আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তরুণ উদ্যোক্তারা একটু একটু করে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেসব প্রতিষ্ঠানে হাজারো তরুণ-তরুণী কাজ করছেন কর্মী হিসেবে। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৫০০ তরুণের কর্মসংস্থান করেছেন এমন তিন তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তার কথা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ফ্লিট বাংলাদেশ
(কর্মীর সংখ্যা ৫০০)
২০১৮ সাল। রাজশাহীতে মাত্র ১০ জন তরুণ নিয়ে যাত্রা শুরু করে খায়রুলের ফ্লিট বাংলাদেশ। এর পর কর্মীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্থায়ী কর্মীর সঙ্গে যুক্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মীও। বর্তমানে খায়রুলের প্রতিষ্ঠানে ৫০০ তরুণ–তরুণী কাজ করছেন।
ফ্লিট বাংলাদেশের মাধ্যমে আমাজন, ওয়ালমার্ট ও ই-বের পাশাপাশি তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকেন খায়রুল আলম। সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন ভেন্ডার ব্যবস্থাপনা, ফুলফিলমেন্ট বাই আমাজন, আমাজন প্রাইভেট লেভেল প্রোডাক্ট, ওয়ালমার্ট স্টোর ব্যবস্থাপনা ও ই-বে স্টোর ব্যবস্থাপনা।
তা ছাড়া ফিনেক্স গ্রুপ, অ্যাশলি ফার্নিচারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরাসরি গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকেন তাঁরা। আর ফ্লিট বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য রয়েছে নিজস্ব ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার। খায়রুলের অনুপ্রেরণায় রাজশাহীতে এখন পাঁচ হাজারের মতো ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন।
প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও),
চালডাল ডটকম (কর্মীর সংখ্যা ৩,৫০০)
আলাপের শুরুতেই জিয়া আশরাফ বলেন, ‘আমার ছোটবেলার বন্ধু ওয়াসিম আলীম বাংলাদেশে পড়াশোনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে একটা “বিলিয়ন ডলার” কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ একদিন জানালেন, দেশের জন্য কিছু করতে চান। নিজেরাই কিছু করা যায় কি না, আমাকে আইডিয়া দিতে বললেন। একসময় ওয়াসিম দেশে এলেন।
আমাদের আরেক বন্ধু তেজশ বিশ্বনাথও যুক্ত হলেন। তিনজনেরই ব্যবসা করার ইচ্ছা। তবে কীভাবে শুরু করব, কী দিয়ে শুরু করব, কিসের ব্যবসা করব—কিছুই ঠিক নেই। আমরা যখন শুরু করলাম, তখন অনলাইন দোকান মানুষের কাছে পরিচিত নয়, তার ওপর বাসার কাছের মুদিদোকান থেকে যে পণ্য পাওয়া যায়, সেটি ঘরে বসে অনলাইনে কেনার কথা তো কেউ চিন্তাই করতে পারতেন না! সবার কাছেই মনে হলো, এটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু আমরা তখন নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। তিন বন্ধু মিলে অনেক পরিকল্পনার পর ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’
২০১৩ সালে বনানীর বাসার পাশে এক দোকান থেকে কিছু মুদিপণ্য বাসায় এনে ছবি তুলে ওয়েবসাইটে দিতে শুরু করলেন জিয়া। এই বছরের ২ জুলাই প্রথম অর্ডার পেলেন। তখন নিজেই সেই পণ্য ডেলিভারি করলেন। এভাবে ধীরে ধীরে গুদাম ভাড়া নিতে হলো। বর্তমানে চালডালের কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট (কর্মীর সংখ্যা ৬২০)
২০০৮ সালে মাত্র ৫ জন কর্মীসহ পথচলা শুরু করেন মো. মনির হোসেন। বর্তমানে গড়ে তুলেছেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট’। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখায় বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ৬২০ জন কর্মী।
পঞ্চগড়ের এই তরুণ পড়াশোনার পাশাপাশি ভেবেছিলেন কর্মসংস্থানের এক নতুন ঠিকানা হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি। আর তাই অন্যদের মতো চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা সরকারি চাকরি কখনো আকৃষ্ট করেনি তাঁকে। এই তরুণ স্বপ্ন দেখেছেন ‘উদ্যোক্তা’ হওয়ার। এ জন্য ছোট পরিসরে প্রায় শূন্য হাতে কয়েকজন তরুণ নিয়ে চালু করেন ‘ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট’।
তখন দেশে ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিংয়ের কাজ সবে গতি পাচ্ছে।অনেকেই ফ্রিল্যান্সার হতে চান। এ ক্ষেত্রের সম্ভাবনা দেখে মনির হোসেন ক্রিয়েটিভ আইটিতে শুরু করলেন গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, অ্যানিমেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ। এখনো নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।