যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজার ও মডার্নার টিকার পাশাপাশি নতুন জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এক ডোজ টিকাই যথেষ্ট। দ্বিতীয় ডোজের দরকার নেই। কিন্তু ফাইজার, মডার্না বা অক্সফোর্ডের টিকা প্রথম ডোজ নেওয়ার ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। নাহলে পুরোপুরি সুরক্ষা পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন হলো দুইবার–একবার টিকা নেওয়ার এই পার্থক্য কেন? এ বিষয়ে সম্প্রতি সিএনএনওয়াইর সিএনএনের ম্যাগি ফক্সের বিস্তৃত একটি লেখা প্রকাশ করেছে (২ মার্চ ২০২১)। সেখানে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, জনসন টিকা তৈরির পদ্ধতি একটু ভিন্ন। অন্য টিকাগুলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, মেসেঞ্জার আরএএনএ বা এম–আরএনএ ব্যবহার করে। এদের মাধ্যমে জেনেটিক মেটেরিয়ালগুলো সরাসরি দেহকোষে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। দেহকোষ তখন সেই জেনেটিক কোডের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন টুকরা তৈরি করে, যা দেখতে করোনাভাইরাসের মতো। এরা দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে এবং করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
কিন্তু জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন ‘ভাইরাল ভেক্টর টেকনলজি’ ব্যবহার করে। অ্যাডিনোভাইরাস ২৬ নামের একটি প্রচলিত ‘ঠান্ডা–জ্বর’ (কোল্ড)–এর ভাইরাস প্রায় নিষ্ক্রিয় করে জিনগত ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে (জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড) বাহুতে এমনভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যেন তা দেহকোষে ঢুকতে পারে, কিন্তু সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। দেহে রোগ ছড়াতে পারে না। কিন্তু দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। ফাইজার, মডার্না প্রভৃতি টিকার মতো এরা জেনেটিক তথ্য দেহে সরবরাহ করে। এর ফলে এরা সেই নির্দেশিকা ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের আঁকশির (স্পাইক প্রোটিন) মতো দেখতে বিচ্ছিন্ন টুকরা তৈরি করে। এরা করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে না, কিন্তু দেহকোষ ওই স্পাইকগুলো চিনে রাখে এবং পরে করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাদের ধ্বংস করে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই টিকার এক ডোজই যথেষ্ট কার্যকর। এর কার্যকারিতা নিয়ে এখনো পরীক্ষা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএর (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) ওই টিকা দেশব্যাপী বিতরণ করছে।
সংক্রমণ আবার বাড়ছে কেন?
দেশে সংক্রমণের হার কয়েক সপ্তাহ কম ছিল। এখন আবার বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন সংক্রমণ আবার বাড়ার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এর কারণ মূলত বড় বড় শহরে বাইরের মানুষের যাতায়াত বেশি। বিভিন্ন এলাকায় জনসমাগম বেশি হয়। ফলে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার বিকল্প নেই।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা উদ্বেগের
আমাদের দেশে বলতে গেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় নেই। সামান্য যে কয়েকজনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তার প্রায় সবই হালকা ধরনের সমস্যা এবং খুব কম সময়েই সবাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। টিকা নেওয়ার দু–চার দিন আগে–পরে যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু লক্ষণ পরিস্ফুট হয়নি, হয়তো তাঁদেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে।
আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
quayum.abdul@prothomalo.com