করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মাথায় রেখে কোরবানির পশু কিনতে অনলাইনে আস্থা রাখছেন মানুষ। এবার তাঁরা কোরবানির গরু কিনছেন ‘ডিজিটাল হাটে’। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহযোগিতায় ‘ডিজিটাল হাট’ এখন জমজমাট।
গত ১১ জুলাই এই হাটের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। উদ্বোধনের দিনই ‘ডিজিটাল হাট’ থেকে গরু কিনেছিলেন তিন মন্ত্রী। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইন আহমেদ গরু কেনার পর থেকে এই প্ল্যাটফর্মে অনলাইন ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে।
ই-ক্যাব সূত্রে জানা গেছে, তাদের ডিজিটাল হাটে শুধু পশুই কেনা নয়, রয়েছে দক্ষ কসাই দিয়ে কোরবানি করিয়ে বাসায় মাংস পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা। তবে তার জন্য দিতে হবে বাড়তি চার্জ। পশু জবাই ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় গরুর মূল দামের সঙ্গে আরও ২৩ শতাংশ ও বাসায় পৌঁছানোর জন্য ঢাকার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ টাকা চার্জ দিতে হবে। যেকেউ যেকোনো সময় https://digitalhaat.net এই ঠিকানা থেকে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন।
করোনাভাইরাসের কারণে এবার আগে থেকেই গরুর হাটে যেতে অনেকের অনীহা আছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে যাতে কোনো ধরনের পশুর হাট বসানো না হয়, সে জন্য তাগিদ দেওয়া হয়।
অনলাইনে গরু বিক্রি করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘ডিজিটাল হাট’ নামের প্ল্যাটফর্মটি চালু করে। এতে সহযোগিতা করছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন।
ডিজিটাল হাট থেকে গরু কেনা সহজ। ওয়েবসাইটে ঢুকে ক্রেতারা বিভিন্ন আকার ও দামের গরুর ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে পছন্দ করতে পারছেন। এরপর প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। ক্রেতা চাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে গরুর ভিডিও দেখতে পারছেন। এবং গরুর পালনকারীর সঙ্গে কথাও বলতে পারছেন।
ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্রেতারা ডিজিটাল হাট থেকে ন্যায্যমূল্যে ক্রয়কৃত কোরবানির পশু ঢাকার পাঁচটি এলাকা থেকে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করে নিজ নিজ ঠিকানায় ডেলিভারি নিতে পারবেন। ডিজিটাল হাটের আওতায় গরু বিক্রি ছাড়াও প্রায় দুই হাজার গরু জবাই করে এবং মাংস প্রক্রিয়া করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
ই-ক্যাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আস্থা তৈরি ও ঘরে বসে অনলাইনে পশু কেনাকাটার ব্যাপারে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল হাট থেকে নিরাপদে পশু কেনা যাবে।
কোরবানির গরু বাছাই থেকে শুরু করে অনলাইনে দাম পরিশোধ বা পেমেন্টের সুবিধা পাওয়া যাবে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে। ফলে, দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরাও অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। বিকাশ, নগদ, রকেটসহ মোবাইল ফোনভিত্তিক বিভিন্ন লেনদেন সেবা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ই-কমার্স সাইটগুলোয় পশুর দাম পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।
অনলাইনে শুধু পশু কেনা নয়, কোরবানি করা বা মাংস প্রক্রিয়াকরণ—সব ধরনের সেবা মিলবে। ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, অনলাইনে কোরবানির গরু কেনাকাটা করে কেউ যেন প্রতারিত না হয় এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘরে বসে কোরবানির ব্যবস্থাপনা সেবা সহজ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে পশু কেনাকাটা, পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে মাংস পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্ন সেবা দেবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। অনলাইনে কেনা গরু-ছাগলের পরিচর্যা এবং কোরবানির ব্যবস্থার পাশাপাশি ঘরে বসে অনলাইনে নিজের পশু কোরবানি দেখার জন্য লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করেছে ডিজিটাল হাট।