বসতবাড়িতে বা অফিসে আলোর নান্দনিকতার চল শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। দিন দিন এটি বাড়ছেই। সন্ধ্যা নামার পরপর রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে হরেক রঙের বাতির ব্যবহার। বিশেষ করে খাবারের রেস্তোরাঁয় এর ব্যবহার চোখে পড়বে। তা ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতেও এই রঙিন বাতি ব্যবহার করে বাড়তি মাত্রা যোগ করার চল শুরু হয়েছে।
ধানমন্ডির দুটি বহুতল ভবনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল দুটি বহুতল ভবনেই প্রায় ৬০টি রেস্তোরাঁ। একেকটির একেক আলোক সজ্জা। বর্ণিল সব আলোর খেলা সেখানে। কেবল খাবার দোকানেই নয়, ব্যক্তিগত বাড়ি বা অফিসেও এই বর্ণিল আলোর ব্যবহার চোখে পড়ছে।
বনানী ১১ নম্বর সড়কে গিয়ে সম্প্রতি কয়েকজন বন্ধু আলোচনা করছিলেন, এই সড়কে এলে তাঁদের মনে হয় বিদেশে এসেছেন। তাঁদের একজন অর্ণব শাকিল বললেন, নান্দনিক বাতিগুলো ব্যবহৃত হয়েছে এখানের বিভিন্ন দোকানে, যা সড়ক ও দোকানের চেহারাই বদলে দিয়েছে। এসব লাইটের আলোতে বসলে মনে হয়ে যেন কোথাও বেড়াতে এসেছি। সাধারণ লাইটের নিচে বসলে এই অনুভূতি সে রকম হয় না।
তাঁর কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল ইউ ল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কণ্ঠেও। তিনি জানালেন, রেস্তোরাঁয় বসে রঙিন আলোর নিচে বসলে উৎসব উৎসব একটা ভাব বিরাজ করে। এখন খাবারের দোকানগুলোতে এগুলোর ব্যবহার আমাদের দেশে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। আগে বিদেশে গিয়ে এসব লাইট দেখতাম। এখন দেশেই এর ব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশি।
লাইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুপারস্টারের নির্বাহী মোর্শেদ কামাল রেজা বললেন, মানুষের বিনোদনের জন্য সারা দেশে অনেক খাবার দোকান হচ্ছে। এসবে নান্দনিক রঙিন লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষ এখন বাড়িতে ফলস সিলিং ব্যবহার করছে। সেই অন্দরকে নান্দনিক রূপ দিতে ব্যবহার করছে নান্দনিক বর্ণিল বাতি। এ ছাড়া ঘুমানোর সময় এসব রঙিন বাতি জ্বালিয়ে রাখে অনেকে।
মোর্শেদ কামাল রেজা জানালেন, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নান্দনিক বেশ কিছু লাইট তৈরি করেন তাঁরা। এলইডি কালার লাক্স, কালার এলইডি, মাল্টি কালার প্যানেল এলইডি, টি সেইফ এলইডি অন্যতম। এসব লাইট সাদা, পিংক, কমলা, হলুদ, সবুজ, লাল ও নীল রঙের হয়ে থাকে। এ ছাড়া লুমিনাক্স সিরিজের ও কালার টিউব লাইটের কিছু লাইট আছে তাঁদের। এসবও নান্দনিকতায় ব্যবহৃত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কালার লাইটে তাঁরা খুব ভালো সাড়া পাচ্ছেন। এই লাইট দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বাজারে ২৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এসব লাইট।
লাইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাকও এ ধরনের নান্দনিক বেশ কিছু বাতি প্রস্তুত করে। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বললেন, সেন্সরযুক্ত বাতির মধ্যে বেশ কিছু কালার লাইট আছে তাঁদের। হলুদ, সবুজ, লালসহ আরও কিছু রঙের এসব বাতি তাঁরা প্রস্তুত করেন। দাম ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
বৈদ্যুতিক বাতি প্রস্তুতকারী আরেক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকমও দুই ধরনের রঙিন বাতি বাজারজাত করছে। প্রতিষ্ঠানটির লাইটিং প্রজেক্টসের প্রকৌশলী সুদীপ্ত রায় বললেন, এলইডি স্ট্রিপ নামের একধরনের রঙিন বাতি আছে তাঁদের। প্রতি মিটার অনুসারে এটি ব্যবহার ও বিক্রি হয়ে থাকে। বিভিন্ন রঙের হয় এই বাতি। প্রতি মিটারের দাম ৩১৫ থেকে ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া বাড়িতে রঙিন বাতি ব্যবহারের জন্য লাস্টার নামের একটি বাতিও আছে তাঁদের। দামও হাতের নাগালে।