মুঠোফোনের প্রযুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ শোনা যায়।
মুঠোফোনের প্রযুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ শোনা যায়।

চার্জ করার সময় ফোনে কথা বলা কি বিপজ্জনক  

নানা বিষয় নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারণা, বিশ্বাস আছে। যেসব আসলে মিথ। কম্পিউটার বা মুঠোফোনের প্রযুক্তি সম্পর্কেও এমন মিথ শোনা যায়। কিন্তু প্রকৃত সত্য ভিন্ন। জেনে নেওয়া যাক খুব প্রচলিত ১০টি ভুল ধারণা সম্পর্কে।

১. রিফ্রেশ বাটন উইন্ডোজের গতি বাড়ায়

রিফ্রেশ বাটন

প্রচলিত: রিফ্রেশ বাটনে ক্লিক করলে উইন্ডোজচালিত কম্পিউটারের গতি বাড়ে এবং সবকিছু আগের থেকে সাবলীলভাবে চলে।

সত্য: রিফ্রেশ বাটনের কাজ পুরোই আলাদা। রিফ্রেশে ক্লিক করলে এটি প্রোগ্রামের কোনো ত্রুটি বা সাময়িক সমস্যা দূর করে। ধরা যাক আপনি একটি ফোল্ডার তৈরি করেছেন। কিন্তু সেটির নাম দেখা যাচ্ছে না। রিফ্রেশ করলে নামসহ ফোল্ডারটি দেখা যাবে। কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর সঙ্গে রিফ্রেশের কোনো সম্পর্ক নেই।  

২. চার্জ করার সময় কখনোই মুঠোফোনে কথা বলবেন না

ত্রুটিযুক্ত চার্জার বা যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে ফোন বিস্ফোরিত হতে পারে।

প্রচলিত: মুঠোফোন চার্জে দিয়ে কখনোই কথা বলা যাবে না। এটি বিস্ফোরিত হয়ে আহত হতে পারেন, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

সত্য: এই মিথ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা। কিন্তু এটা একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। সাধারণ মোবাইল বা স্মার্টফোনের বিস্ফোরিত হওয়ার প্রবণতা একেবারেই কম। যদি ত্রুটিযুক্ত চার্জার দিয়ে চার্জ করা হয় কিংবা ফোন তৈরির সময় যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে থাকে তবে ফোন বিস্ফোরিত হতে পারে। যেমন স্যামসাং নোট ৭-এর কিছু সেটে এমন সমস্যা ছিল। চার্জ করার সময় কথা বলা বা ফোন ব্যবহার করার সঙ্গে বিস্ফোরণের কোনো সম্পর্ক নেই।

চার্জ করার সময় ফোন যদি মাত্রারিক্ত গরম হয়, তবে বুঝবেন চার্জার বা ফোনের ব্যাটারিতে সমস্যা হয়েছে।

৩. ফোনের সঙ্গে নির্মাতার চার্জারই শুধু ব্যবহার করবেন

যে চার্জারে নিম্নমানের সার্কিট বা তার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ফোনের জন্য ক্ষতিকর।

প্রচলিত: ফোনের সঙ্গে নির্মাতা যে চার্জার দেবেন শুধু সেটাই ব্যবহার করবেন। অথবা ফোন নির্মাতার অনুমোদিত অন্য নির্মাতার (থার্ড পার্টি) তৈরি চার্জার ব্যবহার করতে হবে। না হলে ব্যাটারি নষ্ট হবে কিংবা ফোন বিস্ফোরিত হবে।

সত্য: ফোন নির্মাতার দেওয়া চার্জার ব্যবহার করা সর্বোত্তম উপায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে অন্য কোনো চার্জার ব্যবহার করা যাবে না। কম দামের বা বেশি দামের চার্জারও বিষয় নয়। যে চার্জারে নিম্নমানের সার্কিট বা তার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ফোনের জন্য ক্ষতিকর।

৪. অ্যাপ একেবারে বন্ধ করে দিলে ফোনের শক্তি সঞ্চয় হবে

ব্যাটারি সেভার মোড যেকোনো অ্যাপের নেপথ্যে চলা (ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস) বন্ধ রাখে।

প্রচলিত: আপনি যখন কোনো অ্যাপ বন্ধ করছেন, তখনো সেটা ভেতরে-ভেতরে ফোনে চলতে থাকে। এ জন্য অ্যাপটিকে একেবারে বন্ধ রাখতে আপনাকে টাস্ক কিলার ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। এতে আপনার ইন্টারনেট খরচ হবে না, ফোনের শক্তিও ব্যয় হবে না।

সত্য: এ কথা সত্যি যে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপগুলো চালু না থাকলেও নেপথ্যে সক্রিয় থাকে। আপনাকে সর্বশেষ বার্তা, নোটিফিকেশন দেওয়ার জন্যই এগুলো চলতে থাকে। যদি আপনি জোর করে এ রকম অ্যাপের নেপথ্য প্রক্রিয়া থামিয়ে দেন, তখন থেমে তৎক্ষণাৎ এগুলো আবার চালু হয়। জোর করে লাভ হয় না। যদি আপনি এসব অ্যাপের নেপথ্য ক্রিয়া না চান, তবে আপনার ফোনে থাকা ব্যাটারি সেভার মোড ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাটারি সেভার মোড যেকোনো অ্যাপের নেপথ্যে চলা (ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস) বন্ধ রাখে।

৫. ফুল মোবাইল সিগন্যাল মানে সেরা নেটওয়ার্ক সেবা

পুরো সিগন্যাল সেরা নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত করে না।

প্রচলিত: যদি দেখেন আপনার ফোনে মোবাইল সিগন্যালের পুরোটা দেখাচ্ছে, তার মানে আপনি সেরা নেটওয়ার্ক সেবা পাচ্ছেন এবং ডেটা পাঠাতে সর্বোচ্চ গতি পাচ্ছেন।

সত্য: অনেক সময়ই আমরা ফোনে পুরো সিগন্যাল দেখে থাকি, কিন্তু তখনো হয়তো ইন্টারনেটের গতি ধীরই থাকে। আসলে এই পুরো সিগন্যাল সেরা নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত করে না। মোবাইলে দেখানো সিগন্যালের শক্তিই বোঝায়, যা আপনি কাছের মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে পাচ্ছেন।

৬. বেশি র‌্যাম মানেই কম্পিউটারে বেশি গতি

দ্রুতগতির র‌্যাম কম্পিউটারের কাজ করার গতি বাড়াতে পারে।

প্রচলিত: বেশি ক্ষমতার র‌্যাম কম্পিউটারের কাজের গতি বাড়ায়।

সত্য: র‌্যাম কম্পিউটারে কাজ করার সময় তৈরি হওয়া অস্থায়ী তথ্য ধারণের যন্ত্রাংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। র‌্যাম বেশি হলে চলমান প্রোগ্রামের অস্থায়ী তথ্য ধারণক্ষমতা বেশি হবে। র‌্যাম বাড়ালে একসঙ্গে বেশি প্রোগ্রাম খোলা রাখার সুযোগই শুধু পাবেন। ধরুন, আপনার কম্পিউটারে ২ গিগাবাইট র‌্যাম রয়েছে, কিন্তু যেসব প্রোগ্রাম খুলে কাজ করছেন, সেগুলো ৩ গিগাবাইটের বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার ধীরগতির হয়ে পড়বে। সত্যি যদি কম্পিউটারের গতি বাড়াতে চান, তবে র‌্যামের পরিমাণ নয়, ধরনের দিকে নজর দেন। যেমন ডিডিআর-৩ অথবা ডিডিআর-৪। দ্রুতগতির র‌্যাম কম্পিউটারের কাজ করার গতি বাড়াতে পারে।

৭. সেফলি রিমুভে ক্লিক করে ইউএসবি খুলতে হবে

কাজ হয়ে গেলে ৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করে ইউএসবি খুলে নেওয়া যায়।

প্রচলিত: যেকোনো ইউএসবি যন্ত্রাংশ খোলার আগে অবশ্যই ‘সেফলি রিমুভ ইউএসবি’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। না হলে ইউএসবিতে থাকা আপনার তথ্য বা ডেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা সম্পাদনা করা তথ্য সেভ না–ও হয়ে থাকতে পারে।

সত্য: যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ইউএসবি ড্রাইভে কোনো কিছু লিখছেন বা ড্রাইভ থেকে কিছু পড়ছেন, দেখছেন ততক্ষণ ড্রাইভ খুলে ফেলায় কোনো সমস্যা নেই। যখন আপনি ‘সেফলি রিমুভ ইউএসবি’তে ক্লিক করবেন তখন সেটিতে কোনো সক্রিয় ডেটা নেই অপারেটিং সিস্টেম এটিই শুধু নিশ্চিত করে। আর ডেটায় আনা পরিবর্তনগুলো সেভ করা আছে। এমনিতে মাত্র ৫ সেকেন্ডেই ডেটায় আনা কোনো পরিবর্তন সেভ হয়ে যায়। তো কাজ হয়ে গেলে ৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করে ইউএসবি খুলে নিলেই হলো।

৮. একটি অ্যান্টি ভাইরাস ঠেকাবে সব ভাইরাস

অ্যান্টি ভাইরাস প্রোগ্রামগুলো ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রতিরোধ করে।

প্রচলিত: একটি অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার সব ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস ও সর্বশেষ হামলা থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে। নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টি ভাইরাস ইনস্টল করে নিলেই আপনি নিরাপদ।

সত্য: অ্যান্টি ভাইরাস প্রোগ্রামগুলো ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রতিরোধ করে। কিন্তু অ্যান্টি ভাইরাস আপনার কম্পিউটারকে ‘বুলেট প্রুফ’ করবে না। একটি ভালো অ্যান্টি ভাইরাস ইনস্টল করলেন, অচেনা উৎস থেকে আসা সফটওয়্যার ইনস্টল করে ভরে ফেললেন আর ভাবলেন আপনি নিরাপদ—তা একেবারেই ভুল ভাবনা। শক্তিশালী দুই ধরনের ভাইরাস হামলাই একটি অ্যান্টি ভাইরাস সামলাতে পারে না। ভাইরাসের হামলা সামলাতে আপনাকেই পূর্ব সতর্কতা নিয়ে ভাবতে হবে। সাধারণত ক্ষতিকর কোড সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট ডেটাবেজ থেকে কোনো অ্যান্টি ভাইরাস প্রোগ্রাম তথ্য পেয়ে থাকে। অন্য বা নতুন উৎসের কোড থেকে আক্রমণ হলে ওই অ্যান্টি ভাইরাস আর কিছু করতে পারে না। আর যদি বেআইনিভাবে বিক্রয়যোগ্য কোনো সফটওয়্যার আপনি বিনা মূল্যে নামিয়ে নেন (ডাউনলোড), তবে কোনো অ্যান্টি ভাইরাসই আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। আপনার সেরা প্রতিরোধ হলো, অবিশ্বস্ত কোনো উৎস থেকে কোনো প্রোগ্রাম না নামানো।

৯. রিসাইকেল বিন খালি করা মানে চিরতরে ফাইল মুছে ফেলা

রিসাইকেল বিন খালি (এম্পটি) করলেই সব ফাইল বা তথ্য চিরতরে মুছে যায় না।

প্রচলিত: কোনো ফাইল চিরতরে মুছে (ডিলিট) ফেলতে ড্রাইভ থেকে সেটি মুছে ফেলুন এবং এরপর রিসাইকেল বিন থেকেও সেটি মুছে দিন।

সত্য: অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন যে রিসাইকেল বিন খালি (এম্পটি) করলেই সব ফাইল বা তথ্য চিরতরে মুছে যায়। এটা ঠিক নয়। যখন আপনি রিসাইকেল বিন থেকে ফাইল মুছে ফেলেন উইন্ডোজ তখন শুধু একে মুছে ফেলা (ডিলিটেড) হিসেবে দেখায়। আর জায়গা ফাঁকা হয়েছে বলে জানায়। আসলে ফাইল বা তথ্য তখনো সেখানে থেকে যায় এবং ডিস্কের সেই জায়গায় নতুন কিছু লেখার অপেক্ষায় থাকে। যদি নতুন কোনো কিছু সেখানে ওভাররাইট না হয়ে থাকে তবে মুছে ফেলা ফাইল নিরাপদে পুনরুদ্ধার করা যাবে।

১০. প্রাইভেট ব্রাউজিং মোডে আপনার তথ্য ‘প্রাইভেট’

প্রচলিত সব ব্রাউজারের প্রাইভেট মোড ইন্টারনেট ব্যবহারের সব তথ্য স্থানীয়ভাবে (লোকালি) রেখে দেয়।

প্রচলিত: ওয়েবে আপনার পদচারণ, কর্মকাণ্ড যদি কাউকে না জানাতে চান বা গোপন রাখতে চান তাহলে শুধু প্রাইভেট বা ইনকগনিটো ব্রাউজার উইন্ডো ব্যবহার করলেই চলবে।

সত্য: না, একদমই চলবে না। ইন্টারনেটে নিজের পদচারণ গোপন রাখতে ভিপিএনের (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) কথা বললে অনেকে প্রাইভেট ব্রাউজার উইন্ডোর কথা বলেন। অনেকে ভাবেন ব্রাউজারের প্রাইভেট মোড ব্যবহারকারীকে অদৃশ্য করে রাখে। প্রচলিত সব ব্রাউজারের প্রাইভেট মোড ইন্টারনেট ব্যবহারের সব তথ্য স্থানীয়ভাবে (লোকালি) রেখে দেয়। বাইরে যে কেউ আপনার গতিবিধি অনুসরণ করতে পারবে। বাইরের কেউ মানে ইন্টারনেট সেবাদাতা, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক (অফিস বা বিদ্যালয়), যে ওয়েবসাইট দেখছেন (যেমন ফেসবুক), কম্পিউটারে ইনস্টল করা কোনো পর্যবক্ষেণ (মনিটরিং) সফটওয়্যার ইত্যাদি। নিজেকে ‘অদৃশ্য’ রাখতে এখন পর্যন্ত ভিপিএন সেরা।

হংকিয়াত ডটকম অবলম্বনে