বিক্রির আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছিল, বিক্রির জন্য ইয়াহুই উঠেপড়ে লেগেছিল। অবশেষে গত সোমবার মার্কিন মোবাইল সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান ভেরিজোন ওয়্যারলেসের কাছে ৪৮৩ কোটি ডলারে বিক্রি করা হয় ইয়াহুর মূল ইন্টারনেট ব্যবসা। অথচ ২০০০ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
প্রযুক্তিভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল টেকক্রাঞ্চ ইয়াহু সম্পর্কে লিখেছে, ‘গুগলের গুগল হয়ে ওঠার আগে ইয়াহু ছিল সবার গুগল।’ এই এক বাক্যে ইয়াহুর সার্বিক ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমান প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওয়েবের ধারণার শুরু হয়েছে ইয়াহু দিয়ে। এরপর দৃশ্যপটে গুগলের উদয় হলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
ইয়াহু বিক্রি হওয়ার কারণ
সার্চ ইঞ্জিনটির ব্যবসায়ের মূল পুঁজি ছিল এর ব্যবহারকারী। কিন্তু গত এক দশকে গুগল ও ফেসবুকের সঙ্গে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠেনি ইয়াহু। ফলে ব্যবহারকারী কমতে থাকে, পিছিয়ে পড়ে অনলাইন বিজ্ঞাপনে। যুক্তরাষ্ট্রে সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে যেখানে গুগলের দখল ৬৪ শতাংশ, ইয়াহুর সেখানে মাত্র ১২ শতাংশ। চলতি বছরে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী আয়ের ৩৯ শতাংশ গুগল ও ১৫ শতাংশ ঘরে তুলেছে ফেসবুক-ইয়াহুর আয় মাত্র ৩ শতাংশ।
শেয়ারহোল্ডারদের চাপ
বর্তমান শতাব্দীর শুরুটা ছিল ইয়াহুর স্বর্ণযুগ। এরপরের সময়টাতে আলোর রেখা ক্রমেই কমতে থাকে। তবে ২০১২ সালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পর মারিসা মেয়ার প্রতিষ্ঠানটির ভাগ্য ফেরাতে জোর চেষ্টা করেন, কিছুদিন সাফল্যের মুখও দেখেন। টিম কুগলের পর তিনিই ইয়াহুর শেয়ারমূল্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ান। তবে গত বছর এক ধাক্কায় ৪৪০ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি, মোট মূল্য কমে যায় আবার।
ইয়াহুর মূল ব্যবসায় বিক্রি হয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডাররা চীনা ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আলিবাবায় ১৫ শতাংশ (৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার) এবং ইয়াহু জাপানে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ (৮৭০ কোটি ডলার) শেয়ারের মালিক থাকবে।
কেন ইয়াহু কিনছে ভেরিজোন?
ইয়াহুর সঙ্গে অনেকেরই সম্পর্কটা আবেগের। বিবিসির উত্তর আমেরিকান প্রযুক্তি প্রতিবেদক ডেভ লি যেমন লিখেছেন, ‘ইয়াহু আমার প্রথম ব্যবহার করা ওয়েবসাইট। আমাকে ও আমার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের এক ইন্টারনেট ক্যাফেতে নিয়ে গিয়ে আমার বাবা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের দুনিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রবেশ করিয়েছিলেন।’ কিন্তু ভেরিজোন ব্যবসা বোঝে, আবেগ-অনুভূতির স্থান সেখানে নেই। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ধারণা করা হচ্ছে, বছর খানেক আগে ৪৪০ কোটি ডলারে কেনা এওএলের সঙ্গে ইয়াহু এক করে ফেলা হবে।
ভেরিজোনের লক্ষ্য হাফিংটন পোস্ট, এনগ্যাজেট, ইয়াহু ফাইন্যান্স এবং টেকক্রাঞ্চের মতো স্বনামধন্য ওয়েব পোর্টালগুলো এক করে ভেরিজোনের জন্য বিজ্ঞাপন সরবরাহের মাধ্যম (কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক-সিডিএন) জোরদার করা। এই শিল্পটি এমনই বড় যে প্রতিযোগিতায় নেমে তৃতীয় স্থানটাও ভেরিজোনের জন্য অনেক সম্মানের। ইয়াহু একা যা করতে পারেনি, এওএলের সঙ্গে যুক্ত করে সে কাজটি করতে চায় ভেরিজোন।
মেহেদী হাসান, সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি