নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্যের উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে সবাই হয়ে উঠছেন এক–একজন ভিডিওগ্রাফার ও সিনেমাটোগ্রাফার। আবার পেশাদারদের জন্যও আরও সহজ এবং নতুন আঙ্গিকে ভিডিও রেকর্ডের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অ্যাকশন ক্যাম
বিভিন্ন ধরনের অ্যাকশন দৃশ্য ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত ও বহুল প্রচলিত খুবই ছোট আকারের কিছু ক্যামেরা রয়েছে, যেগুলো অ্যাকশন ক্যাম নামে পরিচিত। শুধু আকারে ছোট বলেই নয়, যেকোনো ধরনের আবহাওয়ায় এবং পানির নিচে ভিডিও করার জন্যও ব্যবহার করা যায়। আকারে ছোট হলেও অতি উচ্চ মানের ভিডিও রেকর্ডে সক্ষম এই ক্যামেরাগুলো।
গোপ্রো এই ধরনের ক্যামেরা তৈরি ও মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রদূত বলা যেতে পারে। এই ক্যামেরাগুলো বাজারজাত করার পরপরই হলিউডের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতে থাকে। ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে সাধারণের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ক্যামেরার মান উন্নয়ন, সব আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী করা, ইমেজ স্টেবিলাইজেশনের মতো আরও নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য প্রতিটি নতুন সংস্করণেই পাওয়া যাচ্ছে এখন।
শুধু ভিডিও নয়, স্থির ছবি তোলার জন্যও অনন্য এই ক্যামেরাগুলো। এই ক্যামেরাগুলোর জনপ্রিয়তার কারণও এটি আকারে ছোট কিন্তু উচ্চ মানের ভিডিও ধারণ, কিন্তু দাম পেশাদার ক্যামেরাগুলোর তুলনায় খুবই সামান্য।
গোপ্রোর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ব্র্যান্ডের অ্যাকশন ক্যাম রয়েছে, যার মধ্যে Xiaomi এবল Yi ব্র্যান্ডের ক্যামেরাগুলো বেশ জনপ্রিয়।
গিম্বল
ডিএসএলআর বা অ্যাকশন ক্যামগুলোর মাধ্যমে পেশাদার মানের ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। এমনকি কখনো কখনো মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও রেকর্ড করা হলেও সেটি অন্যান্য উচ্চ মানের ভিডিও থেকে আলাদা করার সুযোগ থাকে না। গিম্বলের ব্যবহার এই কাজগুলোকে আরও সহজ করেছে, গিম্বল যে শুধু ছোট আকারের ক্যামেরার সঙ্গে ব্যবহার করা হয় এমন নয়, এগুলো প্রথম তৈরি করা হয়েছিল পেশাদার মানের ক্যামেরার সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য।
গিম্বল হলো এমন একটি যন্ত্র, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা যুক্ত করা যায় এবং ভিডিও ধারণ করার সময় এটি স্বংয়ক্রিয়ভাবে স্থির থাকে। শুধু তা–ই নয়, পেশাদার ভিডিওর বিভিন্ন টেকনিক সহজে ব্যবহার করা যায়। অ্যাকশন ক্যাম, মোবাইল ও ডিএসএলআরের জন্য গিম্বলগুলো আলাদা হয়ে থাকে। আবার ক্যামেরা সংযুক্ত গিম্বলও পাওয়া যায়। ডিজেআই ও ঝিউন গিম্বলগুলো বাজারের অন্যান্য গিম্বল থেকে মান ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে আছে।
সম্প্রতি ডিজেআই অসমো পকেট নামের নতুন একটি ক্যামেরাযুক্ত গিম্বল ছাড়া হয়েছে, যেটি বর্তমান সময়ের সব থেকে ছোট আকারের গিম্বল। পকেটে রাখার মতো আকারের এই গিম্বল অন্যান্য গিম্বলের মতোই কার্যকরী এবং সংযুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমে উচ্চ মানের ভিডিও ধারণ সম্ভব।
ড্রোন
ভিডিও এবং স্থির ছবির মান এই উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে ড্রোন ফটোগ্রাফি। শুধু ছবির মানের দিক থেকেই উচ্চ নয়, বরং ড্রোনের মাধ্যমে ছবি তোলার অর্থই হলো আকাশের ওপরে পাখির চোখে দেখার মতো ছবি। ড্রোনের সাধারণ সংজ্ঞা হলো, মানুষবিহীন আকাশ যান। প্রাথমিকভাবে সামরিক কাজে ব্যবহার শুরু হলেও বর্তমানে সাধারণের ব্যবহারের আওতায় চলে এসেছে। ছোট আকারের উচ্চ মানের ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ দৃশ্যমান কোনের বাইরে অপর এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয়টি সবাই পছন্দ করে।
পেশাদার ও সাধারণ ব্যবহারকারীরদের উপযোগী ড্রোনের ক্ষেত্রে DJI সর্বাধিক জনপ্রিয়। বিভিন্ন দামের এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য–সংবলিত বেশ কিছু মডেলের ড্রোন পাওয়া যাবে এই ব্র্যান্ডের।
সহজলভ্য ও দামও নাগালের মধ্যে হলেও দেশে ড্রোন ওড়ানোর বিশেষ নীতিমালা রয়েছে। শখের বশে ড্রোন কিনে সেটি ব্যবহার করে ভিডিও করতে শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ড্রোন ওড়ানোর ৪৫ দিন আগে অনুমতি নিতে হবে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই–বাছাই করে অনুমতি দেয় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। ৫ পৃষ্ঠার এ আবেদনপত্রে ড্রোনটি কোথায় ওড়ানো হবে, ড্রোনের আকার, কে ওড়াবে, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করতে হয়। তবে ড্রোনের নিবন্ধন এবং এর চালকদের লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, সে ক্ষেত্রে প্রতিবার ওড়ানোর আগে অনুমতির ব্যবস্থাটি শিথিল হতে পারে।