ্রামেও অ্যাপটি জনপ্রিয়।
নারী চালক বা যাত্রী সম্পর্কে নাবিলা মাহবুব জানান, পাঠাওয়ের বাইক সেবায় নারী চালক কম। তবে নারী যাত্রী ক্রমে বাড়ছে। গাড়ি সেবা চালু হলে ঢাকার যাত্রীরা আরও সুবিধা পাবেন।
কিশোয়ার জানান, যাঁরা পাঠাও গাড়িচালক বা ক্যাপ্টেন হিসেবে নাম লেখাবেন, তাঁরা সাইনআপ বোনাস হিসেবে অর্থ পাবেন। এ ছাড়া গাড়িভাড়া নির্ধারণ করা থাকবে। বেস বা ভিত্তি ভাড়া ৫০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটার ২০ টাকা। অপেক্ষা চার্জ প্রতি মিনিটে আড়াই টাকা হবে।
বাংলাদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে পাঠাওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিংয়ের বাজার বড় হচ্ছে এবং দুই কোটি মানুষ এ সেবা নিতে আগ্রহী, তাই একাধিক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সেবা দিলে যাত্রীদের সুবিধা। কারণ, এত বড় বাজারে সব প্ল্যাটফর্মের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। প্রতিযোগিতা বাড়লে গ্রাহকেরা কম খরচে উন্নত সেবা পাবেন।