করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত এক বছরে বাংলাদেশে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। এ সময়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক কোটি। তার চেয়ে বেশি বেড়েছে মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী। ইস্টাগ্রাম, লিংকডইনের ব্যবহারও বেড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাটের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইস্টাগ্রাম, লিংকডইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রতি মাসের হিসাব দিয়ে থাকে পোল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাট।
তাদের হিসেবে, এ বছরের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং পুরুষ ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি। তাঁদের সংখ্যা ২ কোটি ১২ লাখ।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার (জনসংখ্যার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সে হিসাবে, গত এক বছরে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৯৭ লাখ ৫৫ হাজার। এ সময় নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে।
করোনার এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশে মেসেঞ্জার ব্যবহার করতেন ৯৩ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। এক বছরে এ সংখ্যা সাড়ে চার গুণ বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষ ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং নারী ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৪০ লাখ ৭১ হাজার, যা জনসংখ্যার মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং নারী ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ। এখানেও ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীর সংখ্যা বেশি, ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিলে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৩০০।
পেশাজীবীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম লিংকডইনের ব্যবহারও বাংলাদেশে বেড়েছে। এ বছরের মে মাস পর্যন্ত লিংকডইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪১ লাখ ১৭ হাজার, যা জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি, ২৪ লাখ। গত বছর এপ্রিলে বাংলাদেশে ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করতেন।
এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণেই দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারও বেড়েছে।
সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সময়টাতে মানুষ আরও বেশি প্রযুক্তিমুখী হয়েছে। মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়েও মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহার করছে এবং সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামের চ্যাটের সঙ্গে মেসেঞ্জার একীভূত হয়েছে।
সুমন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে কত মানুষ, কোথা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার এবং এখানে কী পরিমাণ সময় ব্যয় করেন, তার তথ্য সরকারের টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের কাছে থাকে। তারা কেন্দ্রীয়ভাবে এ তথ্যগুলো জানালে ব্যবসা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও কাজে লাগানো যায়।
নেপোলিয়নক্যাটের এক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামে নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক থেকে দেড় শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, করোনার কারণে এফ কমার্সের প্রসার হয়েছে বেশি। যার বড় অংশের উদ্যোক্তা নারী। শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গাতেই নারীরা এখন অনেক ধরনের অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা বেড়েছে।
তবে এখনো পুরুষ ব্যবহারকারীর তুলনায় নারীর অবস্থান অনেক পিছিয়ে। এ প্রসঙ্গে ফারহানা এ রহমান বলেন, বাংলাদেশে নারীরা সবেচয়ে বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহারের সুযোগও নারীর কম।