চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই প্রতিষ্ঠানটির আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে নিজেকে তিনি মোটেও তা ভাবেন না। নিজেকে তিনি সাধারণ একজন ও পুতুল নেতা হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করেন। সম্প্রতি সাউথ মর্নিং চায়না পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের সাধারণ চিন্তাভাবনার কথাই তুলে ধরেছেন রেন।
সেনাবাহিনীর সাবেক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার পর ১৯৮৭ সালে মাত্র পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পকেটে নিয়ে হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রেন। হুয়াওয়ের দাবি, বিশ্বের ১৭০টি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে এবং কর্মীসংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার। ২০১৮ সালে তাদের রাজস্ব ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৭৫ বছর বয়সী হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেন ঝেংফেই অবসর নিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন চাপের মুখে পড়া হুয়াওয়েকে উদ্ধার করার জন্য সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি।
ঝেংফেই সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁর আশা, একদিন মানুষ তাঁকে সাধারণ হিসেবে ভুলে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমি একজন বুড়ো মানুষ। আমাকে মনে রাখার কারণ কী থাকতে পারে? মানুষের আরও বেশি ভবিষ্যৎ ও বিশ্ব নিয়ে ভাবা উচিত। আমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা কারও চোখে না পড়ে ক্যাফেতে কফি খাওয়া।’
বরাবরই নিজেকে প্রচারের আড়ালে রেখেছেন রেন। বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম যন্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও সাধারণ ক্যাফেতে বসে কফি খাওয়ার ইচ্ছাটা এখন বাড়বাড়ন্ত মনে হতে পারে। কিন্তু এত দিন তিনি নিজেকে সেভাবে সামনে আনেননি। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ার পর থেকে সামনে আসতে শুরু করেন রেন। হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা তাঁ মেয়ে মেং ওয়ানঝুকে কানাডা আটকের পর থেকে রেন নানা বিষয় নিয়ে সামনে এসেছেন।
রেন ঝেংফেই আগেই বলেছিলেন, তিনি অবসরে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ তাঁকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তিনি এ চ্যালেঞ্জ নিতে চান।
নতুন সাক্ষাৎকারে রেন ঝেংফেই বলেন, ‘হুয়াওয়ে তিনজন রোটেটিং চেয়ারম্যান রয়েছেন। তিনি পুতুল নেতা। আমি কেবল কোনো মন্দিরে মাটির প্রতিমার মতো প্রতীকী ভূমিকা পালন করি। এটি ছাড়া মন্দিরটি খালি দেখাবে। আমি হুয়াওয়ে থাকি বা না থাকি, তার কোনো সত্যিকারের প্রভাব নেই। হুয়াওয়েতে তাঁর অবদান মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উত্পাদন ধারাবাহিকতা সম্পর্কিত। মূলত কোম্পানির কঠিন সময়ে কোম্পানিকে আরও শক্তিশালী হতে সাহায্য করা।’
রেন ঝেংফেই আরও বলেন, ‘যোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব থাকে বিশ্বের জরুরি মুহুর্তে এগিয়ে আসা। এটা আমাদের কর্তব্য। যখনই জরুরি কিছু ঘটে, আমরা কোম্পানি হিসেবে নয়, বরং দমকল বাহিনীর মতো সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসি। অনেক সময় এ জন্য পয়সা পাই, কখনো পাই না। এতে কোনো কিছু আসে–যায় না।
রেন বলেন, একদিন তিনি অবসর নেবেন। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কেউ চিরদিন থাকবে না। আগে তিনি শেনঝেনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতেন না। তাঁকে অনেকে চিনে ফেলত। ছবি তুলে পোস্ট করত। এখন তাঁর ইচ্ছা, বুড়ো হলে কেউ যেন তাঁকে খেয়াল করতে না পারে । মাথায় হ্যাট পরে ছড়ি নিয়ে তিনি চারপাশে ঘুরতে চান। নিজের চোখে দেশের পুরো সৌন্দর্য তিনি উপভোগ করতে চান।