ফেসবুক থেকে যেসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করছিল, সেগুলো পর্যালোচনা করে ২০০ অ্যাপ ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম থেকে বাতিল করা হয়েছে। ফেসবুক থেকে তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’ ঘটার পর অ্যাপ পর্যালোচনার ঘোষণা দেয় ফেসবুক। প্রথম পর্যায়ের পর্যালোচনা শেষে ২০০ অ্যাপ বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুকের প্রোডাক্ট পার্টনারশিপ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমি আর্চিবং বলেন, ‘এসব অ্যাপ ফেসবুকের তথ্যের অপব্যবহার করছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। এ কারণে তাদের ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’
গত ২১ মার্চ ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে থাকা থার্ড পার্টি অ্যাপগুলো তদন্ত করার ঘোষণা দেন। ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ফেসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
গত সপ্তাহে ফেসবুক তাদের পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক রদবদল করেছে। ব্লকচেইন বিভাগ খোলার পাশাপাশি প্রধান পণ্য কর্মকর্তার ওপর আরও দায়িত্ব দিয়েছে ফেসবুক।
ফেসবুকের নেতৃত্বে বড় রদবদল এলেও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে কাউকে বরখাস্ত বা বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া প্রধান নির্বাহী হিসেবে মার্ক জাকারবার্গের দায়িত্ব বা প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা হিসেবে সেরিল স্যান্ডবার্গের দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ফেসবুকের প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্সকে দেওয়া হয়েছে ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের দায়িত্ব।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রথম কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বিতর্কের সূচনা হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকান নাগরিকদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছিল তথ্য বিশ্লেষণ করার প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। এ ক্ষেত্রে ফেসবুকের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলেকজান্ডার কোগানের তৈরি অ্যাপ্লিকেশন ‘দিসইজইওরডিজিটাললাইফ’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। এতে ব্যবহারকারীদের তথ্য জোগাড় করার সুযোগ পান ওই অধ্যাপক। ওই অ্যাপ মূলত একটি ব্যক্তিত্ববিষয়ক পরীক্ষা চালাত। কিন্তু যেসব ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই অ্যাপ ডাউনলোড করতেন, তাঁরা আলেকজান্ডার কোগানকে নিজেদের বিভিন্ন তথ্য নেওয়ার অনুমতিও দিতেন। এতে ব্যবহারকারীদের অবস্থান, তাঁদের বন্ধু ও যেসব পোস্টে তাঁরা ‘লাইক’ দিতেন, সে সম্পর্কে জানতে পারতেন মনোবিজ্ঞানের ওই অধ্যাপক।
ওই সময় ফেসবুকের নিয়মনীতির মধ্যেও এ কার্যক্রম অনুমোদিত ছিল। ব্যবহারকারীদের ওই তথ্যাবলি কোগান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে সরবরাহ করেন। ফেসবুকের নীতিমালা ভঙ্গ করেই এ কাজ করেন তিনি। ফেসবুকের পাঁচ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য এভাবে বেহাত হয়ে যায়। ওই সময় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ভোটারদের প্রভাবিত করা যাবে, এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছিল। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৫ সালে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে এসব তথ্য মুছে ফেলতে বলেছিল তারা।