মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খারাপ সময়েই ডলারে আধিপত্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। সম্ভাব্য ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে ইউয়ান চালু করার কথা ভাবছে দেশটি, যা আর্থিক খাতের দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে। এ পথ ধরেই বিটকয়েনের মতো সম্ভাব্য ডিজিটাল মুদ্রার বিকাশের পথে এগিয়ে যেতে পারে দেশটি।
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে অনেক দেশের সরকার অর্থের পরিবর্তিত প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় আগে চালু হয়েছিল ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন এবং গত বছর ফেসবুক লিবরা চালুর মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। তবে ফেসবুকের মুদ্রা চালুর বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভালোভাবে নিতে পারেননি। এ নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
এখন চীনের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ পূর্ব এশিয়ার জন্য ক্রিপটোকারেন্সি স্কিম চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যাতে কয়েকটি মুদ্রাকে একত্র করে বিটকয়েন, ফেসবুকের লিবরা, এমনকি ডলারকে টেক্কা দেওয়া হবে। করোনার প্রভাবে পড়া অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণে লড়াই করতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। এ সুযোগ নিতে চায় গ্রুপটি।
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটকয়েনের মতো ‘ইস্ট এশিয়া ক্রিপটোকারেন্সি স্কিম’–এর প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান, জাপানিজ ইয়েন, দক্ষিণ কোরিয়ার ওন ও হংকং ডলারকে যুক্ত করা। এ মাসে রাজনৈতিক উপদেষ্টা সংস্থা চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসুলেটিভ সম্মেলনে এক সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। ওই উপদেষ্টা পরিষদের ১০ সদস্যের উপস্থাপন করা পরিকল্পনাটি মনোযোগ কেড়েছে, কারণ তাদের মধ্যে রয়েছে চীনা ট্রাভেল সেবাদাতা সিট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা নেইল সেন, হংকংয়ের সাবেক প্রধান সচিব হেনরি ট্যাং প্রমুখ।
আঞ্চলিক ক্রিপ্টোকারেন্সি চারটি মুদ্রার দ্বারা সমর্থিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে তাদের অর্থনৈতিক আকারের ওপর ভিত্তি করে এর মান নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে চীনের ইউয়ান ও জাপানের ইয়েন ৬০ ও ২০ শতাংশ হিসাব ধরা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অবনতি ঘটার বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজ করার জন্য এই প্রকল্প আন্তসীমান্ত পেমেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করবে। গত এপ্রিল মাসে চীনের স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চীন তাদের বড় চারটি শহরে স্থানীয় ডিজিটাল মুদ্রার লেনদেন নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রস্তাব এসেছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে নরওয়ে, সুইডেন, জাপান তাদের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা তৈরিতে কাজ করছে।
ফেসবুকের পরিকল্পিত ডিজিটাল মুদ্রায় নিয়ন্ত্রকের হস্তক্ষেপের অর্থ এটি শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল ডলারের সমতুল্য হিসাবে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। ফেসবুকের তৈরি ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা দেখাশোনা করা প্রতিষ্ঠান লিবরা অ্যাসোসিয়েশন গত এপ্রিল মাসে তাদের সংশোধিত পরিকল্পনা উন্মোচন করেছে, যাতে ডলার এবং ইউরোর মতো পৃথক মুদ্রার ইস্যু দেখা যাবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তাতে কিছু মুদ্রা বিশ্লেষক ডলার বিশ্বের প্রভাবশালী রিজার্ভ মুদ্রার হিসাবে তার অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন।