করোনার দুর্দশায় থাকা বিশ্ব যখন টিকার অপেক্ষায় দিন গুনছে, তখন আশার বদলে নেতিবাচক কথা শোনাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, করোনার সম্ভাব্য টিকা পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো মানেই তা প্রায় প্রস্তুত হয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক আকারে প্রয়োগের মতো ঘটনা নয়।
গত বৃহস্পতিবার এনবিসি নাইটলি নিউজ নামের একটি শোতে ভার্চ্যুয়াল প্যানেল আলোচনায় এ কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, ‘তৃতীয় ধাপ মানে টিকা চূড়ান্ত নয়। এর অর্থ এই প্রথম কোনো টিকা সাধারণ মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখার উপযোগী হয়েছে। অন্যথায় এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের ওপর প্রয়োগ থেকে দেখতে হবে যে তা সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতে পারে কি না।’
বর্তমানে বিশ্বে ছয়টি সম্ভাব্য টিকা মানবপরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে ফাইজার ও মডার্নার তৈরি টিকাও রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ১৫০টির বেশি টিকার উন্নয়নকাজ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত সব কটি টিকার কেবল নিরাপত্তার বিষয়টি অল্প কিছু মানুষের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। এতে টিকার প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা টিকা নিয়ে একটি দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিকা কোনো দরজা নয়। এটা একটা দৌড়। বিশাল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে পারে কি না, এটা সেই দৌড়।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, বিজ্ঞানীরা নিরাপদ ও কার্যকর টিকা খুঁজে পাবেন—এমন আশা থাকলেও এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। করোনার টিকা অনুসন্ধানে অগ্রগতির কথা বললেও এ নিয়ে সতর্ক করেন তিনি। আশা থাকলেও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, কখনো এর খোঁজ নাও মিলতে পারে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত সোমবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তেদরোস বলেন, এ মুহূর্তে কোনো আলোকরেখার দেখা নেই। কখনো তা নাও থাকতে পারে। তিনি বিশ্বব্যাপী মানুষকে সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়ার ও মাস্ক পরার মতো ব্যবস্থাগুলো মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এ বছর শেষের আগে টিকা থাকবে, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক আগেই আসবে।
ট্রাম্পের মন্তব্যের পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে টিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই এমন কথা বলা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই করোনার টিকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকতে পারে বলে আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ৩ নভেম্বরের আগেই টিকা হাতে থাকা সম্ভব। জেরাল্ডো রিভেরা রেডিও প্রোগ্রামে তাঁকে কবে টিকা আসবে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বছর শেষ হওয়ার আগে টিকা আসবে। এমনকি তার আগেও চলে আসতে পারে।’
দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ অন্তত একটি টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের শুরুতেই টিকা তৈরি হয়ে যেতে পারে, তবে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
টিকা তৈরি ও পরীক্ষা করতে যেখানে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়, সেখানে অনেকটা রাতারাতিই শতভাগ সফল টিকা তৈরি করে ফেলার দাবি করেছে রাশিয়া। এ নিয়ে তাই শুরু হয়েছে বিতর্ক। জুলাই মাসেই টিকার প্রথম ধাপের পরীক্ষার কথা বলেছিল দেশটি। আগস্ট মাসে এসে টিকার তৃতীয় ধাপের সফলতার কথা বলছে তারা।
রাশিয়া তাদের টিকার সফলতার দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। রাশিয়ার দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত হয়নি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার পর মানুষের শরীর কীভাবে সাড়া দেয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। টিকা তৈরির জন্য এর উত্তর জানা গুরুত্বপূর্ণ। এ টিকা কতটা দ্রুত মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ভায়াল, সুচ, সিরিঞ্জ সরবরাহের মতো বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যান্টনি ফাউসি বলেন, ২০২১ সালের কয়েক মাস না হলে মার্কিন জনগণের কাছে বিস্তৃত আকারে টিকা থাকবে না।