কয়েক বছরে ধরে স্মার্ট টিভির জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। সহজভাবে বলতে গেলে, ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে কম্পিউটারের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো যোগ করার মাধ্যমে এত দিনের পরিচিত টেলিভিশনগুলো হয়ে যাচ্ছে একেকটি স্মার্ট টিভি। চির চেনা টিভিগুলো প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেছে অন্যান্য স্মার্ট বিনোদনের মাধ্যমের সঙ্গে।
সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করলেও টেলিভিশনের স্মার্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা নতুন না। স্মার্ট টিভি সম্পর্কিত প্রথম পেটেন্ট করা হয় সেই ১৯৯৪ সালে।
স্মার্ট টিভি কী?
সাধারণ টেলিভিশনের সঙ্গে স্মার্ট টিভির অন্যতম প্রধান পার্থক্য হলো স্মার্ট টিভি ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকে। অন্যভাবে বলতে গেলে, কম্পিউটার, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টেলিভিশন ও সেট টপ বক্সের একটি বিশেষ সমন্বয় হলো এই স্মার্ট টিভি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত এই স্মার্ট টিভিগুলোতে আরও নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজনের চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করছে। প্রতিটি স্মার্ট টিভিতে বিশেষ একটি অপারেটিং সিস্টেম থাকে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ ও বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা যায়।
স্মার্ট টিভির বৈশিষ্ট্য
ইন্টারনেট সংযোগ: সব স্মার্ট টিভি ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারে। সাধারণ ইথারনেট বা ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে স্মার্ট টিভির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা যায়। কী মানের ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তা কখনো টিভির স্ক্রিন রেজল্যুশনের ওপর নির্ভর করে।
ভিডিও ফাইল দেখা: ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে আলাদা যন্ত্র থেকে ভিডিও চালানোর সুবিধা অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই স্মার্ট টিভির।
অ্যাপ ও গেম: স্মার্ট টিভিতে বিভিন্ন কাজের বিশেষ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। যেমন: ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, বিবিসি আইপ্লেয়ার ইত্যাদি। শুধু কাজের অ্যাপই নয়, বিভিন্ন বয়সী ব্যবহারকারীর কথা মাথার রেখে বিভিন্ন গেম খেলারও সুযোগ থাকে স্মার্ট টিভিতে। পাশাপাশি জনপ্রিয় বিভিন্ন গেমের স্মার্ট টিভি সংস্করণও পাওয়া যায়।
ডিভিআর: আলাদা অ্যাপ অথবা সরাসরি মূল স্মার্ট টিভির অংশ হিসেবে সম্প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান রেকর্ড করে পরে অন্য সময়ে দেখার সুযোগ থাকে স্মার্ট টিভিগুলোতে।
কথায় বা ইশারায়: ইশারা বা কথার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকে স্মার্ট টিভিতে। দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে সব সময় সংযুক্ত না থাকলেও ইশারার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকলে সাধারণত সেই স্মার্ট টিভি ভয়েস কমান্ড সমর্থন করে থাকে। সম্প্রতি স্কাইপের মাধ্যমে অডিও ও ভিডিও কল করার সুযোগসমৃদ্ধ স্মার্ট টিভিও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
ফোরকে ও ইউএইচডি
স্মার্ট টিভিতে অতি উচ্চ রেজল্যুশনের ফোরকে এবং আলট্রা এইচডি বর্তমানের অন্যতম জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮০ ইঞ্চির বা এর থেকে বড় স্মার্ট টিভি কেনার সময় অবশ্যই এই ফোরকে বৈশিষ্ট্যটি থাকা উচিত। এই আকারের টিভিগুলো ১০ ফুট দূর থেকে দেখা উচিত। ছোট আকারের টিভিগুলোতে ফোরকে বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, তবে শুধু এই বৈশিষ্ট্যের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই।
এইচডিআর
এইচডিআর হলো হাই ডাইনামিক রেঞ্জের সংক্ষিপ্ত নাম। এটি বিশেষ ধরনের টেলিভিশন প্রযুক্তি, যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রং ও কনট্রাস্টের এমন মান নির্ধারণ করা হয় যে টেলিভিশনের ছবি আরও আকর্ষণীয় মনে হয়।
থ্রিডি টিভি
বর্তমানে প্রায় কোনো ব্র্যান্ডই এই থ্রিডি টেলিভিশন তৈরি করছে না। তবে কিছুদিন আগে পর্যন্তও এই একটিমাত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য ক্রেতারা অনেক উচ্চমূল্যে এই টিভিগুলো কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতেন।
স্মার্ট টিভি মানেই এর সবকিছুই ভালো এমন নয়। নতুন কেনার সময় অবশ্যই নিজের প্রয়োজন ও চাহিদার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন টিভি কেনা উচিত। ক্যামেরাযুক্ত স্মার্ট টিভিগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। স্মার্ট টিভি থেকে যে অ্যাপ বা গেম খেলা যায়, সেগুলোও কম্পিউটার ও মোবাইলের গেমগুলোর মতো মানসম্মত নয় বলে মনে হতে পারে। আবার অ্যাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও অন্যান্য মাধ্যমে অ্যাপগুলো ব্যবহার থেকে আলাদা। মোবাইল ডিভাইস সংযুক্ত করা এবং এগুলো থেকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থাও আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।
সাধারণ থেকে স্মার্ট টিভি
নতুন টিভি কেনার সময় হয়তো এখন সবাই স্মার্ট টিভির প্রতি আগ্রহী হতে পারেন। কিন্ত সবাই আজই প্রথম টিভি কিনবেন বা নতুন টিভি পরিবর্তন করছেন এমন নয়। আগে থেকেই যাঁরা টিভি ব্যবহার করছেন, তাঁদের টিভিতে এইচডিএমআই সংযোগ থাকলে অতিরিক্ত একটি ডিভাইস যুক্ত করে সাধারণ টেলিভিশনকেই স্মার্ট টিভি বানিয়ে নেওয়া যায়।
অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স নামে পরিচিত এই যন্ত্রগুলো টিভির এইচডিএমআই সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করে ওয়াই–ফাই ইন্টারনেটে ব্যবহার করে স্মার্ট টিভির বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা যাবে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম–নির্ভর এই যন্ত্রে টিভির উপযোগী যেকোনো ধরনের অ্যাপ ইনস্টল করে ব্যবহার করা যাবে।
দেশের জনপ্রিয় প্রায় সব ই–কমার্স সাইটগুলো থেকে এই যন্ত্রগুলো কেনার সুযোগ রয়েছে। সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা খরচ করে এগুলো কেনা যাবে। মানের দিক থেকে উন্নত অন্যান্য ডিভাইস যেমন শাওমি টিভি বক্সের দাম ছয় হাজার টাকার মতো।
দেশের বাজারে
সনি-র্যাংগসের শোরুমগুলো তে সম্প্রতি সময়ের নতুন মডেলের সনি স্মার্ট টিভিগুলো পাওয়া যাবে। নতুন টিভি কেনার সময় পুরোনো সিআরটি মনিটরযুক্ত টিভিগুলো পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে, যেখানে সর্বনিম্ন ১১ হাজার টাকা ছাড় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ট্রান্সকম ডিজিটালের শোরুমগুলোতে স্যামসাং, ফিলিপস এবং ট্রান্সটেক ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি পাওয়া যায়। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শোরুমগুলো থেকে অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে কেনা যাবে বর্তমানে স্টকে রয়েছে এমন যেকোনো মডেল। পুরোনো টিভি পরিবর্তন করে নতুন টিভি কেনার সময় বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। পুরোনো সচল টিভির বিনিময় হিসেবে সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে।
সিঙ্গারের শোরুম ও ওয়েবসাইটে স্যামসাং এবং সিঙ্গার ব্র্যান্ডের টিভিগুলো পাওয়া যাবে। মডেল ও ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে বেশ কিছু উপহার ও ডিসকাউন্ট রয়েছে।
ওয়ালটনের ২০টিরও বেশি মডেলের স্মার্ট টিভি থেকে পছন্দেরটি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে তাদের যেকোনো শোরুম থেকে। পাশাপাশি ওয়েবসাইট থেকেও জানা যাবে কোন মডেলের বিশেষত্ব কী।
দরদাম
সনি: সাধারণ ডিসকাউন্টসহ সনি ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি পাওয়া যাবে সর্বনিম্ন ৪৯ হাজার ৯০০ টাকায় আর বিনিময়–সুবিধার আওতার এর মূল্য ৪৫ হাজার টাকা।
স্যামসাং : ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি, ডিসকাউন্টসহ মূল্য ৩৪ হাজার ৯০০ টাকা। ৩২ ইঞ্চির আরেকটি মডেলের দাম ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা। ৬৫ ইঞ্চি ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ৭৫ ইঞ্চি ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৬৫ ইঞ্চির আরেকটি মডেলের দাম ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৫০ ইঞ্চি ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৪৩ ইঞ্চি ৭১ হাজার ৯০০ টাকা।
ওয়ালটন: ৩২ ইঞ্চির দাম ২৪ হাজার ৯০০ থেকে ২৫ হাজার ৯০০। ৩৯ ইঞ্চি টিভির দাম ৩৬ হাজার ৯০০ থেকে শুরু। ৪৩ ইঞ্চির দাম ৩৯ হাজার ৯০০ থেকে ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা। ৪৯ ইঞ্চির দাম ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা। ৫৫ ইঞ্চির দাম ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা।
সিঙ্গার ৩২ ইঞ্চির দাম ২৮ হাজার ৯৯০ টাকা।