করোনার ভ্যাকসিনগুলো এখন যে অবস্থায় আছে

করোনাভাইরাসের ভ‌্যাকসিন তৈরিতে নানা পথে হাঁটছেন গবেষকেরা। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের ভ‌্যাকসিন তৈরিতে নানা পথে হাঁটছেন গবেষকেরা। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখনো ভ‌্যাকসিনকেই ভরসা মানছেন বিজ্ঞানীরা। ভ‌্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতাও এখন চরমে। অনেকেই জানতে চান ভ‌্যাকসিনের খবর কী, আর কোন অবস্থায় আছে। জেনে রাখতে পারেন, সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ১৩৫টির বেশি ভ্যাকসিন বিকাশ রয়েছে। ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক‌্যাল কোম্পানি আস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি কেবল একটি ভ‌্যাকসিনই তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে, যাতে ভ‌্যাকসিনটি কার্যকর কি না, তা পরীক্ষা হয়ে যাবে।

নিউইয়র্ক টাইমস ভ‌্যাকসিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি ভ্যাকসিন ট্র্যাকার তৈরি করেছে, যাতে কোষে বা প্রাণীদের মধ্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে—এমন সম্ভাব‌্য ভ্যাকসিনসহ, মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে, এমন সব ভ‌্যাকসিন ঠাঁই পেয়েছে। ওই ভ‌্যাকসিন ট্র্যাকার অনুযায়ী, ১২৫টির বেশি ভ‌্যাকসিন প্রিক্লিনিক‌্যাল পর্যায়ে রয়েছে। ৭টি করে ভ‌্যাকসিন ধাপ ১ ও ধাপ ২–এ রয়েছে। তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে কেবল অক্সফোর্ডের ভ‌্যাকসিনটি।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ভ্যাকসিন সাধারণত ক্লিনিকে পৌঁছানোর আগে কয়েক বছর গবেষণা এবং পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, তবে বিজ্ঞানীরা আগামী বছরের মধ্যে একটি নিরাপদ এবং কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করছেন।

গবেষকেরা বলছেন, গত জানুয়ারি মাসে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচনের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের কাজ শুরু হয়েছিল। মানুষের মধ্যে প্রথম ভ্যাকসিন সুরক্ষা পরীক্ষা মার্চ মাসে শুরু হয়েছিল। তবে সামনের পথ অনিশ্চিত। কিছু পরীক্ষা ব্যর্থ হবে এবং কিছু সুস্পষ্ট ফলাফল ছাড়াই শেষ হতে পারে। তবে কয়েকটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে প্রতিরোধব্যবস্থা উদ্দীপনায় সফল হতে পারে।

ল্যাব বা পরীক্ষাগারে থেকে ক্লিনিক পর্যন্ত একটি ভ্যাকসিনকে বিকাশ চক্র পার করতে হয়। যার শুরুতেই থাকে প্রি–ক্লিনিক্যাল টেস্টিং বা প্রাকৃতিক পরীক্ষা। বিজ্ঞানীরা ইঁদুর বা বানরের মতো প্রাণীতে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করেন, যাতে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে কি না, তা বোঝা যায়। পরের ধাপ বা পরীক্ষার প্রথম ধাপটি হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা পরীক্ষা। বিজ্ঞানীরা সুরক্ষা এবং ডোজ পরীক্ষা করার পাশাপাশি অল্পসংখ্যক লোককে এই ভ্যাকসিনটি দিয়ে প্রতিরোধব্যবস্থাটিকে উদ্দীপিত করে তা নিশ্চিত করে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সম্প্রসারিত পরীক্ষা করা হয়। বিজ্ঞানীরা শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো বিভিন্ন দলে বিভক্ত কয়েক শ লোককে এই ভ্যাকসিনটি দেন, যাতে এই ভ্যাকসিন তাদের মধ্যে আলাদাভাবে কাজ করে কি না, তা দেখা যায়। এই পরীক্ষায় ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জাগ্রত করার ক্ষমতা দেখা হয়। তৃতীয় ধাপে কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। বিজ্ঞানীরা কয়েক হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেন এবং কতজন সংক্রমিত হয়েছে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে ভ্যাকসিন করোনভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে কি না। এরপর আসবে অনুমোদনের বিষয়টি।

প্রতিটি দেশের নিয়ন্ত্রকেরা পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে ভ্যাকসিন অনুমোদন করবেন কি না, তা স্থির করেন। মহামারি চলাকালীন একটি ভ্যাকসিন আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের আগে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড প্রোগ্রামটি ভ্যাকসিন কার্যকর করার প্রমাণ হওয়ার আগেই পাঁচটি ভ্যাকসিন নির্বাচন করে বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল এবং সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বিকাশের গতি বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো ধাপগুলো একত্র করা। কিছু করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন এখন প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে। এবার দেখা যাক কোন ভ্যাকসিন কোন পর্যায়ে রয়েছে:

জেনেটিক ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াকে প্ররোচিত করতে করোনাভাইরাসের নিজস্ব এক বা একাধিক জিন ব্যবহার করে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি এমআরএনএ ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড প্রোগ্রামের আওতায় আছে এটি। গত মে মাসে প্রথম ধাপে আটজনের ওপর পরীক্ষার তথ্য প্রকাশ করে শেয়ারবাজারে সাড়া ফেলেছিল মডার্না। জুলাই মাসে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করবে তারা। ২০২১ সালের শুরুতে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার ব্যাপারে আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি।

জার্মান সংস্থা বায়োএনটেক নিউইয়র্কের ফাইজার ও চীনা ওষুধ প্রস্তুতকারী ফসুন ফার্মা একসঙ্গে এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। মে মাসে ফাইজার তাদের ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে। অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের আওতায় থাকা ভ্যাকসিনটি নিয়ে ফাইজার আশা করছে, ট্রায়ালে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শরতে জরুরি ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

মে মাসে আমেরিকান সংস্থা ইনোভিও একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা গেছে যে তাদের ডিএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন ইঁদুরের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। মানুষের মধ্যে সুরক্ষা পরীক্ষা এখন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে এবং জুনের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু হবে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা আত্মপরিবর্ধনকারী আরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরি করছেন। তাঁরা ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য বিশেষ কোম্পানি তৈরি করছেন, যাতে তাঁদের ভ্যাকসিন সফল হলে গরিবদের কাছে সহজে তা পৌঁছে দেওয়া যায়। ইম্পেরিয়াল কলেজ ও হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মর্নিংসাইড ভেঞ্চার্সের উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকুইটি গ্লোবাল হেলথ এ ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীদের তৈরি আরএনএ ভ্যাকসিন মূলত পেশিকোষে জিনগত নির্দেশ পাঠায়, যাতে কোষ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে পারে। এ প্রোটিনের উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধী সক্ষমতাকে প্ররোচিত করে, যাতে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি হয়। ভ্যাকসিনটি প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় যাচ্ছে। ১৫ জুন থেকে ৩০০ মানুষকে নিয়ে দুটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হবে। প্রথম ধাপের পরীক্ষা সফল হলে ছয় হাজার মানুষকে নিয়ে আগামী অক্টোবরে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতেই যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন দিতে পারবেন তাঁরা।

মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রশাসন জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কিউরভ্যাকের গবেষণা সরিয়ে নিতে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল। সংস্থাটি এখনো কোভিড-১৯–এর জন্য মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করেনি, তবে একই আরএনএ নকশার ওপর ভিত্তি করে একটি রেবিজ ভ্যাকসিন জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ের নিরাপত্তা পরীক্ষায় পাস করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এর জার্মান পরীক্ষাগারে বছরে কয়েক লাখ ডোজ তৈরি করা যাবে।

ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন

এ ধরনের ভ্যাকসিন মূলত একটি ভাইরাস ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের জিন কোষে সরবরাহ করে এবং প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্ররোচিত করে।

ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তৈরি সিএইচএডিওএক্সওয়ান ভ্যাকসিনটি শিম্পাঞ্জি অ্যাডেনোভাইরাসভিত্তিক। ভ্যাকসিনটি প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে এবং ইংল্যান্ড ও ব্রাজিলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করছে। অপারেশন ওয়ার্প স্পিড কর্মসূচিতে থাকা প্রকল্পটি অক্টোবরের মধ্যে জরুরি ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারে।

চীনা সংস্থা ক্যানসিনো বায়োলজিক্স দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজির অংশীদার হয়ে অ্যাড৫ নামে একটি অ্যাডেনোভাইরাসভিত্তিক ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছে। মে মাসে তারা ল্যানসেটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল, প্রথমবারের মতো কোনো কোভিড–১৯ টি ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার তথ্য বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করে তারা। বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে।

বোস্টনের বেথ ইসরায়েল ডিকননেস মেডিকেল সেন্টারের গবেষকেরা বানরের ওপর অ্যাড২৬ নামের একটি অ্যাডেনোভাইরাস পরীক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন। অপারেশন ওয়ার্প স্পিড প্রোগ্রামের আওতায় এ ভ্যাকসিন জুলাইয়ের শেষের দিকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করবে।

সুইস সংস্থা নোভার্টিস ম্যাসাচুসেটস আই এবং এয়ার হাসপাতালের জিন থেরাপির চিকিত্সার ভিত্তিতে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করবে। এতে অ্যাডেনো-অ্যসোসিয়েটেড ভাইরাস নামে একটি ভাইরাস করোনাভাইরাস জিনের টুকরো কোষগুলোতে সরবরাহ করে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা চলতি বছরের শেষের দিকে শুরু হতে চলেছে।

আমেরিকান সংস্থা মের্ক মে মাসে ঘোষণা করেছিল যে এটি ভেসিকুলার স্টোমাটাইটিস ভাইরাস থেকে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করবে। একই পদ্ধতির মাধ্যমে তারা ইবোলার একমাত্র অনুমোদিত ভ্যাকসিন সফলভাবে ব্যবহার করেছিল। সংস্থাটি আইএভিআইয়ের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে।

প্রোটিনভিত্তিক ভ্যাকসিন

এ ধরনের ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস প্রোটিন বা প্রোটিন খণ্ড ব্যবহার করে ইমিউন বা প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করতে পারে।

মে মাসে মেরিল্যান্ড-ভিত্তিক নোভাভ্যাক্স করোনাভাইরাস প্রোটিনের টুকরো বহনকারী মাইক্রোস্কোপিক কণা দ্বারা তৈরি একটি ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করে। গত এপ্রিলে নোভাভ্যাক্স তাদের ভ্যাকসিন হিসেবে ‘এনভিএক্স-সিওভি২৩৭৩’ শনাক্ত করার ঘোষণা দেয়। এর সঙ্গে ইমিউন প্রতিক্রিয়া বাড়ানোর জন্য নোভাভ্যাক্স তাদের ‘ম্যাট্রিক্স-এম অ্যাডজুভান্টস’ সহায়ক ব্যবহার করার পরিকল্পনার কথা জানায়।

ক্লোভার বায়োফর্মাসিউটিক্যালস করোনাভাইরাস থেকে প্রোটিনযুক্ত একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও উদ্দীপিত করার জন্য ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের (জিএসকে) তৈরি অ্যাডজুভান্টের সঙ্গে এই টিকা নেওয়া হবে।

২০০২ সালে সার্স মহামারি হওয়ার পরে বেলর কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকেরা একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে শুরু করেছিলেন, যা একটি নতুন প্রাদুর্ভাব রোধ করতে পারে। প্রাথমিক ফল ভালো হলেও এর তহবিল ও সমর্থন ছিল না। তবে এখন সার্স ও কোভিড-১৯-এর কারণগুলো মিলে যাওয়ায় গবেষকেরা টেক্সাস চিলড্রেনস হাসপাতালের সঙ্গে অংশীদার হয়ে প্রকল্পটি পুনরুদ্ধার করছেন।

পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় পিটসোভ্যাক নামে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করছে, যা ৪০০টির বেশি চিনির সুচযুক্ত চামড়ার প্যাচের মাধ্যমে ত্বকে দেওয়া হবে। সুচ দ্রবীভূত হয়ে শরীরে ভাইরাস প্রোটিন সরবরাহ করবে।

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে। জুনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওষুধ সংস্থা সিএসএল প্রথম ধাপের পরীক্ষা শুরু করার জন্য একটি অংশীদারত্ব ঘোষণা করেছিল। ২০২১ সালে কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

ফরাসি সংস্থা সানোফি পোকার কোষের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠা ইঞ্জিনিয়ারড ভাইরাস ব্যবহার করে ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করবে। জিএসকে এই প্রোটিন সংযোজনকারীদের সঙ্গে পরিপূরক করবে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জাগিয়ে তোলে।

ভ্যাক্সার্টের ভ্যাকসিন একটি মুখে খাওয়ার বড়ি বা ট্যাবলেট, যা বিভিন্ন ভাইরাস প্রোটিনযুক্ত। জুন আমেরিকান সংস্থাটি ঘোষণা করেছে, তারা গ্রীষ্মেই প্রথম ধাপের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সম্পূর্ণ ভাইরাস ভ্যাকসিন

এ ভ্যাকসিনে মূলত একটি দুর্বল করোনাভাইরাস বা করোনাভাইাসের নিষ্ক্রিয় সংস্করণ ব্যবহার করে প্রতিরোধী সক্ষমতাকে প্ররোচিত করা হয়।

বেইজিংভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের গবেষকেরা সম্পূর্ণ ভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরি করছেন। সংস্থাটি ১০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে একটি বাণিজ্যিক প্ল্যান্ট তৈরি করছে। বর্তমানে সিনোভ্যাকের তৈরি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। এটি নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষা করতে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। গত মাসে সিনোভ্যাক একাডেমিক জার্নাল ‘সায়েন্স’–এ তাদের গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে, যাতে করোনাভ্যাক নামে তাদের ভ্যাকসিনটি বানরের ওপর পরীক্ষায় সফল বলে জানানো হয়। এটি বানরের শরীরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছিল।

চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্ম প্রাণিদেহে তাদের ভ্যাকসিন পরীক্ষা থেকে ইতিবাচক ফলের খবর প্রকাশ করেছে। চীনা গবেষকেরা সেল সাময়িকীতে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে তৈরি ভ্যাকসিন প্রার্থী বিবিআইবিপি-করভি সার্স-কোভ-২–এর বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডিকে প্ররোচিত করতে পারে। তাঁরা পরীক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেছে এবং বেইজিংয়ে বছরে ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা করছে।

চায়নিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজির গবেষকেরা পোলিও এবং হেপাটাইটিস এ–র জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা কোভিড-১৯–এর জন্য একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের পরীক্ষা চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: