করোনার কারণে দীর্ঘদিন ফ্যাশন হাউসগুলো বন্ধ ছিল। তাহলে বেচা-বিক্রি কীভাবে হলো? দেশের বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউসকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে জানা যায়, কেউই আসলে গুটিয়ে বসে থাকেনি। দ্রুতগতির ফোর-জি ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার এই যুগে ফ্যাশন হাউসগুলোর কেউ অনলাইনে নতুন করে শুরু করেছে, কেউবা আরও বেশি সচল হয়েছে।
দেশের অনেক দিনের পুরোনো ফ্যাশন হাউস নিপুণ আগে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করত না। বিভিন্ন প্রমোশনের কাজই তাদের ফেসবুকে দেখা যেত। কিন্তু এখন তারা ফেসবুকে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। দেশে করোনা মহামারির প্রকোপ শুরুর পর নিপুণও তাদের ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন এনেছে।
নিপুণের ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে প্রমোশনের নানান আপডেট দেওয়া হতো। কিন্তু করোনার মধ্যে দেখলাম, অনেক দিন সবকিছু বন্ধ। মানুষও অনলাইন শপিংয়ে ঝুঁকছে। তাই জুলাই মাস থেকে আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে অর্ডার নেওয়া শুরু করি। তবে এর আগে আমরা অন্যদের প্ল্যাটফর্মে আমাদের পণ্য বিক্রি করতাম।’
নিপুণের ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখা গেল, তারা করোনা মহামারি শুরুর আগে প্রমোশনের কাজই করেছে। তবে মহামারির পর অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রে সরব হয়েছে। অনলাইন, শপিং ট্যাগ দিয়ে তারা নানা পোস্ট করছে, অনলাইন শপিংয়ের অফারগুলো জানান দিচ্ছে এবং অর্ডার করার জন্য যোগাযোগের কথাও বলছে।
দেশের আরেক ব্র্যান্ড টুয়েলভ ক্লোথিংও মহামারির মধ্যে ওয়েবসাইট চালু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের ই-কমার্স এক্সিকিউটিভ সামির সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কিছু নিয়মিত ক্রেতা ছিল, করোনার মধ্যে দেখলাম যে তারা আসতে পারছে না। এ ছাড়া অনেক দিন আউটলেট বন্ধ ছিল। তখন কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিল যে ওয়েবসাইট চালু করবে। ক্রেতারা যাতে ঘরে বসেই আমাদের পণ্য নিতে পারে। এখনো সেটা চলছে। এখন দিনে ১৫ থেকে ২০টা অর্ডার পেয়ে থাকি। আগে এতটা হতো না। এবার মহামারিতে ১১৩ শতাংশ গ্রোথ ছিল অনলাইনে।’
টুয়েলভের ওয়েবসাইট চালুর আগে তাদের ফেসবুক থেকে কিছু অর্ডার হতো। মহামারির মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটা দিন দিন বাড়ায় তারাও ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকে মনোযোগও বেশি দিচ্ছে। সামির বলেন, ‘মানুষ ভালোই কেনাকাটা করছে। নিরাপত্তার কথা মানুষকে ভাবতে হয়। মানুষ চায় এখন ঘরে বসে প্রোডাক্টটা পাওয়ার জন্য।’
সাদাকালোর বসুন্ধরা দেশী দশের আউটলেট ম্যানেজার শাখাওয়াত হোসেন নিজের স্ত্রীর উদাহরণ দিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট খুব বেশি সহজলভ্য হওয়ায় সারাক্ষণই মানুষের হাতে থাকে মুঠোফোন। সময় পেলেই তারা ব্রাউজ করে। সামনে যেটা চোখে পড়ে, পছন্দ হলে ঝটপট কিনে নেয়। আমার স্ত্রীও তাই করে। জ্যাম, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি—নানান কিছু মাথায় রেখে খুব প্রয়োজন না হলে কোনো শপে এখন যায় না। দরকারি জিনিস অনলাইনে কিনে নিচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ‘সাদাকালোও অনলাইনে আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছে। করোনা দেখিয়ে দিল, নির্দিষ্ট একটা মডেল নিয়ে পড়ে থাকলেই হবে না। পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে ভবিষ্যতের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গেলে।’
দেশীয় পোশাকের আরেক ব্র্যান্ড দেশাল অবশ্য আগে থেকেই অনলাইনে কেনার সুযোগ রেখেছে। তাই করোনা মহামারিতে তারা এর সুফল পেয়েছে। দেশালের ম্যানেজিং পার্টনার সবুজ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশাল কয়েক বছর থেকেই অনলাইনে কেনার সুযোগ রেখেছে। অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ আগে থাকা আমাদের জন্য কাজে দিয়েছে। সবকিছু যখন বন্ধ ছিল, তখন আমাদের শূন্য হয়ে থাকতে হয়নি। অন্তত কর্মীদের ধরে রাখতে পেরেছি, যা কিছু বেচাবিক্রি হয়েছে তা দিয়ে। তবে হ্যাঁ, আউটলেটে যে রকম হতো, তা হয়নি, তবে বসেও যেতে হয়নি।’
করোনাভাইরাস মহামারিতে ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে অনলাইনভিত্তিক অনেক উদ্যোক্তা যেমনি তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলোও এ প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভিড়িয়েছে। মানুষ চলতে-ফিরতেই মুঠোফোন থেকে পণ্য পছন্দ করে অর্ডার করছে এবং নিজ গন্তব্যে তা পেয়ে যাচ্ছে। তাই এই ফ্যাশন হাউসগুলোও এখন সরব অনলাইন মার্কেটিং এবং পণ্য বিক্রিতে।