আমাজনের সফলতার গল্প

আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস
আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস

২৫ বছর পার করল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আমাজন। ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই উদ্যোক্তা জেফ বেজোসের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২৫ বছর পেরিয়ে বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাজন ও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর মুকুট এখন জেফ বেজোসের মাথায়।

সিয়াটল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে ৫ জুলাই ‘কাড্যাবরা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খোলার কাগজপত্র ফাইল করেন বেজোস। নামটি মূলত জাদুকরদের বিশেষ বুলি ‘অ্যাবরাকাড্যাবরা’ থেকে নেওয়া হয়। তবে নামটি বেশি দিন ধরে রাখেননি বেজোস। কারণ, বেজোসের আইনজীবী বলেন, কাড্যাবরা নামটির সঙ্গে ‘ক্যাডাভার’ নামটি গুলিয়ে যায়। ব্র্যাড স্টোন ‘দ্য এভরিথিং স্টোর: জেফ বেজোস অ্যান্ড দ্য এজ অব আমাজন’ বইতে লিখেছেন, ক্যাডাবরা নামটির পর বেজোস ‘রেলেন্টলেস’ নামটির কথা বিবেচনা করেন। এখনো রেলেন্টলেস ডটকম লিখলে আমাজনে নিয়ে যাবে। কিন্তু এ নামও পরে বাদ হয়ে যায়। বেজোসের এক বন্ধু বলেন, নামটি তাঁদের জন্য শুভ নয়। তাই নামটি বাদ দেন তিনি।

১৯৯৪ সালের অক্টোবরে ডিকশনারিতে ‘এ’ অক্ষর দিয়ে নাম খুঁজতে শুরু করেন বেজোস। ‘এ’ অক্ষর দিয়ে নাম খোঁজার পেছনে ছিল নাম যাতে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর ‘আমাজন’ নামটি পছন্দ হয় তাঁর। নামটি পছন্দ হওয়ার পরপর তিনি সিয়াটলের গ্যারেজে যান এবং সেখানকার কর্মীদের বলেন, কোম্পানির জন্য নতুন নাম ঠিক করে ফেলেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের একটি গ্যারেজ থেকেই আজকের আমাজনের জন্ম।

বেজোস বলেন, ‘আমাজন’ বিশ্বের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদীর নাম। এটা অন্য সব নদীকে বয়ে নিয়ে চলে।

সিয়াটলের বেড়ে ওঠা আধুনিক ই-কমার্স ও প্রযুক্তিরির্ভর ওই কোম্পানি মানুষের জীবনে নানা প্রভাব ফেলছে। গ্রাহকের আচরণ পরিবর্তন, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র তৈরি মতো নতুন দিক তৈরি করছে। ২৫ বছর ধরে ই-কমার্স খাতের বিশাল এক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেওয়া আমাজনের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৯৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে জীবনে সফল হওয়ার কয়েকটি মূলমন্ত্রের কথা বলেন জেফ বেজোস। এ বিষয়গুলো তাঁকে সফল হতে সাহায্য করেছে। বেজোসের মতে, মানুষের জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন জীবনের লক্ষ্যের চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে লক্ষ্যে এগোতে হলে জীবনে সফলতা আসবে। এখনকার যে কাজ করবেন, তার ফলফল কয়েক বছর পরে পাবেন বলে দৈনন্দিন কাজগুলো ঠিকমতো করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আপনি যতই সফল হোন না কেন, আপনাকে জীবনে সমালোচনা সইতে হবে। সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। এক সাক্ষাৎকারে বেজোস বলেন, ‘আপনি যখনই নতুন বা উদ্ভাবনী কিছু করতে যাবেন, আপনাকে ভুল বোঝা হতে পারে। আপনাকে যদি ওই ভুল বোঝা বা সমলোচনার জন্য থেমে যেতে হয়, তবে নতুন কিছু করতে পারবেন না।’ বেজোস বলেন, তাঁর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ওয়াল স্ট্রিটে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমাজন শুরুর সময় বাধা পেয়েছিলেন। তিনি ওই সময় হেজ ফান্ড ডি ই শর জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

২০১০ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বেজোস বলেন, ৩০ বছর বয়সের আগেই তাঁর ভালো চাকরি ছিল। তাঁর বসও তাঁকে পছন্দ করতেন। তাঁর বসকে তিনি অনলাইনে বই বিক্রি করতে চান বিষয়টি বলেছিলেন। তখন তাঁর বস তাঁকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়েছিলেন যে তাঁর ধারণাটি ভালো। কিন্তু যাঁদের চাকরি নেই, তাঁদের জন্য এটা করা মানায়। কিন্তু বেজোস তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং ঝুঁকি নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। বেজোস বলেন, ‘আমাকে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা সংগত ছিল। তাঁর কথাগুলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগপর্যন্ত আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল। ওই আলোকে দেখলে এটা খুব কঠিন একটি সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু আমাকে কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হতো। চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে অনুশোচনা করব, এমন ভাবনা মাথায় আসেনি। বরং আমি চেষ্টা করিনি, এমন একটি বিষয় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা করেছিলাম। অনেক বিবেচনা করে আমি ঝুঁকিপূর্ণ পথটাই আমাদের আবেগের কারণে বেছে নিয়েছিলাম। আমার ওই সিদ্ধান্তের জন্য আজ আমি গর্ব করি।’

জেফ বেজোস বলেন, তিনি তাঁর আশপাশে অনুসন্ধানী ও উদ্ভাবনী মানুষকে প্রশ্রয় দেন। তিনি বলেন, ‘আমাজনের শুরুর দিনগুলো থেকে আমরা গঠনমূলক সংস্কৃতির মানুষকে গুরুত্ব দিতে থাকি। তাঁরা উদ্ভাবন করতে পছন্দ করেন। তাঁদের মানসিকতা আমাদের আরও বড় হতে ও কঠিন সমস্যা সমাধানের সুযোগ করে দেয়। তাঁরা জানেন সফলতার পথ মসৃণ নয়।’