ইনটেলে বাংলাদেশির নেতৃত্বে যন্ত্রের নাক উদ্ভাবন

নিউরোমরফিক চিপ হাতে নাবিল ইমাম। ছবি: ইনটেল
নিউরোমরফিক চিপ হাতে নাবিল ইমাম।  ছবি: ইনটেল

যন্ত্রের চোখ, কান, কণ্ঠের খবর আমরা পেয়েছি। বাকি ছিল ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা। শীর্ষ প্রসেসর নির্মাতা ইনটেল করপোরেশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এবার সে খবরও দিলেন। তাঁরা এমন ইলেকট্রনিক চিপ তৈরি করেছেন, যা কোনো পদার্থের গন্ধ বা ঘ্রাণ একবার নিলেই পরবর্তী সময়ে তা চিনতে পারবে। অন্যান্য ঘ্রাণের আড়ালে থাকলেও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এই গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশের নাবিল ইমাম। তিনি ইনটেলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিজ্ঞানী। কর্নেল ইউনিভার্সিটির অলফ্যাক্টরি বিশেষজ্ঞ থমাস ক্লেল্যান্ডের সঙ্গে এই উদ্ভাবনের খবর সম্প্রতি বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার মেশিন ইন্টেলিজেন্স-এ প্রকাশ করেন নাবিল।

ইনটেলের নিউরোমরফিক গবেষণা চিপ ‘লোহ্ইহি’ এবং ৭২টি রাসায়নিক সেন্সরের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। কাজ করে প্রাণীর মস্তিষ্কের অলফ্যাক্টরি বাল্বের নিউরনের অনুকরণে। মস্তিষ্কের এই অংশের কাজ হলো ভিন্ন ভিন্ন ঘ্রাণ শনাক্ত করা। উদ্ভাবক দলের ভাষ্য, হয়তো একদিন বাতাসের বিপজ্জনক উপাদান কিংবা লুকিয়ে রাখা মাদক বা বিস্ফোরকের গন্ধ শুঁকে খুঁজে বের করবে এটি। আবার রোগনির্ণয়েও কাজে লাগানো যেতে পারে।

গবেষকদের আশা, লোহ্ইহির মতো নিউরোমরফিক চিপ সময় ও বিদ্যুৎ-সাশ্রয় করে এমন কাজ করতে পারবে, যা বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি পারে না। এর একটি হলো কোনো কাজ প্রথমবারেই সম্পাদন করা। কোনো কিছুর গন্ধ একবার শুঁকলেই পরে সচরাচর তা চিনতে পারে আমাদের মস্তিষ্ক। তবে বর্তমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজ করে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের ডিপ লার্নিং পদ্ধতির সাহায্যে। এতে প্রথমে বিপুল পরিমাণ তথ্য দিয়ে কম্পিউটার বা যন্ত্রকে প্রশিক্ষিত করতে হয়। এতেই বিপুল সময় আর বিদ্যুৎ খরচ হয়। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নতুন শ্রেণির তথ্যের বেলায় পুরো ব্যবস্থাকে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে হয়।

২০১৯ সালে লোহ্ইহি তৈরির ঘোষণা দেয় ইনটেল। ৬৪টি চিপের সমন্বয়ে এটি ৮০ লাখ নিউরনের সমমানের কাজ করে। ৭৬৮টি চিপের সমন্বয়ে আরেকটি সিস্টেম তৈরির পরিকল্পনা আছে ইনটেলের।
মস্তিষ্কের নিউরাল সার্কিটগুলো কীভাবে কঠিন সমস্যার সমাধান দেয়, তা বুঝতে পারলে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে জানিয়েছেন নাবিল ইমাম। পরবর্তী ধাপ হবে সিস্টেমটিকে বড় পরিসরে ব্যবহার করা।

কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। সিস্টেমটিকে কাছাকাছি গন্ধগুলো একই শ্রেণিতে রেখে ভাগ করতে পারতে হবে। যেমন ঘ্রাণ শুঁকেই রাজশাহীর আমের সঙ্গে সাতক্ষীরার আমের পার্থক্য বের করতে হবে। আবার দুটোই যে আম, তাও বুঝতে হবে। এসব প্রতিবন্ধকতা উতরেই গবেষণাগার থেকে বাস্তব সমস্যা সমাধানের মতো পণ্য তৈরি সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নাবিল।

২০০৪ সালে ঢাকায় এ লেভেল সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিনিটি কলেজে স্নাতক করেন নাবিল ইমাম। পরে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। এরপর আইবিএমে এবং বছর দুয়েক হলো ইনটেলে কাজ করছেন নাবিল ইমাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম এবং ব্র্যাকের কর্মকর্তা নাজনীন ইমামের ছেলে।