ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে, এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে।’ আজ থাকছে দশম পর্ব।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আপওয়ার্ক। আর এ কারণে মার্কেটপ্লেসটিতে কাজ পেতে প্রতিযোগিতাও করতে হয় অনেক বেশি। আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলার আগে বেশ কিছু বিষয় নজর দেওয়া প্রয়োজন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মার্কেটপ্লেসে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করলেই কেবল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কারণ, অ্যাকাউন্ট খোলার পর কোনো কাজ না পেলে বা কাজ না করলে আপনার অ্যাকাউন্টটি প্রাইভেট হয়ে যাবে এবং প্রোফাইল নিয়ে অহেতুক ঝামেলায় পড়তে হবে।
আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রথমেই আপনার ই-মেইল ঠিকানার প্রয়োজন হবে। ই-মেইল ঠিকানা দেওয়ার পর আপনার নাম (জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা নাম), পাসওয়ার্ড লিখে আপনি একজন ফ্রিল্যান্সর হিসেবে কাজ করতে চান তা নির্বাচন করতে হবে। এবার আপওয়ার্কের নীতিমালা অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে ‘ক্রিয়েট মাই অ্যাকাউন্ট’-এ ক্লিক করতে হবে। এবার আপনার দেওয়া ই-মেইল ঠিকানা যাচাই করতে আপওয়ার্ক একটি ই-মেইল পাঠাবে। আপওয়ার্কের পাঠানো ই-মেইল বার্তায় ক্লিক করলেই আপনার দেওয়া ই–মেইল ঠিকানা যাচাই হয়ে যাবে।
ই–মেইল ঠিকানা যাচাইয়ের পর আপওয়ার্কে আপনার কাজ করার উদ্দেশ্য জানাতে বেশ কিছু তথ্য পূরণ করতে হবে।
আপওয়ার্কে আপনি যে ধরনের কাজ করতে চান, তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে জব টাইটেল লিখতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি লোগো ডিজাইনার হন, তবে লিখতে হবে ‘এক্সপার্ট ইন লোগো ডিজাইন’, ওয়েব ডিজাইনার হলে ‘ক্রিয়েটিভ ওয়েব ডিজাইনার’ বা ‘প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার’। মনে রাখতে হবে, আপনার প্রোফাইলে কেউ প্রবেশ করলে সবার আগে জব টাইটেল অপশন দেখা যাবে। আর তাই জব টাইটেলের কাজের অভিজ্ঞতা বিভাগে কোনো ভুল তথ্য দেবেন না।
শিক্ষা বিভাগে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে। পাশাপাশি
ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য আপনার কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে তা নির্বাচন করতে হবে। যে কাজের জন্য আপওয়ার্কে প্রোফাইল খুলবেন, সেটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ১০ থেকে ১৫টি বিষয়ে আপনার দক্ষতা যুক্ত করে দিলে ভালো হয়। যেমন কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে অ্যাকাউন্ট খোলেন তবে গুগল অ্যাডস, ফেসবুক অ্যাডস, গুগল অ্যাডওয়ার্ড ইত্যাদি বিষয়ক জ্ঞান বাড়তি দক্ষতা হিসেবে যুক্ত করতে পারেন।
আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য জীবনী বিভাগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ক্লায়েন্টরা আপনার প্রোফাইলে প্রবেশ করে আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে এই বিভাগে প্রবেশ করবে। আর তাই আপনার নিজের সম্পর্কে, কাজ সম্পর্কে, আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সব তথ্য ভালোভাবে লিখতে হবে। এ জন্য বিভাগটিতে আপনার কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি ক্লায়েন্টরা কেন আপনাকে তাদের কাজের জন্য নিয়োগ দেবে, তার একটি বিবরণ লিখতে হবে।
বিভাগ নির্বাচনের সময় আপনি যে বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী, তার পাশাপাশি সহায়ক বিভিন্ন বিভাগ নির্বাচন করতে হবে। এরপর আপনি ঘণ্টাপ্রতি কত ডলারে কাজ করবেন তা নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য আপনার কাছাকাছি দক্ষ ব্যক্তিরা মার্কেটপ্লেসে কত ডলারে কাজ করেন, সে বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। এরপর আপনার ঠিকানা, ছবি, টেলিফোন নম্বরসহ বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। পাসপোর্ট আকারের, সাধারণ ভঙ্গি ও বাঁকাভাবে দাঁড়ানো ছবি দেওয়ার বদলে ফ্রন্ট ফেসিং বা সামনে থেকে পুরো চেহারা ভালোভাবে দেখা যাওয়া ছবি দিতে হবে।
সব তথ্য জমা দেওয়ার পর আপনি আপনার সম্ভাব্য প্রোফাইলের প্রিভিউ দেখতে পারবেন। ফলে চাইলে কোনো তথ্য মুছে ফেলার পাশাপাশি যুক্তও করা যাবে। সব তথ্য ঠিক থাকলে সাবমিট অপশন নির্বাচন করলেই আপনার প্রোফাইল পাবলিশ হয়ে যাবে। তবে প্রোফাইল পাবলিশ হওয়ার পর ১০০ শতাংশ সম্পন্ন না হওয়ার বার্তা দেখা যাবে। প্রোফাইলে প্রবেশ করে পোর্টফোলিও, ভিডিও ইন্ট্রোডাকশন (অপশনাল) ইত্যাদি তথ্যযুক্ত করলেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: ফাইবার মার্কেটপ্লেস পরিচিতি