বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন অনেক বেশি তথ্য তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো চাইছে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কাজে লাগাতে। ফলে দেশে ডেটা সায়েন্সে বিশেষজ্ঞ কর্মীর চাহিদা ব্যাপক আকারে বাড়ছে। বিশ্বে ডাটা সায়েন্সের ফ্রিল্যান্স চাকরির বাজারও অনেক বড় হচ্ছে।
ডেটা সায়েন্স মূলত বেশ কিছু খাতের একটি ক্ষেত্র, যাতে সায়েন্টিফিক পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, অ্যালগরিদম ও সিস্টেম ব্যবহার করে কাঠামোগত ও কাঠামোহীন তথ্য থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও উপযোগী ইনসাইট পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যুগ ডেটা সায়েন্সের। কয়েক বছর ধরে চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ হয়ে উঠেছে ডেটা সায়েন্স। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিদিন ইন্টারনেট বিশ্বে ২ দশমিক ৫ কুইন্ট্রিলিয়ন বাইটস তথ্যের উৎপত্তি হয়। ২০১২ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই গ্লোবাল ডেটার সিংহভাগ উৎপন্ন করত। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী ডেটার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৮ জিটাবাইটস, যা ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এ থেকেই বোঝা যায়, আধুনিক যুগে সব প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি করা তথ্য গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ইনসাইট দেখতে চায় এবং ভবিষ্যতে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেশাদার ব্যক্তিদের যোগাযোগের ওয়েবসাইট লিংকডইনে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল চাকরি হচ্ছে ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং (এমএল)। যুক্তরাষ্ট্রের মতোই সারা বিশ্বে এখন ডেটা সায়েন্সে বিশেষজ্ঞ কর্মীদের খোঁজ চলছে। গোল্ডরাশের মতো ডেটা সায়েন্সের চাকরির বাজার বড় হচ্ছে।
আমাদের দেশেও ডেটা বিশেষজ্ঞদের চাহিদা রয়েছে। দেশের ব্যাংক খাত থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ খাতের মতো প্রয়োজনীয় খাতে ডেটা-বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে গড়ে উঠছে ডেটা অ্যানালিটিকিস নিয়ে কয়েকটি স্টার্টআপ। অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোরসেরার বৈশ্বিক স্কিল বেঞ্চমার্কিং বা দক্ষতা নির্ণায়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৬০টি দেশের মধ্যে ডেটা সায়েন্স সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে সৌদি আরব, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়া। এ তালিকায় ভারতের অবস্থান ৫০ তম। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইসরায়েল, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া।
কোরসেরা তাদের সূচক তৈরিতে বর্তমান সময়ে যেসব দক্ষতা বেশি চাহিদাসম্পন্ন, সেগুলো গ্রহণের হার বিবেচনায় ধরেছে। কোরসেরার প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রযুক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গণিত, পরিসংখ্যান, মেশিন লার্নিংয়ের বিষয়গুলোতেও দক্ষতা ঊর্ধ্বমুখী।
ভারতের মতো দেশেও এক লাখের বেশি ডেটা সায়েন্সে চাকরির সুযোগ রয়েছে। অনেক তরুণ পেশাজীবী এখন তাঁদের ক্যারিয়ারে উন্নতি করার জন্য ডেটা সায়েন্স ডিগ্রি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ডেটা খাতে পেশাদার কর্মীর চাহিদা বাড়তে থাকায় অনেকেই ডেটা সায়েন্সের দিকে ঝুঁকছেন।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, ২০২৪ সাল নাগাদ প্রযুক্তি খাতে চাকরির সুযোগ ১২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পেশাদারদের সামনে আরও নতুন চাকরির দরজা খুলে যাবে। বিগ ডেটা ও মেশিন লার্নিংয়ের উত্থানে ডাটা সায়েন্টিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে বেশি খরচ করছে এখন। ফলে ডেটা সায়েন্সে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা অন্যান্য চাকরির তুলনায় চারগুণের বেশি বেতন পাচ্ছেন।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, মেশিন লার্নিং ও ডেটা এনালাইটিকসের চাহিদা বাড়তে থাকবে এবং প্রযুক্তিশিল্পে বড় পরিবর্তন আনবে। তাই অ্যানালাইটিকসে যেকোনো দক্ষতা কর্মীকে এগিয়ে রাখবে।
ডেটা সায়েন্সের ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রচলিত কাজের বাইরেও নানা কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন নেটফ্লিক্সের মতো সাইটেই ৯ ধরনের ডেটা সায়েন্সভিত্তিক চাকরি রয়েছে। ডেটা ইঞ্জিনিয়ার, কোয়ানটিটিভ অ্যানালিস্ট, এমএল সায়েন্টিস্ট প্রভৃতি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ডেটা দিয়ে বিভিন্ন সাহায্য করার সুযোগ রয়েছে।