অনলাইনভিত্তিক অর্থ লেনদেনে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পেপ্যাল
অনলাইনভিত্তিক অর্থ লেনদেনে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পেপ্যাল

আসি আসি করে পেপ্যাল কেন আসে না

অনলাইনভিত্তিক জনপ্রিয় অর্থ লেনদেন (পেমেন্ট) ব্যবস্থা পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে আলাোচনা থাকলেও কবে আসবে পেপ্যাল—এই প্রশ্নর উত্তর এখনো অধরা।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছিলেন ডিসেম্বরেই (২০২১) দেশে চালু হতে যাচ্ছে পেপ্যাল। এদিকে গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, ‘আমরা পেপ্যালের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করছি একটি ভালো সংবাদ দিতে পারব। কিন্তু কবে, কখন, কীভাবে পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হবে বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না। ’

বাস্তবতা হলো, পেপ্যাল গত ডিসেম্বরেও চালু হয়নি। এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায় দেশে পেপ্যাল চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। আদতে সেটি ছিল পেপ্যালের একটি সেবা ‘জুম’। জুম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা বাংলাদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন।

পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হওয়ার বিষয়টি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে কেন—খুদে বার্তায় এ প্রশ্নের জবাবে ৫ জানুয়ারি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ প্রথম আলোকে জানান, ‘আমি জানি না। ’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদ শরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে পেপ্যাল কবে চালু হবে এটা পেপ্যালই বলতে পারবে। তারা ছাড়া নির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারবে না বাংলাদেশে পেপ্যাল কবে আসবে। বেসিসের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে না মেলায় পেপ্যাল আসছে না। এর মধ্যে আসার কোনো কথা আমি শুনিনি। কিন্তু পেপ্যালকে দেশে আনার চেষ্টা চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, পেপ্যাল এলে তা ছাড়িয়ে যাওয়া খুব সহজ হবে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ছেলেমেয়েরা অনলাইনে কাজ করছে, পেপ্যাল দেশে চালু থাকলে তাদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা আনাও সহজ হবে। আমরা ২০১০ থেকে পেপ্যাল আনার জন্য কথা বলছি, সহযোগিতাও করছি। ’

টেকনোবিডি ওয়েব সলিউশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ ইমরাউল কায়ীস বলেন, ‘পেপ্যাল বাংলাদেশে আসার আগে তার বাজার দেখবে। আমার জানামতে, পেপ্যাল যদি কোনো নতুন দেশকে যুক্ত করে, তাহলে সে তালিকায় বাংলাদেশ থাকতে পারে। ’

পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাগুলোর মধ্যে ফ্রিল্যান্সারদের কাছে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত পেপ্যাল—জানালেন বেসিস আউটসোর্সিং পুরস্কার ২০২১ পাওয়া ফ্রিল্যান্সার সুমন সাহা। তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এখনো পেপ্যালের কার্যক্রম চালু হয়নি। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জনের অর্থ আটকে নেই, কোনো না কোনোভাবে দেশে চলে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় দেশে আনতে বেশ ঝামেলা হয়। ফলে পেপ্যাল থাকলে বিদেশ থেকে দেশে টাকা আনা আমাদের জন্য সহজ হবে। ’

অনলাইনভিত্তিক অর্থ লেনদেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পেপ্যালের নীতিমালাসংক্রান্ত সমস্যা ছিল বলে জানান বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি তানজিবা রহমান। তিনি যোগ করেন, এসবের মধ্যে বেশিরভাগ সমাধান হয়ে গেছে। আর কয়েকটি সমাধানের কাজ চলছে। তানজিবা বলেন, ‘২০২২ সালে পেপ্যাল বাংলাদেশে আসবে। তবে অর্থ পাচারের বিষয়েও আমাদের মাথায় রাখতে হবে, যাতে এটা বেড়ে না যায়। ’

আউটসোর্সিং কাজের প্রতিষ্ঠান দ্য সফটকিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রাফায়েত রিফাত বলেন, ‘আমরা যাঁরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, তারা যে যে মার্কেট প্লেসে কাজ করি, তাঁদের সবার টাকা প্রদানের অন্যতম মাধ্যম পেপ্যাল। পেপ্যালের মতো অনেক বিকল্প লেনদেনের মাধ্যম থাকলেও দেশের বাইরের বেশির ভাগ ক্রেতাই পেপ্যালে কাজের অর্থ পরিশাধ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ জন্য পেপ্যাল খুবই প্রয়োজনীয়। দেশে পেপ্যাল এলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন পূরণের পথ আরও সহজ হবে। ’

দেশে পেপ্যাল না থাকার কারণে বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সার বিদেশ থেকে তাঁদের কাজের অর্থ অনলাইনভিত্তিক লেনদেন সেবা পেওনিয়ার, ওয়াইজ, জুম মাধ্যমে নিজের ব্যাংক হিসাবে এনে থাকেন। কখনো কখনো মানিগ্রাম, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমেও অর্থ আনা হয়। তবে আউটসোর্সিংয়ে কাজ যাঁরা দেন, সেই গ্রাহকেরা পেপ্যালেই বেশি স্বচ্ছন্দ।