একসময় চীনা ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের কথা শুনে অনেকেই হাসাহাসি করতেন। কিন্তু এখন সেখানকার অনেক ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার দখল করেছে। এসব স্মার্টফোন দামের দিক থেকে যেমন অনেকের সাধ্যের মধ্যে, তেমনি এতে ব্যবহৃত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। আফ্রিকার দেশগুলোয় তাই জনপ্রিয় হচ্ছে এমন ফোন।
সম্প্রতি সিএনএনের এক প্রতিবেদনে ট্রানশানের ফ্ল্যাশশিপ ব্র্যান্ড টেকনোর আফ্রিকায় জনপ্রিয় হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, আফ্রিকার বাইরে বর্তমানে ভারত, রাশিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশসহ ক্রমবর্ধমান বাজারে ট্রানশান প্রবেশ করেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকায় অ্যাপলের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে চাইনিজ ব্র্যান্ড ট্রানশান। পশ্চিমা বিশ্বে অপরিচিত ট্রানশান আফ্রিকায় অ্যাপল, স্যামসাং ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলেছে। লাগোস, নাইরোবি ও আদ্দিস আবাবার মতো শহরগুলোর ট্রানশানের ফ্ল্যাশশিপ ব্র্যান্ড টেকনোর ফোন বিক্রি হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, চীনে তাদের একটি দোকানও নেই। যেখানে চীনের অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে হুয়াওয়ে, শাওমি প্রথমে তাদের নিজ দেশের বাজারে প্রভাব তৈরির পর অন্যান্য দেশে বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় সফলতা পেয়েছে, নিজ দেশেই অচেনা ট্রানশান সেখানে সম্পূর্ণ আলাদা কৌশল অবলম্বন করে পেয়েছে সাফল্য।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলের মেগাসিটি শেনঝেনে এর বৃহত্তর সদর দপ্তরটি অবস্থিত। তবে খুব জলদি তাদের নিজ দেশে ব্যবসা প্রসারের তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
ট্রানশানের কর্মকর্তারা বলেন, তাঁদের ক্যামেরা এমনভাবে অপ্টিমাইজ করা, যাতে ছবি তোলার সময় মুখাবয়বে বেশি আলো ধারণ করতে পারে এবং ছবিটি সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে।
ট্রানশানের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ জু প্রায় ১০ বছর অন্য একটি মোবাইল কোম্পানির হেড অব সেলস হিসেবে কাজ করেছেন আফ্রিকায়। এক দশকে তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। সেখান থেকেই তাঁর উপলব্ধি আসে যে আফ্রিকানদের কাছে মোবাইল ফোন বিক্রি করতে হলে তাদের চাহিদা বুঝে পণ্য তৈরি করতে হবে, যা গ্লোবাল কোম্পানিগুলো বুঝে উঠতে পারছিল না। আর সময়টাও ছিল অনুকূলে। ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে চাইনিজ সরকার সে দেশের উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করে বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে গোয়িং আউট কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোয় বিনিয়োগের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে প্রথমে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়াতে টেকনো বাজারজাতের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন জর্জ।
আফ্রিকানদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে যুগোপযোগী প্রযুক্তি তাদের হাতে তুলে দিতে টেকনো চীন, নাইজেরিয়া ও কেনিয়াতে তিনটি রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করে। এ মহাদেশের মানুষের ভাষার কথা মাথায় রেখে ফোনের কিবোর্ডে আমহারিক, হাইসা ও সোয়াহিলি ভাষা সংযোজন করা হয়। এ অঞ্চলে লোডশেডিং একটি মুখ্য সমস্যা, এর সমাধান হিসেবে ফোনে ব্যাটারির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা করে। ট্রানশান তাদের টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল—তিনটি ব্র্যান্ডের ফিচার ও স্মার্টফোনের দাম ১৫ থেকে ২০০ মার্কিন ডলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। যেখানে অন্যান্য ব্র্যান্ডের ফোনের দাম ট্রানশানের চেয়ে অনেক বেশি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের থেকে আফ্রিকাতে মোবাইল ফোনের বাজার দখল করে ট্রানশান। আইডিসির গবেষণা মতে, আফ্রিকার যত স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, তার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ ট্রানশানের। ট্রানশানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আফ্রিকাতে প্রায় ১০ হাজার এবং চীনে ৬ হাজার কর্মী রয়েছেন। আফ্রিকার বাইরেও বাজার বাড়াতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।