ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার পর অনেকেই ভাবেন ‘আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারব?’ এ প্রশ্নের উত্তর পেতে কী ধরনের কাজে আপনি দক্ষ বা আপনার দক্ষতা বাড়াতে হবে তা জানতে হবে। আপনি শিক্ষার্থী, গৃহিণী বা যে পেশাতেই থাকেন না কেন, অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো জানতে হবে।
১. ফ্রিল্যান্সিং করার আগে আপনি কোন বিষয়ে (গ্রাফিক ডিজাইন, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি) দক্ষ, তা ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ, নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা না থাকলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করা বেশ কঠিন।
২. আপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কোনো কাজ নেওয়ার সময় অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে আপনি কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে ভালোভাবে শেষ করতে পারবেন কি না। এ জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজের দক্ষতা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে যে আপনি তার কাজের জন্য উপযুক্ত।
৩. ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে জানতে হবে। ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলা এবং কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।
৪. কাজ করার সময় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে অনলাইনে দ্রুত এবং সঠিকভাবে তথ্য খোঁজার কৌশল জানতে হবে। কারণ, ফ্রিল্যান্স কাজ করতে গেলে মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমাধান করা সম্ভব।
৫. ক্লায়েন্টের সমস্যা সমাধানের মনমানসিকতা থাকতে হবে। কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ জমা দেওয়া যাবে না। শুধু তা–ই নয়, ক্লায়েন্টের চাহিদামতো একাধিকবার জমা দেওয়া কাজে পরিবর্তন আনার মানসিকতাও থাকতে হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন কাজ করেও কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। এ জন্য অবশ্যই আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, সে বিষয়েই কাজ করতে হবে। কারণ, আপনি যদি নতুন কোনো বিষয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চান, সেটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। এ জন্য আপনাকে অবশ্যই সে বিষয়ে ভালোভাবে কাজ শিখে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিই। ধরুন, আপনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আপনি চাচ্ছেন অবসর সময়ে বাসা থেকে ফ্রিল্যান্সিং করবেন। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবেই ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে আপনার জন্য কিছুটা সহজ হবে। কারণ, গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ হওয়ায় ক্লায়েন্টের চাহিদামতো কাজ আপনি সহজেই জমা দিতে পারবেন। ফলে আপনাকে নতুন করে শুধু অনলাইনে কাজ পাওয়ার কৌশল জানতে হবে। কিন্তু আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনারের বদলে থ্রিডি অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ করতে চান, তবে আপনাকে নতুন করে থ্রিডি অ্যানিমেশন শিখতে হবে তারপর কাজ পাওয়ার কৌশল শিখতে হবে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া যায়। আর তাই আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা বা চাকরি করছেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া। তবে মনে রাখতে হবে, কোনো বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ সংগ্রহ করা ঠিক হবে না। কারণ, এতে ক্লায়েন্ট আপনার কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে খারাপ রেটিং দেবে। ফলে ভবিষ্যতে অন্য ক্লায়েন্টরা আপনাকে কাজ দেবে না। এমনকি মার্কেটপ্লেসে থাকা আপনার প্রোফাইল বাতিলও হতে পারে।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের সংখ্যা বেশি থাকায় নিজেকে প্রযুক্তিতে সব সময় হালনাগাদ রাখতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত আয়ের মানসিকতা বাদ দিয়ে সময় নিয়ে ভালোভাবে কাজ শেষ করতে হবে। ফলে ক্লায়েন্টরা আপনার কাজে খুশি হয়ে ভালো রেটিং দেবে, যা দেখে অন্য ক্লায়েন্টরাও ধীরে ধীরে আপনাকে কাজ দিতে শুরু করবে। ফলে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
অনেকেই মনে করেন, দুই থেকে চার মাস ফ্রিল্যান্সিং করলেই অনেক টাকা আয় করা যায়। এ ধারণা একদম ভুল। ভালোভাবে যেকোনো কাজ শিখে ফ্রিল্যান্সিং করার সময় প্রথমে আয়ের পরিমাণ খুব কম থাকে। ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ পেতেও অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হয়। আর তাই হাতে যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্য থাকলেই কেবল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজের চিন্তা করতে হবে।
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: ফ্রিল্যান্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ