ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে অষ্টম পর্ব।
ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার সময় সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি মনে উঁকি দেয়, সেটি হলো কখন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ শুরু করব। বিনা মূল্যে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকায় অনেকেই কাজ শেখার পাশাপাশি এক বা একাধিক মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন। ভুল পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা সম্পর্কেও ভুল তথ্য দেন অনেকে। শুধু তা–ই নয়, ভুল পদ্ধতিতে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করায় তাঁদের অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যায়। তাই ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি ধৈর্য ধরতে হবে। নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই মার্কেটপ্লেসগুলোতে অ্যাকাউন্ট খোলা ঠিক নয়। এ জন্য সবার আগে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। নির্দিষ্ট বিষয়ে যেকোনো কাজ নির্ভুলভাবে করতে পারলেই মার্কেটপ্লেসগুলোতে অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে সাধারণত ক্লায়েন্টরা কাজ পোস্ট করে জানতে চায়, আপনি কত টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি করতে পারবেন। অনেক ক্লায়েন্ট টাকার পরিমাণও উল্লেখ করে দেয়। আপনি কাজটি করতে আগ্রহী হলে তারা দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য এ ধরনের কাজে আপনার পূর্বাভিজ্ঞতা আছে কি না তা জানতে চায়। উত্তরে সন্তুষ্ট হলে তারা আপনার সঙ্গে সরাসরি বা ই–মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে কাজটির বিষয়ে আপনার কারিগরি জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট কাজ করানোর জন্য কম খরচে দক্ষ কর্মী খুঁজে থাকে। ফলে আপনি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে না পারলে ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দেবে না।
অনেকেই খুব কম খরচে ক্লায়েন্টকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কাজ সংগ্রহ করেন। কাজ পাওয়ার আশায় এমনটি করলেও কাজের মান ভালো না হলে ক্লায়েন্টরা আপনাকে খারাপ রেটিং দেবে। ফলে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হবে।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরুর আগে এক থেকে দেড় বছর নির্দিষ্ট বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, আপনি যত ভালো কোচিং সেন্টার থেকেই প্রশিক্ষণ নেন না কেন, সেগুলো সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তাই প্রশিক্ষণ শেষ করার পার শেখানো বিষয়গুলো ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। অনলাইন থেকেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আপনি যখন মনে করবেন নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক ধাপ ভালোভাবে শিখতে পেরেছেন, তখন নিজে নিজেই বিভিন্ন প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে করতে হবে। এরপর অনলাইনে ফ্রিল্যান্স–বিষয়ক বিভিন্ন কমিউনিটিতে প্রকল্প জমা দিয়ে সবার কাছে মতামত জানতে হবে। তাদের মতামত বা পরামর্শ অনুযায়ী প্রকল্পের মান উন্নত করার পাশাপাশি কোন ধরনের টুলস শিখলে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে সহজে কাজ পাওয়া যাবে, তা জানতে হবে। এভাবে কয়েক মাস চেষ্টা করলে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
প্রশিক্ষণের পর কোনো ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে যৌথভাবে মার্কেটপ্লেসে কাজ করা যায়। এভাবে কাজ করার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজের চাহিদা জানার পাশাপাশি আপনার অভিজ্ঞতাও বৃদ্ধি পাবে। যা পরে আপনাকে আলাদাভাবে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে সহায়তা করবে।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ না হলে ফ্রিল্যান্স কাজে সফল হওয়া বেশ কষ্টকর। তাই তাড়াহুড়া না করে আগে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। দক্ষতা থাকলে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আপনার কাজের অভাব হবে না। ফলে সহজেই সফলতা আসবে এবং আয়ের পরিমাণ বেশি হবে।
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস পরিচিতি