আমার হলো শুরু

কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু করতে হলে আগেই দক্ষ হতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। মডেল: লাবণ্য l ছবি: সুমন ইউসুফ
কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু করতে হলে আগেই দক্ষ হতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। মডেল: লাবণ্য l ছবি: সুমন ইউসুফ

আগে কম্পিউটার শুধু বিশেষ বিশেষ কিছু কাজে ব্যবহার করা হলেও এখন এটি প্রায় প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত। কম্পিউটার প্রতিদিনের কাজগুলো সহজ করে দিচ্ছে। আর তাই বাড়ছে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। তবে কম্পিউটার সম্পর্কে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আর এর ফলে অনেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে ভয় পেয়ে থাকেন। তবে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ কিছু বিষয় ও ব্যবহারের নিয়ম জানা থাকলে সহজেই কম্পিউটার ব্যবহার করা যায়। আর নিয়মগুলো শেখাও কঠিন কিছু নয়। যাঁরা কম্পিউটারের ব্যবহার করতে যাচ্ছেন তাঁদের জন্য এ প্রতিবেদন।
নতুন কম্পিউটার কেনা
কম্পিউটারে যে ধরনের কাজ করা হয়, সেগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। অফিস ও শিক্ষার কাজে মূলত অফিস স্যুট সফটওয়্যারের মাধ্যমে লেখালেখি, হিসাবনিকাশ (স্প্রেডশিট) করা, প্রেজেন্টেশন তৈরি করা যায়।
ওয়েব ব্যবহার: ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট দেখা, ই-মেইল করা, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো ব্যবহার করা হয় কম্পিউটারে।
মিডিয়া প্রোডাকশন: ছবি, অডিও, ভিডিও ক্যাপচার, সম্পাদনা ইত্যাদি কাজ করা।
গেম খেলা: সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত সর্বশেষ গেমগুলো খেলা, এর পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করা হয় কম্পিউটারে।
কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটারের কনফিগারেশন বা ধরন আলাদা হয়ে থাকে। তাই কম্পিউটার কিনতে যাওয়ার আগে যেমন কী কাজে ব্যবহার করা হবে সেটি ভেবে রাখা উচিত, তেমনি অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিয়ে কেনা উচিত।
আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম
ডেস্কটপ কম্পিউটার টেবিলে বসে ব্যবহার করতে হয়। তবে কম্পিউটার কেনার সঙ্গে সঙ্গেই যে এর উপযোগী বিশেষ টেবিল কিনতে হবে এমন নয়।
কম্পিউটার কেনার সময় অথবা এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনেকে প্রিন্টার কিনে থাকেন। প্রয়োজন মনে হলে অবশ্যই কেনা যেতে পারে, তবে প্রয়োজনটা কী ধরনের, সেটিও বুঝতে হবে। নিয়মিত প্রিন্ট করা হয় না বলে কালি শুকিয়ে গেছে, অথবা কালি (কারট্রিজ বা টোনার) শেষ হওয়ার পরে নতুন কালির যে দাম, তার সঙ্গে সামান্য কিছু টাকা যোগ করা হলে নতুন আরও একটি প্রিন্টার কেনা যাবে। তাই কেনার সময় নতুন কালির দামটিও জেনে নেওয়া ভালো।
কম্পিউটারের ব্যবহার
কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। একেক ধরনের কাজ করার জন্য একেক ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে। অপারেটিং সিস্টেম নামের একটি মূল সফটওয়্যারের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। সাধারণত নতুন কম্পিউটারের সঙ্গে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে দেওয়া হয়। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ডেস্কটপ ও ল্যাপটপে একই সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়।
কম্পিউটারের সব যন্ত্রাংশের সংযোগ দিয়ে এটি চালু করা হলে কিছু সময়ের মধ্যে উইন্ডোর ডেস্কটপ দেখা যাবে। ডেস্কটপ আগে থেকে ইনস্টল করা বিভিন্ন সফটওয়্যার চালু করার জন্য শর্টকাট আইকন দেওয়া থাকে। এই আইকনে মাউস ক্লিক করে সফটওয়্যারগুলো চালু করা যাবে। ডেস্কটপের সফটওয়্যারগুলো ছাড়াও আরও অনেক সফটওয়্যার থাকে কম্পিউটারে, থাকে আরও বিভিন্ন ধরনের সেটিংস ও অপশন। এগুলো ব্যবহারকারী তার পছন্দ অনুযায়ী বদলে নিতে পারবেন।
সব সফটওয়্যার যে আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকবে এমন নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সফটওয়্যার ইনস্টল করা যেতে পারে। প্রথমে যে সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে, সেটি হলো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে কম্পিউটারকে বাঁচাবে। বর্তমানে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিনতে পাওয়া যায়, তবে www.avast.com ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকে বিনা মূল্য সংস্করণটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

কম্পিউটার কেনার সময় বিক্রেতাকে বোঝাতে হবে আপনার প্রয়োজন

একটি কাজের সফটওয়্যার হলো মাইক্রোসফট অফিস। কম্পিউটার কেনার সময় অথবা সফটওয়্যারের দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করা যেতে পারে এই সফটওয়্যারটি। লেখালেখি, হিসাব কষা, প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজগুলো করা হয় এই সফটওয়্যারে। পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন অফিস সফটওয়্যার পাবেন http://openoffice.org ঠিকানা থেকে।
কিছুদিন ব্যবহার করার পরই কম্পিউটারের সফটওয়্যারগুলো ধীরে কাজ করছে মনে হতে পারে। কাজ করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু ফাইল তৈরি হয়, যেগুলো মুছে ফেললে কাজের গতি কিছুটা বাড়ে। সিক্লিনার হলো এমনই একটি সফটওয়্যার। এটা পাবেন www.piriform.com/ccleaner ঠিকানা থেকে।
কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ এখন প্রায় অপরিহার্যই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান, অডিও এবং ভিডিও কল করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারনেটে থাকা জ্ঞানবিজ্ঞানের বিশাল ভান্ডারও ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য সাধারণভাবে উইন্ডোজে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার থাকে। পাশাপাশি অন্যান্য ব্রাউজার যেমন গুগল ক্রোম (www.google.com/chrome) বা মোজিলা ফায়ারফক্স (http://www.firefox.com) ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। যে সফটওয়্যারই ব্যবহার করা হোক না কেনো, সেটির হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করা উচিত।
ইন্টারনেটে সব বিষয় সম্পর্কে তথ্য রয়েছে, www.google.com ওয়েবসাইট থেকে অনুসন্ধান করে এই বিষয়ভিত্তিক তথ্যগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
সাধারণ সতর্কতা
কম্পিউটারে সংরক্ষিত তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি কাজ করার সময় সতর্ক থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়।
উইন্ডোজের অ্যাকাউন্ট সেটিংস থেকে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা, কম্পিউটার মানুষ ব্যবহার করলে আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেগুলোর জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।
পেনড্রাইভ ব্যবহার করার আগে সেটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে স্ক্যান করে নেওয়া উচিত। এর ফলে ক্ষতি করতে পারে এমন সফটওয়্যারগুলো আর কম্পিউটারে আসতে পারবে না।
সফটওয়্যার ইনস্টল করার আগে দেখে নিতে হবে কী কাজের জন্য সেটি ব্যবহার করা হবে।
দক্ষ হয়েই যে কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করতে হবে এমন নয়। কেননা সবকিছুরই শুরু হয়। এ ছাড়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে কম্পিউটার প্রযুক্তি। ফলে একবার সবকিছু জানা হয়ে গেলেও নতুন করে আবারও চর্চা করার প্রয়োজন হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ পাওয়া অথবা নিজের কাছে প্রচুর বই এবং অডিও-ভিডিও টিউটোরিয়াল রেখে দেওয়া মানেই দক্ষতা অর্জন হয়ে যায় না। এ বিষয়গুলো সহায়ক হতে পারে, তবে চর্চা করাই আসল। কম্পিউটারের সব কাজ কীভাবে করা যায়, তার সহায়িকা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার আয়ত্তে আনতে পারলে কম্পিউটারে অন্যান্য কিছু শেখা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক সফটওয়্যার প্রকৌশলী
কৃতজ্ঞতা: কম্পিউটার ভিলেজ