বিশ্বের অন্যতম সফল প্রতিষ্ঠান এখন আমাজন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস কোনো অনুষ্ঠানে গেলে আমাজনের ভেতরের কিছু না কিছু খবর দেন। একবার তাঁর ও আমাজনের কর্মীদের গ্রহণ করা সবচেয়ে স্মার্ট সিদ্ধান্তের ঘটনা কোনটি, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
এ প্রশ্নের জবাবে আশ্চর্য এক তথ্য দেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী বেজোস। তিনি জানান, আমাজনের সফলতার পেছনে রয়েছে অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত। সে সিদ্ধান্তটি অফিসের কর্মীদের নিয়ে করা মিটিং বা সভাবিষয়ক।
বেজোসের ভাষ্য, বেশ কয়েক বছর আগেই অফিসের সভা নিয়ে দারুণ এক সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সভায় মাইক্রোসফটের পাওয়ারপয়েন্ট দেখানো বন্ধ করে দেন। তিনি ঘোষণা দেন, আমাজনে কোনো বিষয়ের ওপর বক্তব্য দিতে গেলে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন (পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন) চলবে না।
এখন অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনার বিষয়টিকে ধরা হয়। পাওয়ারপয়েন্টের মাধ্যমে দেখালে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিচালকেরা খুশি হবেন বলে ধরে নেন অনেক কর্মী। তাই কে কত সুন্দর পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা করতে পারেন, এর প্রতিযোগিতা দেখা যায়। বেজোস বলেন, অন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মতো আমাজন পাওয়ারপয়েন্টের স্রোতে গা ভাসায়নি। এটাই ছিল আমাজনে তাঁদের নেওয়া দারুণ বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, পাওয়ারপয়েন্টে উপস্থাপনের বদলে আমাজনের গুরুত্বপূর্ণ অফিসের সভাগুলোতে কীভাবে ধারণা ও বিষয়গুলো তুলে ধরা হতো?
বেজোসের ভাষ্য, অফিসের সভাগুলো ঘিরে নতুন এক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। ওই পদ্ধতি আমাজনকে সফল করে তুলেছে। বেজোসকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি বলেছে, আমাজনে সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা সভা শুরু হয় আধঘণ্টার ‘পঠন কর্মসূচি’ দিয়ে। শুরুতেই মিটিংয়ে উপস্থিত কর্মীদের ৩০ মিনিট করে একটি ৬ পাতার বিস্তারিত মেমো বা নোট পড়তে দেওয়া হয়। সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা ওই নোট খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন কর্মীরা।
বেজোস বলেন, পড়ার পর্ব শেষ হলে এরপর তাঁরা আলোচনা শুরু করেন। নোট পড়ার সময়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টুকে রাখেন কর্মীরা। এরপর তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দল বেঁধে পড়াশোনার গুরুত্ব হলো, এতে কর্মী ওই নোট পড়েছেন কি না, তা যাচাই হয়ে যায়। পড়ার সময় পাইনি বলে কোনো অজুহাত দেওয়ার সুযোগ থাকে না।
বেজোস বলেন, সাধারণত পাওয়ারপয়েন্টে উপস্থাপনায় অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়। আমাজনের মেমো তৈরি হয়ে আসে পুরো টিম ও লেখকের পক্ষ থেকে। এতে কোনো লেখকের নাম উল্লেখ থাকে না। এসব মেমো এক-দুই দিনে লেখা হয় না।
ভালো নোটগুলো লেখার পর তা আবার নতুন করে লেখা হয়। কয়েক হাত ঘুরে আবার নতুন ভাবনা নিয়ে ওই নোটের ওপর কাজ করা হয়। এতে সবার মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ থাকে। পরে সেই নোট মিটিংয়ে তোলা হয়। এর ওপর তখন আলোচনা হয়। এভাবেই আমাজনের মিটিং রুম বদলে গেছে।