ফেসবুক নানা উপায়ে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু যাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করেন না, তাঁরা কি নিশ্চিন্তে আছেন? আসলে কারও নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাক বা না থাক, ইন্টারনেট দুনিয়ার সবার তথ্য সংগ্রহ করছে ফেসবুক।
গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বিভিন্ন অ্যাপ নির্মাতারা ফেসবুকের কাছে তথ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাই যাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করছেন না, বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের তথ্যও ফেসবুকের কাছে চলে যাচ্ছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘হাউ অ্যাপস অন অ্যান্ড্রয়েড শেয়ার ডেটা উইথ ফেসবুক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও কীভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হয়, সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ওই গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা ৩৪টি অ্যাপ নিয়ে পরীক্ষা চালান। এর মধ্যে ২১টি অ্যাপের মাধ্যমে ফেসবুকের কাছে স্বয়ংক্রিয় তথ্য পাঠাতে দেখেছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৬০ শতাংশের বেশি অ্যাপ থেকে ফেসবুকের কাছে তথ্য পাচার করা হয়। অ্যাপ খোলামাত্রই ফেসবুকের কাছে তথ্য চলে যায়। এসব অ্যাপের মধ্যে ডুয়োলিঙ্গ, কায়াক, শাঝাম, স্পটিফাই, ট্রিপ অ্যাডভাইজর ও ইয়েলপের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ রয়েছে। সম্প্রতি জার্মানির লেইপজিগে ৩৫তম ক্যাওস কমিউনিকেশনস কংগ্রেস হ্যাকার সম্মেলনে ওই তথ্য তুলে ধরে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল।
অবশ্য তারা বলেছে, এই তথ্য শেয়ার ঠেকানোর কোনো পথ নেই। আপনি ফেসবুকে লগইন করেন বা না করেন, আপনার অ্যাকাউন্ট থাক বা না থাক, ফেসবুকের কাছে তথ্য যাবেই। শুধু অ্যান্ড্রয়েড নয়, আইওএস প্ল্যাটফর্মের কিছু অ্যাপ থেকেও একইভাবে তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে অ্যাপগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, তার বাইরেও অনেক অ্যাপ থেকে নানা রকম তথ্য নিতে পারে ফেসবুক। যেমন আপনি কোন অ্যাপ কখন ব্যবহার করেন, ফেসবুক সে তথ্য সঙ্গে সঙ্গে জানছে। কোনো অ্যাপ ইনস্টল করলে বা মুছে ফেললেও তা জানতে পারে ফেসবুক। এর আগে ফেসবুকের বিনা মূল্যের অনাভো প্রটেক্ট ভিপিএন অ্যাপ এ ধরনের কাজ করত। বিষয়টি জানার পর আইওএস প্ল্যাটফর্ম থেকে তা সরিয়ে দেয় অ্যাপল।
অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নির্ভর করে গুগল অ্যাডভারটাইজিং আইডির (এএআইডি) ওপর। অ্যাপে বিজ্ঞাপনদাতারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও বিভিন্ন অ্যাপ থেকে ব্রাউজিংয়ের আচরণের বিষয়টি ব্যবহার করেন। গুগলের অ্যাড আইডি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর ইন্টারনেটের বিভিন্ন আচরণ ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে লোকেশন সার্ভিসকে কাজে লাগানো হয়। এ ধরনের প্রাইভেসি লঙ্ঘনের জন্য অ্যাপ নির্মাতাদের দোষারোপ করা যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসবুকের অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট (এসডিকে) ব্যবহার করা হয়, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসবুকে তথ্য দেয়। অ্যাপ নির্মাতা ওই ফাংশন পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে না। আইওএস প্ল্যাটফর্মেও একইরকম ফেসবুক এসডিকে ব্যবহার হয়।
অবশ্য ফেসবুকের মতোই অন্যান্য অনলাইন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান মোবাইল অ্যাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তবে গত বছর থেকে ফেসবুক প্রাইভেসির ক্ষেত্রে বিষয়টিকে আরও বড় করে তুলেছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ফেসবুককে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো পথ থাকছে না। ফেসবুক ছেড়ে পালানোর পথ নেই। তথ্যসূত্র: দ্য রেজিস্টার।