ফেসবুক নেতৃত্বের ওপর খেপেছে ঘৃণ্য বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সিভিল রাইটস ও অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলো। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বর্জনের ডাক দিয়ে #স্টপহেটফরপ্রফিট আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যে ৫০০ বিজ্ঞাপনদাতাকে তাদের সঙ্গে পেয়েছে। তাদের দাবিদাওয়া জানাতে গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গসহ প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বসেছিল আন্দোলনকারীরা। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফেসবুক তাদের জায়গায় অনড়। তারা আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়া কানে তোলেনি বা কোনো কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
কালার অব চেঞ্জের প্রেসিডেন্ট রাশাদ রবিনসন বলেন, বৈঠক থেকে শুধু হতাশা পাওয়া গেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এমনভাবে বৈঠক করেছে যেন শুধু এটা তাদের হাজিরা দেওয়ার জন্য আসা।
কর্মসূচি #স্টপহেটফরপ্রফিট আন্দোলনকারী হিসেবে ফ্রি প্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেসবুক তাদের দাবিদাওয়া গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি। ফেসবুক থেকে ভুয়া ও ঘৃণ্য তথ্য সরানোর কোনো সময়সীমা বা প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তারা বারবার পুরোনো কথাবার্তা আউড়ে গেছে।
ফ্রি প্রেসের সহকারী প্রধান নির্বাহী জেসিকা গঞ্জালেস বলেন, ফেসবুক যেভাবে জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের চর্চা করে, এ বৈঠককে তারা সেভাবেই নিয়েছে।
ফেসবুকের এক বিবৃতিতে তাদের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, ‘তাদের প্রতিষ্ঠান নতুন নীতিমালা নিয়ে ভোটিং ও মতামত প্রক্রিয়া ছাড়াই ২০০ শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সংস্থাকে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করেছে। এ বৈঠক আমাদের কাছে কর্মসূচি আয়োজকদের কাছ থেকে তাদের দাবি জানার সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘৃণ্য বক্তব্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। তারা চেয়েছে ফেসবুক থেকে ঘৃণ্য বক্তব্য দূর হোক। আমরাও সেটা চাই।’
অ্যান্টিডিফেমেনেশনের প্রধান নির্বাহী জোনাথন গ্রিনব্ল্যাট বলেন, ‘মঙ্গলবারের ওই বৈঠক ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হয়। সেখানে জাকারবার্গ, ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ, প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্স ও তাদের নীতিমালা টিমের কর্মকর্তারা ছিলেন।’
তাদের কর্মসূচি থেকে ফেসবুকে ১০টি পরিবর্তন আনার আহ্বান জানানো হয়। এর মধ্যে ছিল প্রধান কর্মকর্তা পর্যায়ে নাগরিক অধিকার সম্পর্কে গভীর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে নিয়োগ করা, মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো রোধে গৃহীত ব্যবস্থা রোধে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অডিট পরিচালনা, ফেসবুক থেকে ঘৃণ্য বক্তব্য ও সহিংস তত্ত্ব ছড়ানোতে যুক্ত থাকা পাবলিক ও প্রাইভেট গ্রুপ বাতিল করা, ফেসবুকের সম্পাদকদের ৯০ দিনের ঘৃণ্য বক্তব্য সরিয়ে ফেলার উপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রভৃতি। এ ছাড়া ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে মিথ্যা তথ্য ঠেকানোর আহ্বান জানানো হয়। ফেসবুক এর আগে অবশ্য এ নীতিমালার পক্ষে বলেছে যে তারা রাজনৈতিক বক্তব্য সেন্সর করবে না।
ফেসবুকের যে পরিস্থিতি, তাতে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি এর আগে বলেছেন, ফেসবুক তার অবস্থান বদলাবে না। ঘৃণ্য বক্তব্য নিয়ে পাঁচ শতাধিক বিজ্ঞাপনদাতা ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জাকারবার্গ এ কথা বলেছেন। দ্য ইনফরমেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপনদাতারা ফেসবুক ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সামনে জাকারবার্গ আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ফেসবুক বর্জনের ঘোষণার সঙ্গে সম্মানের বিষয়টিও জড়িত। এটি ফেসবুকের আয়ের সামান্য অংশে হুমকি হতে পারে। যেসব বিজ্ঞাপনদাতা সরে গেছে, তারা শিগগিরই আবার ফেসবুকে ফিরে আসবে।
গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির নিহত হওয়ার প্রতিবাদে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেসবুক, টুইটারে পোস্ট দেন, ‘লুটপাট শুরু হলে গুলিও শুরু হবে।’ ট্রাম্পের এই বিতর্কিত পোস্ট সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। গণ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় টুইটার কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ওই পোস্ট ঢেকে দেয়। তবে ফেসবুক ট্রাম্পের ওই পোস্টের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে নানা মহল যখন তীব্র সমালোচনায় মুখর, তখন জাকারবার্গ বলেছিলেন, ফেসবুক ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পোস্ট অপসারণ বা ঢেকে দেবে না। এটা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার সঙ্গে যায় না।
তবে বিবিসি বলছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে যায় ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন থেকে সম্ভাব্য ক্ষতিকর পোস্টে তারা বিশেষ লেবেল বা বার্তা লাগিয়ে দেবে। তবে সংবাদ হিসেবে গুরুত্ব থাকায় তা ছেড়ে দিতে হবে তাদের। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনাতেও সম্মত হন জাকারবার্গ।
গার্ডিয়ান বলছে, #স্টপহেটফরপ্রফিট কর্মসূচিটি মূলত ঘৃণ্য বক্তব্য রোধ করার জন্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি নাগরিক অধিকার সংস্থা একত্র হয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের জুলাই মাসে ফেসবুক বর্জন করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই বর্জনের ডাকে ইতিমধ্যে ইউনিলিভার, কোকা-কোলাসহ বিশ্বের অনেক বড় ব্যান্ড সাড়া দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ফেসবুকের লাগাম টানবে কে?