তথ্যপ্রযুক্তিতে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে রাজধানীর একটি বেসরকারি আইটি প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠানে কোর্স শুরু করেছিলেন আশা মনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান জেলা শহরে নিজের বাড়িতে। কিন্তু তাঁর প্রশিক্ষণ থেমে থাকেনি। বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ফেসবুক গ্রুপ ও ইউটিউবে কোর্সের ভিডিওগুলো দেখে নিজে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনলাইনে কোর্স করেও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে তাঁর সমস্যা হয়নি।
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে এ শিক্ষা তার জন্য ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। অনলাইনে যতটা শিখেছেন, তাতে চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা আরও বাড়াতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী আশা।
স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক তরুণ শিক্ষার্থী ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। একে অনেকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন।
অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বদলে গেছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ খাত। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক তরুণ শিক্ষার্থী ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। একে অনেকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন।
আগে যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিন বা ছয় মাস করে গ্রাফিকস, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কিংবা অন্যান্য দরকারি কোর্স সারতেন, এখন তাঁরা অনলাইনেই এসব কোর্স করছেন। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটিকে আরও সহজ করেছে।
করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে পড়েন তরুণেরা। এ সময় তাঁদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ ও যোগাযোগের মাধ্যম। ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা বিস্তৃত হওয়ায় অনেকেই ঘরে বসে যোগাযোগের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির কোর্সে আগ্রহ দেখিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপ, জুম, গুগল মিটের মতো নানা মাধ্যম ব্যবহারের জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট তাঁদের জন্য সহায়ক হয়েছে।
ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে এবং অনেক কম খরচেই অনলাইনে এসব কোর্স করতে পারছেন।তালুকদার মোহাম্মদ সাব্বির, ব্যবস্থাপক, বিআইটিএম
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয় সফটওয়্যার খাতের বেসরকারি সংগঠন বেসিসের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম)। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক তালুকদার মোহাম্মদ সাব্বির প্রথম আলোকে বলেন, এখন প্রযুক্তিগত নানা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তরুণ ও যুবকেরা। আগে ক্লাসে বসে প্রশিক্ষণ নিতেন অনেকেই। তাঁদের প্রশিক্ষণগুলো এখন সব অনলাইনকেন্দ্রিক। বর্তমানে ৩০০ জনের বেশি প্রশিক্ষণার্থী তাঁদের অনলাইন প্রশিক্ষণে যুক্ত রয়েছেন। ঘরে বসেই তাঁরা শিখছেন ফেসবুক মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও, অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মতো নানা বিষয়। এসব কোর্স তাঁরা অর্থ খরচ করে শিখছেন। কিন্তু সুবিধা হচ্ছে, ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে এবং অনেক কম খরচেই তাঁরা অনলাইনে এসব কোর্স করতে পারছেন।
সাব্বির বলেন, বর্তমানে সব প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ। তাই শিক্ষার্থীরা অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের সাশ্রয়ী খরচ তাঁদের জন্য সুবিধা দিচ্ছে। ইন্টারনেট সুবিধার কারণে অনলাইন প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
ঘরে বসে অনলাইনে কোর্স করার সুবিধা দেয় ইনস্ট্রাক্টরি। এর প্রশিক্ষক ও ফ্রিল্যান্সার সুলতানা পারভীন বলেন, করোনার সময়ে অনলাইনভিত্তিক কোর্সের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। অনেকেই এখন অনলাইনে দরকারি কোর্সের খোঁজ করছেন এবং সে অনুযায়ী দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছেন। হঠাৎ করেই সরাসরি প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে। হাজারো শিক্ষার্থী দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে দরকারি কোর্স করছেন।
তরুণেরা এখন নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে গ্রাফিকস, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি রয়েছে এক্সেলের বিভিন্ন কাজ।আতাউল গনি ওসমানী, কান্ট্রি ডিরেক্টর,কোডার্সট্রাস্ট
তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় অনলাইনে প্রশিক্ষণদাতা কোডার্সট্রাস্ট-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, তাঁদের অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত ফিজিক্যাল কোর্স করতেন। কিন্তু করোনার কারণে ফিজিক্যাল কোর্স বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অনলাইনেই তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তরুণেরা এখন নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে গ্রাফিকস, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি রয়েছে এক্সেলের বিভিন্ন কাজ। তাঁরা এসব প্রশিক্ষণ অনলাইনে করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা শহর থেকেও এসব প্রশিক্ষণে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এসব সম্ভব হয়েছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার কারণেই। ইন্টারনেটের কারণেই ঘরে থাকার সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা। অর্জন করছেন বিভিন্ন দক্ষতা।
অনলাইনে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণদাতারা বলছেন, অনলাইনে এখন সবচেয়ে বেশি আগ্রহের বিষয় দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, অ্যাকাউন্টিং, ওয়েব ডিজাইনের মতো বিষয়গুলো। এসব কোর্স করতে অনলাইনেই আবেদন করা যায়।
কোর্সের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভিডিওগুলো পরে আবার অনলাইনে দেখার সুযোগ থাকে। তবে ঘরে বসে প্রশিক্ষণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তই হচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। দেশে ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে আরও সহজ করেছে বলে মনে করছেন প্রশিক্ষণদাতারা।