ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে

নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস

অনলাইনে প্রতারণা, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে

ঘটনা এক

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে বেশ কিছুদিন ধরেই চাকরি খুঁজছেন নাদিয়া ইসলাম। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবেদনের পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চাকরি খুঁজেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপেও চাকরি চেয়ে বার্তা পাঠান।

একদিন সকালে অপরিচিত এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তা আসে নাদিয়ার কাছে। বলা হয়, ‘আপনি চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আপনার টেলিফোন নম্বর দেওয়ার অনুরোধ রইল। আপনাকে পরবর্তী নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে।’ বার্তা পেয়েই খুব খুশি হন নাদিয়া। চাকরি পাওয়ার জন্য দ্রুত টেলিফোন নম্বরও দিয়ে দেন।

কিছুক্ষণ পর নাদিয়ার ফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। বলা হয়, ‘আপনি চাকরি পেয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। তবে চাকরির জন্য আপনাকে আড়াই হাজার টাকা পাঠাতে হবে। দ্রুত এই টেলিফোন নম্বরে টাকা পাঠাতে হবে।’

চাকরি পাওয়ার খুশিতে কোনো কিছু না ভেবেই টাকা পাঠিয়ে দেন নাদিয়া। কিন্তু এরপর আর চাকরির খবর নেই। এভাবে দিন–মাস পার হলো। যে টেলিফোন নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল, সে নম্বর বন্ধ পেলেন নাদিয়া। এমনকি যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, তা–ও এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। তখন নাদিয়া বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

ঘটনা দুই

শাহরিয়া শোভন কলেজে পড়ে। একদিন এক অপরিচিত ব্যক্তি মেসেঞ্জারে একটি লিংক পাঠায়। সেখানে লেখা ছিল, ‘আপনি লটারিতে একটি আইফোন জিতেছেন।’ শোভন আইফোনের লোভে তাড়াতাড়ি লিংকে ক্লিক করলেই নতুন একটি ওয়েবসাইট চালু হয়। সেখানেও বলা হয়, ‘আপনি আইফোন পেয়েছেন। নির্দিষ্ট ঠিকানায় আইফোন সংগ্রহের জন্য ওয়েবসাইট থেকেই আবার ফেসবুকে লগইন করতে হবে।’ শোভন ভুয়া ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে ফেসবুকে প্রবেশের চেষ্টা করতেই সাইবার অপরাধীরা তার আইডি ও পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে। ফলে বারবার চেষ্টা করেও শোভন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আর প্রবেশ করতে পারে না। শোভন বুঝতে পারে, সে সাইবার অপরাধীদের ফিশিং আক্রমণের শিকার হয়েছে।

ঘটনা তিন

সামিয়া হক অনলাইনে পোশাক বিক্রি করেন। নিজেই মডেল হয়ে পোশাকের ছবি দেন অনলাইনে। অল্প সময়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তাও পান। সামিয়ার সাফল্য সহ্য করতে না পেরে অনলাইনে একদল মানুষ মিথ্যা ও অপমানজনক কথা বলতে থাকে। এমনকি তাঁর পেজ ও পোস্টে বাজে মন্তব্য করা শুরু করে। এই সাইবার বুলিংয়ের কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সামিয়া।

নাদিয়া, শোভন বা সামিয়ার জীবনের এসব ঘটনা নিয়মিত অনলাইনে ঘটে থাকে। নিত্যনতুন প্রতারণার কবলেও পড়েন অনেকে। তাই অনলাইন দুনিয়ায় নিরাপদে থাকতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। চালুন জানি, অনলাইনে নিরাপদ থাকতে কী কী বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার

অনলাইনে কাজের প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি আমাদের অনেক ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। অনেকেই একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা মোটেও ঠিক নয়। এ জন্য অবশ্যই অক্ষর ও সংখ্যার সমন্বয়ে কমপক্ষে আট সংখ্যার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

অ্যাপ ব্যবহারে সতর্কতা

মুঠোফোনে নতুন অ্যাপ নামানোর সময় ব্যবহারকারীদের বেশ কিছু বিষয়ে অনুমতি দিতে হয়। নতুন অ্যাপটি মুঠোফোনের কোন কোন যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নিচ্ছে, তা খেয়াল রাখুন। অনেক ক্ষতিকর অ্যাপ রয়েছে, যা গোপনে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য অপরিচিত বা নামহীন প্রতিষ্ঠানের তৈরি অ্যাপ ব্যবহার না করাই ভালো। সন্দেহজনক মনে হলে অ্যাপটি মুঠোফোন থেকে মুছে ফেলতে হবে।

অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজার হালনাগাদ

অনলাইনে নিরাপদে থাকার জন্য সব সময় হালনাগাদ সংস্করণের অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। কারণ, অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজারে থাকা নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সমাধান করেই হালনাগাদ সংস্করণ উন্মুক্ত করা হয়।

এইচটিটিপিএস ব্যবহার

এইচটিটিপিএস হলো হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকলের নিরাপদ সংস্করণ। এইচটিটিপিএসের ‘এস’ দিয়ে ওয়েবসাইটটিকে নিরাপদ বোঝানো হয়। ফলে যেসব ওয়েবসাইটের ঠিকানা এইচটিটিপিএস দিয়ে শুরু হয়, সেগুলোতে তথ্য বেশি নিরাপদ থাকে।

ফিশিং থেকে বাঁচতে

ভুয়া নাম–ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রলোভনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নেওয়াকে মূলত ফিশিং হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ জন্য ব্যাংক বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হঠাৎ কোনো বার্তা পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ই–মেইলে ক্লিক করা যাবে না। বরং প্রেরকের ই-মেইল ঠিকানার সঙ্গে আপনার কাছে থাকা সেই প্রতিষ্ঠানের ই–মেইল ঠিকানা মিলে কি না, তা যাচাই করতে হবে। এ ছাড়া সন্দেহজনক কোনো ই–মেইলের সঙ্গে থাকা ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট বা পিডিএফ ফাইল না খোলাই ভালো। কারণ, এসব ফাইলের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটার বা মুঠোফোনে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে তথ্য চুরি করতে পারে সাইবার অপরাধীরা।