কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ

অর্থের বিনিময়ে ফ্রিল্যান্স কাজ শিখবেন যেভাবে

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে সপ্তম পর্ব।

পর্ব-৭

গত পর্বে আমরা অনলাইনে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্স কাজের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ অর্থের বিনিময়ে অনলাইন বা কোচিং সেন্টারে ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণের তথ্য আলোচনা করা হলো—

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে না চাইলে আপনার আশপাশে থাকা যে কোনো কোচিং সেন্টার থেকে সরাসরি ফ্রিল্যান্স কাজ শিখতে পারেন। এ জন্য অবশ্যই ফ্রিল্যান্স কাজের উপযোগী কোর্স নির্বাচন করতে হবে। কারণ, প্রায় সব কোচিং সেন্টারেই ফ্রিল্যান্স কাজ শেখানোর জন্য বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। আর তাই ভর্তির আগে অবশ্যই কোর্সের সিলেবাস সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার পছন্দের বিষয়ে কোর্সে বিস্তারিতভাবে শেখানো হবে কি না, তা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশে অনেক কোচিং সেন্টারই এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ফ্রিল্যান্স কাজ শিখিয়ে অনলাইনে আয়ের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে সাবধান থাকতে হবে। সমস্যা সমাধানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে কোচিং সেন্টারের প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। কোচিং সেন্টারের সফলতার হার জানার পাশাপাশি পুরোনো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনাও করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় কোচিং সেন্টারে ভর্তির আগে বিনা মূল্যে এক বা দুই দিন ক্লাস করলে। এতে কোচিং সেন্টারের পড়ানোর পদ্ধতি আপনি বুঝতে পারছেন কম না তা পরখ করা যাবে।

মনে রাখতে হবে, যেসব প্রতিষ্ঠান দুই থেকে চার মাসের মধ্যে আপনাকে ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেবে-তারা আপনাকে মিথ্যা বলছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারণ, আপনার প্রথম লক্ষ্য হবে ফ্রিল্যান্স কাজ করার উপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা, যা কোনোভাবেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব নয়। দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই কেবল অনলাইনে আয় করা যাবে। কাজ না শিখে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধন করলে কোনো ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দেবে না; বরং আপনার প্রোফাইলে খারাপ রেটিং যোগ হবে। আর তাই যে প্রতিষ্ঠান আপনাকে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেবে সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

অনলাইনে সরাসরি প্রশিক্ষণ

ফ্রিল্যান্স কাজে দক্ষ অনেক পেশাজীবী কোচিং সেন্টারের আদলে অনলাইনে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। কোচিং সেন্টারের তুলনায় কম খরচ হওয়ায় অনেকে এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। তবে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে কোচিং সেন্টারগুলো মতোই প্রশিক্ষকের যোগ্যতা যাচাই করতে হবে, নতুবা প্রতারণার শিকার হতে পারেন।

অনলাইন ভিডিও

অনলাইনে যেকোনো বিষয়ে ধারণ করা ভিডিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার জন্যও অনলাইনে উন্নতমানের অনেক ভিডিও রয়েছে। রেকর্ড করা ভিডিও হওয়ায় আপনাকে ভিডিও দেখে কাজ শিখতে হবে। বর্তমানে বাংলা ভাষায়ও এ ধরনের প্রশিক্ষণ মিলে থাকে। যারা চাকরি বা পড়ালেখার কারণে সরাসরি অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেন না তারা রেকর্ড করা ভিডিওর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। কোর্সে নিবন্ধন করার আগে অবশ্যই সিলেবাস যাচাই করে নেবেন। এ জন্য অনলাইনে কোর্সটি বিষয়ে রেটিং এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের মতামত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ

ফ্রিল্যান্স নিয়ে কাজ করা অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ নিয়োগ দিয়ে থাকে। পারিশ্রমিক কম হলেও এর মাধ্যমে খুব ভালোভাবে কাজ শেখা যায়। তবে ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

বই

বই পড়েও ফ্রিল্যান্স কাজ শেখা যায়। ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন লেখকের বই পাওয়া যায়। চাইলে অর্থের বিনিময়ে বইগুলোর ই-বুক সংস্করণ সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বর্তমানে বাংলা ভাষায়ও ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক বই পাওয়া যায়। এসব বই ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার প্রাথমিক ধারণা পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।

অনেক প্রতিষ্ঠানই ফ্রিল্যান্স বিষয়ে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করে। আপনি এসব কর্মশালায় অংশ নিয়ে ফ্রিল্যান্স কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে পারবেন। বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকলে অর্থ খরচ করে ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণ কেন নেব-এ প্রশ্ন আমাদের অনেকেরই মনেই আসতে পারে। অনলাইনে বিনা মূল্যে কোন বিষয় শেখার জন্য সাধারণত সময় বেশি লাগে। অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে অনলাইন বা কোচিং সেন্টারে কোর্স করলে শিক্ষকরাই প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য সরা বরাহ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সময় কম লাগে এবং বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। প্রশ্ন আসতে পারে, কোন পদ্ধতিটি ভালো। আপনাকেই বুঝে নিতে হবে কোন পদ্ধতি আপনার জন্য ভালো। তবে তথ্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারলে বিনা মূল্যের কোর্সে অংশ নেওয়াই ভালো। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আপনি যে পদ্ধতিতেই প্রশিক্ষণ নেন না কেন, নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন ছাড়া ফ্রিল্যান্স কাজে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আর এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ফ্রিল্যান্স কাজের উপযোগী প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করে শিখতে হবে।

লেখক: আপ ওয়ার্ক টপ বেটে প্লাস ফ্রিল্যান্স

পরের পর্ব: কখন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করা যাবে