গণিতে কিছু বিষয় আমরা স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিই। মনে কখনো প্রশ্ন ওঠে না। যেমন: আমরা বলি ক = খ। মানে ক ও খ সমান। কিন্তু মাঝখানে যে ‘=’ দিয়ে ক ও খ-কে ‘সমান’ বোঝাচ্ছি, সেটা কীভাবে প্রচলিত হলো? এ সম্পর্কে আমরা খুব বেশি চিন্তা করি না। এর পেছনে যুক্তিই–বা কী? এই চিহ্ন প্রায় ৪৬০ বছর আগে ১৫৫৭ সালে উদ্ভাবন করেন ওয়েলশের গণিতজ্ঞ রবার্ট রেকোর্ড (Robert Recorde)। তাঁর লেখা ‘দ্য হোয়েটসটোন অব উইট’ (The Whetstone of Witte) বইতে তিনি এ বিষয়ে লেখেন। বারবার ‘এটার সমান এটা’ কথাটি লেখার কোনো অর্থ হয় না। বরং এর পরিবর্তে ‘=’ চিহ্নটি ব্যবহার করা হলে সবদিক থেকেই সুবিধা। কিন্তু ঠিক এই চিহ্নটি কেন? এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, সমান দৈর্ঘ্যের দুটি সমান্তরাল সরলরেখা এত বেশি সমান যে এর চেয়ে আরও বেশি সমান আর কিছু হতে পারে না! এমন অকাট্য যুক্তি আর কী হতে পারে? তাই এরপর থেকে গণিতে ‘=’ চিহ্নটির চল হয়ে গেল। খুব মজার ব্যাপার, তাই না?
আরেকটি মজার তথ্য দেখুন। আমরা গণিতে ‘পারফেক্ট নাম্বার’–এর সংজ্ঞা দিই এভাবে: যেসব সংখ্যার উৎপাদকগুলোর সমষ্টি সেই সংখ্যাটির সমান, তাকে পারফেক্ট নাম্বার বলা হয়। যেমন: ৬ একটি পারফেক্ট নাম্বার, কারণ এর উৎপাদকগুলো হলো ১, ২ ও ৩। এদের যোগফল = (১ + ২ + ৩) = ৬। এর পরের পারফেক্ট নাম্বার হলো ২৮। কারণ, ২৮ এর উৎপাদকগুলো হলো ১, ২, ৪, ৭ ও ১৪ এবং এদের যোগফল = (১ + ২ + ৪ + ৭ + ১৪) = ২৮। এবার বলুন তো এর পরের পারফেক্ট নাম্বারটি কত? পারলেন না, তাই তো? খুব সহজ নয়। পরবর্তী পারফেক্ট নাম্বার হলো ৪৯৬।
এ বিষয় দুটি মেইন স্ট্রিট, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত রেমন্ড ব্লামসহ চারজন লেখকের লেখা ‘ক্ল্যাসিক ম্যাথম্যাজিক’ বই থেকে সংগৃহীত।
এ সপ্তাহের ধাঁধা
রিতা ও মিতা দুই বোন। রিতা বড়। ওরা দুজনে কয়েকটি করে গ্যাসবেলুন কিনল। কিছুক্ষণ পর রিতা বলল, আমার হাতে এত বেলুন, সামলাতে পারছি না। তুই কি জানিস, যদি তোকে দুটি বেলুন দিই, তাহলে তোর আর আমার বেলুন সমান হবে? উত্তরে মিতা বলল, আরে, এ তো সহজ হিসাব। তুই কি জানিস, আমি যদি তোকে মাত্র ১টা বেলুন দিই, তাহলে তোর বেলুন আমার বেলুনের তিন গুণ হবে? এখন বলুন তো কার হাতে কয়টা বেলুন আছে?
খুব সহজ। অনলাইনে মন্তব্য আকারে অথবা quayum@gmail.com ই–মেইলে আপনাদের উত্তর পাঠিয়ে দিন। সঠিক উত্তর দেখুন আগামী রোববার অনলাইনে।
গত সপ্তাহের ধাঁধার উত্তর
ধাঁধাটি ছিল এ রকম: ক্ষুদ্রতম কোন পূর্ণ বর্গসংখ্যা ৮, ১৫ ও ২০ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য?
উত্তর
ক্ষুদ্রতম পূর্ণ বর্গসংখ্যাটি ৩৬০০
প্রায় সবাই সঠিক উত্তর দিয়েছেন। ধন্যবাদ।
কীভাবে উত্তর বের করলাম
আমরা দেখছি ৮, ১৫ ও ২০–এর ল.সা.গু. ১২০ = ৪ × ৫ × ৩ × ২। এখানে শুধু ৪ পূর্ণ বর্গসংখ্যা। কিন্তু ৫, ৩ ও ২ পূর্ণবর্গ নয়। তাই ল.সা.গু.কে এই তিনটি সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই আমরা নির্ণেয় পূর্ণ বর্গসংখ্যাটি পাব। ১২০ × ৫ × ৩ × ২ = ১২০ × ৩০ = ৩৬০০। এটাই উত্তর। এটা পূর্ণ বর্গসংখ্যা, যার বর্গমূল ৬০। এবং একই সঙ্গে এটি ৮, ১৫ ও ২০ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য।
আব্দুল কাইয়ুম, সম্পাদক, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা